ওডাফা বিহীন বাগানে অবশেষে ‘সাবালক’ টোলগের আবির্ভাব

মোহনবাগান-৩ (আইবর, টোলগে-২)
পৈলান অ্যারোজ-২ (সাইজু, লেন)
ম্যাচ শেষে রসিকতা চলছিল নবিদের টিমবাস ঘিরে থাকা কৌশিক, রাজু, অর্জুনদের। ওই সবুজ-মেরুন সমর্থকদের সরস মন্তব্য, “সত্যজিৎ রায় আজ যদি মাঠে থাকতেন, নির্ঘাৎ লিখে বসতেন, যত কাণ্ড কল্যাণীতে!”
সত্যিই! মোহনবাগানের ‘অবনমন-মুক্তি’ পালার যে আর ১১ এপিসোড অবশিষ্ট, তার প্রথম এপিসোডেই যে হাজির একাধিক নাটক। বিস্মৃত নায়কের ভোকাল টনিকে দুরন্ত ফিরে আসা। চৈত্র-দুপুরে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফুটবল ম্যাচে দু’বার ‘অভিনব’ জলপানের বিরতি। গুরু-শিষ্যের অহি-নকুল সম্পর্ক ‘ইউ-টার্ন’ নিয়ে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’। দুপুর দুটোয় খেলা প্রসঙ্গে কোচ করিমের বিস্ফোরক সংলাপ, “লিখে দেবেন এটা নরক।” মুফতে প্লেয়ারদের মাঠে ঢোকার মুখ থেকে রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে পর্যন্ত গোটা পনেরো শিশু-সাপের নাচন! বাগানের ‘কেউটে’ ওডাফার অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতিতে একঝাঁক হেলের অভাবিত দাপাদাপিতে চূড়ান্ত অপ্রস্তুত আয়োজকরা।
তবে সব ছাপিয়ে শিরোনামে গোড়ালির ব্যথা নিয়েও টোলগের জোড়া গোল। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা পেরিয়ে অবশেষে বসন্তের সমীরণ বইতে চেনা ছন্দে বাগানের অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার। ওডাফা-হীন বাগানকে শুধু নেতৃত্বই দিলেন না। সবুজ-মেরুন জার্সিতে টোলগের যেন এ দিনই সাবালক হয়ে ওঠা। অথচ গত রবিবারই ডার্বিতে হারের পর তাঁকে নিয়েই অশান্তিতে জেরবার ছিল সবুজ-মেরুন শিবির। কোন জিয়নকাঠিতে ঠিক পরের ম্যাচেই টোলগের ফিরে আসা? দিনের নায়ক স্বয়ং বললেন, “করিম আর দেবাশিস ফিরতে সাহায্য করছে। আরও গোল করে আমাকে নিয়ে সমর্থকদের আক্ষেপ ভোলাতে চাই।” যা শুনে টোলগের কোচ বলছেন, “অবনমন বাঁচাতে ওর ফর্মে ফেরাটা জরুরি। কুড়ি বছর কোচিং করিয়ে জানি, এ রকম ক্রাউডপুলারকে কী ভাবে আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে স্বমহিমায় ফেরাতে হয়।” আর বাগানের অন্যতম কর্তা দেবাশিস দত্তের কথায়, “বড় ম্যাচের পর বাড়িতে ডেকে এনে টোলগেকে বলেছিলাম, তিন মাস লড়ে তোমাকে এই জার্সি পরিয়েছি। আমার মুখটা রেখো বাবা।” এ দিন জিতে ১৬ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট টোলগেদের।
জোড়ায়-জোড়ায়
টোলগের দু’গোল আর সাপেরা চলল ড্রেসিংরুমের দিকে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
