অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ৪-০ সিরিজ জিতে উঠে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
প্রশ্ন: ভারতের কাছে এটা ছিল বদলার সিরিজ। সেই উদ্দেশ্যটা তা হলে সফল হল তো?
ধোনি: বদলা কথাটাই পছন্দ নয় আমার। এক দিকে বদলার কথা বলব, অন্য দিকে ক্রিকেটের স্পিরিট বজায় রাখার কথা বলব, দুটো একসঙ্গে হয় না। ১-০ হোক বা ৪-০, সব রেজাল্টই
আমার কাছে ভাল। সিরিজটা আমরা জিতেছি এটাই বড় কথা। নম্বরটা নয়।
প্রশ্ন: কোটলার এই উইকেট ক্রিকেটের পক্ষে ভাল? ঘরের মাঠ হলেও এটা কি ঠিক হচ্ছে?
ধোনি: কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক, কী করে বিচার করবেন? যখন আমাদের বিপক্ষ দল চার জন ফাস্ট বোলার নামায়, তখন সেটা কৌশল। আর যখন আমরা তিন বা চার স্পিনারে খেলি, তখন হঠাৎ পিচ খারাপ হয়ে যায়। আবার দেখুন অন্য ক্যাপ্টেনরা যখন সহবাগের জন্য ডিপ পয়েন্ট বা ডিপ স্কোয়ার লেগ রাখে, তখন সেটা স্ট্র্যাটেজি। যখন আমি ওয়ার্নারের জন্য ডিপ পয়েন্ট রাখি, তখন সেটা ডিফেন্সিভ ফিল্ডিং।
প্রশ্ন: ইংল্যান্ডের কাছে হারের পর এই জয়টা নিশ্চয়ই তৃপ্তিদায়ক?
ধোনি: ইংল্যান্ডের কাছে ঘরের মাঠে হারাটা সত্যিই বাজে ব্যাপার। কিন্তু বোধহয় ওই হারটার দরকার ছিল। ওই ব্যর্থতা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছিলাম। সেই শিক্ষাটাই এই সিরিজে কাজে লাগালাম। কৃতিত্বটা মূলত আমাদের বোলারদের। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখতে পারাটা বড় ব্যাপার বইকী। ইংল্যান্ড সিরিজের সঙ্গে এই সিরিজের প্রধান তফাতটা হল, এই সিরিজে আমরা বড় পার্টনারশিপ গড়তে পেরেছি, যেটা আমাদের বোলারদের কাছে বড় পুঁজি হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন: বিদেশে সিরিজ হেরে এসে ইংল্যান্ডের কাছেও হারের পর কি অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে বদলে ফেলেছিলেন?
ধোনি: সে রকম বদলাইনি। আসল পার্থক্যটা হল দলটা বদলে গিয়েছে। আমাদের ব্যাটিং অর্ডার বদলেছে, বোলিং আক্রমণও পাল্টেছে। দলে এখন অনেক বেশি তরুণ খেলোয়াড়। তাদের ঠিকমতো পথ দেখানো দরকার। এদের এখন অভিজ্ঞতা দরকার। কারণ, এরাই আগামী সাত-আট বছর ভারতের হয়ে খেলবে।
প্রশ্ন: ওপেনিং স্লট নিয়ে সমস্যা ছিল। ছ’নম্বর জায়গাটা নিয়েও। সেগুলো মিটল?
ধোনি: নতুন ওপেনাররা তো ভালই করল। শিখর ধবন মোহালিতে দুর্দান্ত খেলেছে। মুরলী বিজয় ধারাবাহিক ভাবে রান পেয়েছে। পূজারা চোট সারিয়ে ফিরে বেশ ভাল ব্যাট করেছে। ছ’নম্বরে জাডেজা ভাল খেলছে। অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। প্রচুর উইকেটও পেয়েছে। বিদেশে টেস্টে ওকে ব্যবহার করা যেতেই পারে।
প্রশ্ন: এই টেস্টে দু’দলের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা বেধে যাচ্ছিল কেন?
ধোনি: ছোটখাটো গণ্ডগোল হলে বিরাট কোনও ক্ষতি হয় না। নিজেদের মধ্যে কথার লড়াই হচ্ছিল। ম্যাচ রেফারি, আম্পায়াররা যে ভাবে অবস্থা সামলাচ্ছিলেন, তার প্রশংসা করতেই হবে।
প্রশ্ন: এটাই কি ভারতের মাটিতে সচিনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ?
ধোনি: ২০০৫ থেকেই তো এই নিয়ে মিডিয়ায় জল্পনা চলছে। আমি শুধু বলব, আন্দাজে কিছু বলবেন না।
প্রশ্ন: রাহানে কত নম্বরে ব্যাট করবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকছে?
ধোনি: ওকে আমরা ওপেনার হিসেবে ধরছি না। মিডল অর্ডারেই ব্যাট করবে ও।
প্রশ্ন: ভারতের পরের সফর দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই নিয়ে পরিকল্পনা শুরু হয়েছে?
ধোনি: বেশি দূর ভাবতে পারি না আমি। একটা দীর্ঘ মরসুম শেষ হল। এখন কিছু দিনের ছুটি। বিশ্রামের সময়। এর পর আইপিএল এনজয় করার পালা। আর কিছু নয়।
|
সিরিজ জয়ের পাঁচমিশেলি |
• তিন দিনে ভারত অস্ট্রেলিয়াকে হারাল দ্বিতীয় বার। এর আগে ২০০৪-এর নভেম্বরে মুম্বইয়ে হারিয়েছিল।
• তিন দিনে ভারতের শেষ টেস্ট জয় ২০০৮-এর এপ্রিলে, কানপুরে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে।
• অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ০-৪ চূর্ণ হওয়ার এক বছর ৫৫ দিন পর বদলা নিল ধোনির ভারত।
• এই প্রথম কোনও ভারতীয় অধিনায়কের সিরিজে সব ম্যাচে টস হারা সত্ত্বেও ৪-০ সিরিজ জয়।
• অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ০-৪ টেস্ট সিরিজ হার। ১৯৭০-এ দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে প্রথম। ০-৩-এ হোয়াইটওয়াশ দু’বার। ১৮৮৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এবং ১৯৮২-তে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।
• ভারতের মাটিতে টানা সাত টেস্টে হার। বিদেশে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে খারাপ পারফম্যান্স। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় টানা ছয় টেস্টে হেরেছিল তারা। ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৪-এর মধ্যে। |
|