|
|
|
|
সেনা-গাড়িতেই লিয়াকতের স্ত্রী
সংবাদসংস্থা • শ্রীনগর |
স্বামীর গ্রেফতারির পর কেটে গিয়েছে চার দিন। অবশেষে আজ মুখ খুললেন লিয়াকত শাহ-র দ্বিতীয়া স্ত্রী আখতার-উ-নিসা। ধৃত লিয়াকতকে নিয়ে দিল্লি বনাম জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের দ্বৈরথের মধ্যেই আখতার এ দিন দাবি করেন, নেপাল সীমান্ত পেরিয়ে ঢোকার পর সেনারাই
তাঁদের নিয়ে আসেন। এমনকী এ পারে তাঁদের জন্য সেনাবাহিনীর একটা গাড়িও তৈরি ছিল। সীমান্তে এক প্রস্ত তল্লাশির পর ওই গাড়িতে উঠে বসেছিলেন তাঁরা।
গত কাল কুপওয়ারা পৌঁছেছেন আখতার ও তাঁর মেয়ে। সেখানেই থাকেন লিয়াকতের প্রথমা স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। প্রথমা স্ত্রী আমিনা বেগম দু’দিন আগে জানিয়েছিলেন, সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে দিয়ে প্রায় পনেরো বছর পর দেশে ফিরছেন লিয়াকত। ’৯০-এর দশকে যে সব কাশ্মীরি জঙ্গি-প্রশিক্ষণ নিতে পাকিস্তান চলে গিয়েছিলেন, সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে তাঁদের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প ঘোষণা করে জম্মু-কাশ্মীর সরকার। আমিনার দাবি, ২০১১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্পের জন্য স্বামীর নাম লিখিয়েছিলেন তিনি।
এ দিন আখতার অভিযোগ করেন, সমস্ত কিছু জেনেশুনেও জঙ্গি হামলার অভিযোগ এনে নাটক করছে দিল্লি পুলিশ। তাঁর প্রশ্ন, মূল স্রোতে ফিরিয়ে দেওয়ার নাম করে যদি আটক করা হয়, তা হলে কি আর কেউ বিশ্বাস করে দেশে ফিরবে?
২০ মার্চ গোরক্ষপুর থেকে লিয়াকতকে আটক করে দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেল। তাঁদের দাবি, হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি লিয়াকত শাহ দোলের দিন রাজধানীতে আত্মঘাতী হামলার ছক কষেছিল। তাকে জেরা করে ২২ তারিখ জামা মসজিদের কাছে এক অতিথিশালা থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র। এই ঘটনার পর দিল্লি পুলিশের দাবি নস্যাৎ করে আসরে নামে ওমর আবদুল্লা সরকার। লিয়াকতের পরিবারের দাবিকে সমর্থন করে তারা জানায়, পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্যই লিয়াকত ভারতে এসেছে। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের দাবি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা পর্যন্ত এই খবর জানতেন। তা সত্ত্বেও তাদের হাতে তুলে না দিয়ে, মাঝপথেই লিয়াকতকে পাকড়াও করেছে দিল্লি পুলিশ।
দিল্লি ও কাশ্মীর পুলিশের বয়ানে বহু ফারাক থাকায় দু’পক্ষের বক্তব্য যাচাই করে কেন্দ্র তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে, জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহ। লিয়াকতের দ্রুত বিচার চেয়ে কালই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। এই মামলার ভার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা(এনআইএ)-র হাতে তুলে দেওয়ার আর্জিও জানান তিনি। কাশ্মীরিদের অযথা হয়রানির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের বিরোধী নেত্রী মেহবুবা মুফতিও।
উপত্যকার প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও নিজেদের দাবি থেকে অবশ্য পিছু হটেনি দিল্লি পুলিশ। রাজধানীর একেবারে কেন্দ্রস্থলে জামা মসজিদ লাগোয়া যে অতিথিশালা থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল, তার সিসিটিভি ক্যামেরা খুঁটিয়ে দেখে এক সন্দেহভাজন জঙ্গির স্কেচ প্রকাশ করল তারা। দিল্লি পুলিশের এক কর্তা জানান, যে ব্যক্তি অতিথিশালায় অস্ত্র জড়ো করেছিলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ও হোটেলকর্মীদের জেরা করে তার স্কেচ আঁকানো হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর এ-ও দাবি, লিয়াকত শাহকে নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ মুখে যা-ই দাবি করুক না কেন, এ সংক্রান্ত কোনও চিঠি এখনও তাঁরা পাননি।
কেন্দ্র-রাজ্য তরজায় স্বামীর ভবিষ্যৎ আপাতত বিশ বাঁও জলে। “দেশে ফিরেও যে প্রতারিত হব কে জানত...তার চেয়ে আবার যদি পাকিস্তানেই ফিরতে পারতাম,” অসহায়তা স্পষ্ট আখতারের গলায়। |
|
|
|
|
|