ফেডারেশনের অনূর্ধ্ব তেইশ দলের বিরুদ্ধে ৪-৩-৩-এ আক্রমণে নবি-টোলগে-সাবিথকে রেখে ঝাঁপিয়েছিল বাগান। গোল পেতে দেরি হয়নি। নেপথ্যে জ্বর গায়ে রাইট ব্যাকে নামা আইবর এবং চোট সারিয়ে ফেরা রহিম নবি। বাঁ দিক থেকে জুয়েলের ক্রস দ্বিতীয় জনের মাথায় লেগে টার্ন নিতেই হেডে গোল প্রথম জনের। তেরো মিনিট পরেই টোলগেকে গোলের সামনে লম্বা পাস আইবরের। জাতীয় দল ফেরত স্টপার সৌভিককে গায়ে নিয়ে চকিত টার্নে জোরালো শটে গোল চিনতে ভুল করেননি টোলগে। পরের মিনিটেই নবির কর্নার থেকে তাঁর দ্বিতীয় গোল। কিন্তু ৩-০ এগিয়ে হঠাৎই ছন্দপতন। যার সৌজন্যে মেহরাজকে গতিতে হারিয়ে সাইজুর গোল।
অসহনীয় গরমে বিরতিতে ড্রেসিংরুমে আইবরের ‘ডিহাইড্রেশন’ হওয়ায় মণীশ মৈথানিকে পরিবর্ত নামিয়ে ৪-৪-২-এ চলে যেতে হয় করিমকে। যেখানে নবি রাইট ব্যাক। কিন্তু সেই রক্ষণাত্মক কৌশলেও লেনের ব্যবধান কমিয়ে ২-৩ করা।
কিন্তু তখনও নাটকের বাকি! দ্বিতীয়ার্ধ চলাকালীন হঠাৎ দু’মিনিটের ‘ড্রিঙ্কস’ দিলেন রেফারি সন্তোষ কুমার। ম্যাচের অন্তিম লগ্নে ফের এক বার। এ বার এক মিনিটের। জানা গেল, হাফটাইমে আইবরের পরিণতি দেখে চুরানব্বই বিশ্বকাপের উদাহরণ টেনে দেবাশিস ম্যাচ কমিশনার কে শঙ্করকে অনুরোধ করেছিলেন এ রকম জলপান বিরতির জন্য। শঙ্কর তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে যান। যা নিয়ে ম্যাচ শেষে পৈলান ছাড়তে উন্মুখ কোচ পাপাসের কটাক্ষ, “প্রথমার্ধেও কেন নয়?”
দেশের সেরা ফুটবল টুর্নামেন্টে দুপুর দুটোয় খেলা নিয়ে শনিবার বোমা ফাটিয়েছিলেন মর্গ্যান। এ দিন, করিম। মাঠেও ডেনসন, ইচে অরিন্দমদের পেশিতে টান, মাথা ঘোরা শুরু। কেন চাঁদিফাটা রোদে ফুটবলারদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা? আই লিগের সিইও সুনন্দ ধর বলছেন, “সময় বদলাতে হলে ২১ দিন আগে জানাতে হয়। না হলে টিভি সম্প্রচারে সমস্যা হবে। তখন কেউ বদলের কথা বলেনি। যা হোক, এপ্রিল থেকে ম্যাচের সময় বদলানো হবে।” মার্চের বাকি ম্যাচে যদি কোনও অঘটন ঘটে যায়? সুনন্দ বলছেন, “কিছু করার নেই।” প্রশ্ন উঠছে, পেশাদার হতে গিয়ে ফেডারেশন অমানবিক হয়ে গেল কি? ’৯৪ বিশ্বকাপে টিভি সম্প্রচারের কথা ভেবে ভরদুপুরে ম্যাচ ফেলা নিয়ে ফিফা সভাপতি জোয়াও হ্যাভেলাঞ্জকে তীব্র বিঁধেছিলেন মারাদোনা। তাতে ফলও মিলেছিল। এখানে মোহন-ইস্টের তোপের পরেও এআইএফএফের ঘুম ভাঙছে না।

মোহনবাগান: অরিন্দম, আইবর (মণীশ মৈথানি), ইচে, মেহরাজ, বিশ্বজিৎ, ডেনসন, জুয়েল (মণীশ ভার্গব), কুইনটন, নবি, সাবিথ (সুশান্ত), টোলগে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.