যে টেস্ট ম্যাচ মাত্র তিন দিনে শেষ হয়ে যায়, তাকে নিশ্চয়ই ক্রিকেটের খুব ভাল বিজ্ঞাপন বলা যায় না। কিন্তু এমনটা যে হবে সেটা প্রথম দিন সকাল থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। বুঝতে পারছি যে, কিউরেটর চাইবে নিজের টিমের কথা মাথায় রেখে উইকেট বানাতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উইকেট যা দাঁড়াল, তাতে তো কেউই ক্রিকেটীয় স্কিল দেখাতে পারল না। এই ধরনের উইকেটে স্কিলের চেয়ে ভাগ্যের বেশি দরকার পড়ে।
উইকেটটা যে অত্যন্ত খারাপ সেটা বোঝা গিয়েছিল প্রথম দিনই। যখন ইশান্ত শর্মার একটা বল লাফিয়ে উঠে ফিল হিউজের হেলমেটের ভাইজারে লাগল। এটা থেকেই পরিষ্কার যে, প্রথম দিন থেকেই পিচ চতুর্থ দিনের মতো ব্যবহার করছে। টেস্টটা হেরে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়া চরম হতাশ হবে। ওরা এখানে টস জিতেছিল, যা এই উইকেটে বিরাট সুবিধা। কিন্তু তবু ওরা টেস্ট থেকে হারিয়ে গেল নিজেদের প্রয়োগ করতে না পেরে। প্রথম তিন ইনিংসে সমানে-সমানে যুদ্ধ চালিয়েও চতুর্থ ইনিংসে এসে ওরা পারল না। |
ব্রাউনওয়াশে বিধ্বস্ত। ছবি: উৎপল সরকার |
পূজারাকে আমি একশোয় একশো দেব। ও আবার দেখিয়ে দিল, ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের মেরুদণ্ড হওয়ার ক্ষমতা ওর আছে। কঠিন উইকেটে, কঠিন পরিস্থিতিতেও ওকে ইস্পাতকঠিন দেখিয়েছে। আজ ও আউট হয়ে গেলে ১৫৫ রান তাড়া করতে গিয়ে ভারত ঝামেলায় পড়তে পারত।
এই সিরিজে ভারতের ব্যাটিংও খুব ভাল হয়েছে। ওপেনিংয়ে ওরা শিখর ধবন আর মুরলী বিজয়ের মতো দু’জনকে পেয়েছে। পূজারা, বিরাট কোহলি, অজিঙ্ক রাহানে এদের আমরা বেশি দেখিনি। সঙ্গে অবশ্যই থাকছে অধিনায়ক নিজে। একটা তরুণ ব্রিগেড তৈরি হয়েছে ভারতের। যারা নিজেদের ক্রিকেটীয় দক্ষতায় প্রবল আত্মবিশ্বাসী। এই তরুণ ব্রিগেডে যেন সচিনকেই বেমানান লাগছে।
রবিবার ভারতীয়রা অসাধারণ বল করেছে। পরিবেশের ফায়দা কী ভাবে নিতে হয়, সেটা জাডেজা খুব ভাল বুঝিয়ে দিল। ও যে পেসে বলটা ছাড়ে সেটা খুবই ভাল। তা ছাড়া ও নিশানায় অভ্রান্ত। যার ফলে উইকেটের ভয়ঙ্কর স্পটগুলোতে একেবারে ঠিকঠাক হিট করছিল। অশ্বিন আর ওঝা ওকে ভাল সাহায্যও করেছে। অস্ট্রেলিয়া বেশিক্ষণ যাতে টিকতে না পারে, সেটা ওরা নিশ্চিত করে দিয়েছিল। পেসারদেরও ভয়ঙ্কর দেখিয়েছে।
আগেই বলেছিলাম ভারত চাইবে ৪-০ জিততে। ওরা ঠিক সেটাই করে দেখাল। অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্রী হারের প্রতিশোধ তুলল। আমাদের দেশে সব ক’টা টেস্ট হারার পর ভাবতে পারিনি, ওরা নিজেদের দেশে সব ক’টা টেস্ট জিততে পারবে। অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের শুরু ভাল করতে পারেনি। বোলারদের যথেষ্ট রান দিতে পারেনি, যা দিয়ে পাল্টা যুদ্ধ চালানো যায়। বোলাররা কখনওই আক্রমণাত্মক হতে পারেনি। টপ অর্ডারের কেউই সেঞ্চুরি পায়নি। যা উপমহাদেশের উইকেটে অত্যন্ত জরুরি। সন্দেহ নেই, একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়েই দেশে ফিরবে অস্ট্রেলিয়া। সামনেই অ্যাসেজ, অনেক খাটতে হবে ওদের।
|
ধোনির ছয় তরুণ তুর্কি |
চেতেশ্বর পূজারা
টেস্ট ৪, রান ৪১৯, সর্বোচ্চ ২০৪,
গড় ৮৩.৮০, সেঞ্চুরি ১, হাফসেঞ্চুরি ২ |
মুরলী বিজয়
টেস্ট ৪, রান ৪৩০, সর্বোচ্চ ১৬৭,
গড় ৬১.৪২, সেঞ্চুরি ২, হাফ সেঞ্চুরি ১ |
শিখর ধবন
টেস্ট ১, রান ১৮৭, সর্বোচ্চ ১৮৭,
গড় ১৮৭, সেঞ্চুরি ১ |
রবীন্দ্র জাডেজা
টেস্ট ৪, উইকেট ২৪, সেরা বোলিং ৫-৫৮,
গড় ১৭.৪৫, রান ৮৫, সর্বোচ্চ ৪৩ |
রবিচন্দ্রন অশ্বিন
টেস্ট ৪, উইকেট ২৯,
সেরা বোলিং ৭-১০৩, গড় ২০.১০ |
ভুবনেশ্বর কুমার
টেস্ট ৪, উইকেট ৬, সেরা বোলিং ৩-৩১,
গড় ৩৯.৮৩, রান ৮০, সেরা ৩৮ |
|