সালানপুর পঞ্চায়েত
বহুমুখী সেচের দায়িত্ব কার, দায় এড়ানোর খেলাতেই ব্যস্ত নেতারা
বিঘের পর বিঘে ফাঁকা পড়ে রয়েছে সালানপুর গ্রামে। দু’বছর আগেও এই জমি সবুজ ছিল, সেচ খাল প্রকল্পের সাহায্যে। কিন্তু শুরুর দু’বছরের মাথায় প্রকল্পটিই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কার্যত কাজ হারিয়েছেন শতাধিক কৃষি পরিবার। তবে তার দায়িত্ব নিতে রাজি হননি পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি স্থানীয় বিডিও-রও।
সালানপুর পঞ্চায়েতের সালানপুর গ্রামে ২০০৯ সালে শুরু হয় এই ডালমিয়া বহুমুখী সেচপ্রকল্প। ইসিএলের একটি পরিত্যক্ত জল ভর্তি খোলামুখ খনিতে প্রকল্পটি বানানো হয়। ২০০২ সালে এই খনি থেকে কয়লা তোলার কাজ বন্ধ করে ইসিএল। সেটি প্রায় সাড়ে সাতশো মিটার লম্বা, সাড়ে তিনশো মিটার চওড়া ও প্রায় একশো মিটার গভীর। কয়লা তোলার কাজ বন্ধ হওয়ার পরে বিশাল আয়তনের এই খনিটি জলে ভর্তি হয়ে যায়। এরপরই সালানপুর ব্লক প্রশাসন এই পরিত্যক্ত খনির জল সেচের কাজে ব্যবহারে উদ্যোগী হয়। ২০০৮ সালে ব্লক প্রশাসন প্রকল্পটির একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা তৈরি করে। সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি শ্যামল মজুমদার জানান, ব্লকের সবচেয়ে বড় এই সেচপ্রকল্পটি বানাতে সব রকমের সাহায্য করে রাজ্যের ক্ষুদ্র সেচ দফতর। প্রায় দেড়শো একরেরও বেশি চাষযোগ্য জমিকে এই সেচপ্রকল্পের আওতায় আনার জন্য ভূগর্ভে পাইপ বসানো হয়। একাধিক জায়গায় ভাল্ব বানিয়ে সেখান থেকে জল সেচের জন্য কারিগরি কৌশল নেওয়া হয়। জলভর্তি খাদানটিতে একাধিক সাব-মার্সিবেল পাম্প বসিয়ে খনির ৬০ ফুট গভীর থেকে জল তোলার ব্যবস্থা করা হয়। পাইপলাইনের জলের চাপ নির্দিষ্ট রাখার জন্য একাধিক জলাধার বানানো হয়। পুরো প্রকল্পটি বানাতে খরচ হয় প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকা। জেলা পরিষদ ও রাজ্যের ক্ষুদ্র সেচ দফতরই অর্থ খরচ করে।
২০০৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয় প্রকল্পটি। এলাকার প্রায় শতাধিক কৃষক পরিবার এই সেচ প্রকল্পের জল ব্যবহার করে চাষ শুরু করেন। পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেচপ্রকল্পটির বিদ্যুতের খরচ-সহ আনুষঙ্গিক ব্যয় বহন করতে রাজি হন উপকৃত কৃষক পরিবারগুলি। প্রথম দু’বছর ওই সেচের জলে কৃষক পরিবারগুলি নিজেদের রুখুসুখু জমিতে ধান, গম ও সব্জি ফলাতে শুরু করেন। কিন্তু ২০১১ সালের ১৩ অগস্ট প্রকল্পটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় মাথায় হাত পড়ে কৃষক পরিবারগুলির। জলের অভাবে চাষাবাদ মার খাওয়ায় কার্যত কাজ হারান তাঁরা। গ্রামের কৃষক স্বপন মণ্ডল বলেন, “জমিগুলি দু’বছর আগেও সবুজ হয়ে থাকত। আমরা ভেবেছিলাম, ধীরে ধীরে কৃষির উন্নয়ন হবে। গ্রামের অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে। কিন্তু সেই সব ভাবনার আর কোনও সুযোগ নেই।” অপর এক কৃষক গৌতম লায়েক বলেন, “সেচ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলের অভাবে ফসল ফলছে না। কৃষকদের হাতেও টাকা আসছে না।” তাঁরা অবশ্য এর জন্য ব্লক প্রশাসনকেই দায়ী করছেন। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবেই এই প্রকল্পটি থমকে গিয়েছে।
সালানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অমর দত্ত জানান, প্রকল্পটি বছর দুই চলার পরে একদিন ভোর রাতে একটি পাম্প ও পাইপ চুরি হয়ে যায়। তখন থেকেই প্রকল্পটি বন্ধ পড়ে আছে। এর পর পঞ্চায়েতের তরফে থানায় অভিযোগও জানানো হয়। মাস খানেকের মধ্যেই সালানপুর পুলিশ চুরি যাওয়া পাম্প ও পাইপগুলি উদ্ধার করে পঞ্চায়েত কর্যালয়ে পৌঁছে দেয়। কিন্তু তার পরেও প্রকল্পটি চালু করা হয়নি। অমরবাবুর অভিযোগ, “প্রকল্পটি পঞ্চায়েত সমিতির। এটি চালু করার দায়িত্বও তাঁদের। তাঁরা উদ্যোগী না হওয়ায় সেটি বন্ধ পড়ে আছে।” তিনি আরও জানান, এই প্রকল্পের অনেক টাকার বিদ্যুতের বিলও বাকি পড়ে আছে। দেড় বছর বন্ধ থাকায় কৃষকেরা বকেয়া বিদ্যুতের বিলও মেটাননি। সংযোগ কেটে দিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল মজুমদার বলেন, “এটি আসলে জেলাপরিষদের উদ্যোগ। কিছু প্রশাসনিক জটিলতা হয়েছে। সমাধানের রাস্তাও খোঁজা হচ্ছে।” সালানপুরের বিডিও প্রশান্তকুমার মাইতি বলেন, “এরকম একটি প্রকল্প যে এই ব্লকে আছে এবং তা দীর্ঘদিন বন্ধ, এ বিষয়ে কিছুই আমি জানিনা। আমি খোঁজখবর নেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.