সুদ কমানোর রাস্তা দেখিয়ে সূচকের সলতেতে আগুন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন আরবিআই গভর্নর সুব্বারাও। কিন্তু জ্বলে ওঠার আগেই তৎপরতার সঙ্গে তাতে জল ঢালতে কসুর করেননি ডিএমকে প্রধান করুণানিধি। ফলে মাঠে মারা গেল সুব্বারাওয়ের প্রয়াস। যার ফল সূচকের নাগাড়ে পতন।
তৃণমূল কংগ্রেসের পর এ বার ডিএমকে-ও সমর্থন প্রত্যাহার করায় মনমোহন সরকার এখন অনেকটাই মুলায়ম- মায়াবতীর হাতে। নড়বড়ে খুঁটির ওপর দাঁড়ানো এই সরকারের পক্ষে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া শক্ত। ফলে আর্থিক সংস্কার ধাক্কা খাওয়ারই আশঙ্কা। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত হয়তো সরকার এই ভাবেই চলবে। ভোটের লক্ষ্যে বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই হবে রাজনীতি-ঘেঁষা। অর্থনীতি ঘেঁষা নয়। যা মোটেও পছন্দ নয় দেশি এবং বিদেশি লগ্নিকারীদের। আর সে কারণেই বাজার একটানা পড়ে চলেছে বেশ কয়েক দিন ধরে। সেনসেক্স ১৮ হাজারের ঘরে নেমে আসায় চিন্তার ভাঁজ লগ্নিকারীদের কপালে। অবস্থা কবে ভাল হবে, তারও কোনও ইঙ্গিত নেই। ভরসা একমাত্র বিদেশি বাজার। ডাও, ন্যাসডাক, হ্যাং সেং, কসপি, ফুটসি-রা যদি কোনও কারণে একসঙ্গে তেতে ওঠে, তবে সেনসেক্স নিফ্টি ফের মাথা তুলতে পারে।
রেপো রেট আর এক দফা (২৫ বেসিস পয়েন্ট) কমানো হলেও ঋণ তথা জমার উপর সুদ কমানোর কথা এখনই ভাবছে না বেশির ভাগ ব্যাঙ্ক। ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কোনও শুভ বার্তা দিতে পারেনি শিল্পমহলকে। মূল্যবৃদ্ধির সূচক যত দিন তেজি থাকবে, শেয়ার সূচকের পক্ষে তত দিন পাকাপাকি ভাবে উপরে ওঠা বেশ শক্ত। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বিশেষ ভাবে চিন্তায় রেখেছে সুব্বারাও থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে। এই অবস্থায় ব্যাঙ্ক জমার উপরে সুদ কমলে বিশেষ অসুবিধায় পড়তেন সুদনির্ভর অসংখ্য মানুষ। রেপো রেট হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও জমার উপর সুদ না কমায় এঁরা আপাতত খুশি। তবে সরকারের চাপে ব্যাঙ্কগুলিকে যদি ঋণে সুদ কমাতেই হয়, তবে জমার উপরেও সুদ কমানো ছাড়া কোনও পথ থাকবে না। প্রতি মাসে একটু একটু করে ডিজেলের দাম বাড়তে থাকায় তা ক্রমাগত উসকে দেবে মূল্যবৃদ্ধিকে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষে যে-সব কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল, তা হয়তো আমরা দেখতে পাব না। শিল্প ও শেয়ার বাজারের জন্য তেমন কোনও সদর্থক বার্তা দেয়নি এ বারের বাজেটও।
বিমা শিল্পের প্রসার নিয়ে অবশ্য চিদম্বরম আশার কথা শুনিয়েছেন ২০১৩-১৪ সালের বাজেট প্রস্তাবে। বলা হয়েছে, যে-সব শহরে ১০ হাজার বা তার বেশি মানুষ থাকেন, সেখানে শাখা খুলবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা এলআইসি এবং সাধারণ বিমা সংস্থাগুলি। ভারতে এই ধরনের শহরের সংখ্যা ৩,৩০০-রও বেশি, যেখানে বিমান সংস্থার কোনও শাখা নেই। ১ লক্ষের বেশি মানুষ বসবাস করেন এমন ৩৯২টি শহরে এখনও বিমা কোম্পানির অনুপ্রবেশ ঘটেনি। ঝুঁকির বিরুদ্ধে বিমা ব্যাপারটি একদমই অজানা দেশের বেশির ভাগ ছোট শহর এবং প্রত্যন্ত গ্রামে। ফলে উন্নত দেশগুলির তুলনায় আমাদের দেশে বিমা-ঘনত্ব (ইনশিওরেন্স ডেনসিটি) বেশ কম। বিমাপত্র বিক্রি করতে বলা হচ্ছে সরকারি ব্যাঙ্কগুলিকেও। দেশে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির শাখার সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ। বিমা ব্যবসার প্রসার ঘটলে উপকৃত হবেন বহু মানুষ। কর্মসংস্থানও বাড়বে বিমা শিল্পে।
এ দিকে, ১৮ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সিটিএস নয় এমন চেক ব্যবহারের মেয়াদ ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছে। অর্থাৎ ১ অগস্ট থেকে ইস্যু করা সব চেকই হতে হবে সিটিএস চেক। যাঁরা এখনও সিটিএস চেকবই পাননি, তাঁরা নিজের ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
আর্থিক বছরের শেষ সপ্তাহে আমরা। অর্থ বা কর সংক্রান্ত কোনও কাজ বাকি থাকলে, তা করার জন্য আর ৪টি কাজের দিন হাতে। সেগুলি দোল, গুড ফ্রাইডে-র ছুটির ফাঁকে সেরে ফেলতে হবে। হোলির রং নতুন বছরের দিনগুলিকে শুরু থেকেই রাঙিয়ে রাখুক, এটাই সবার কামনা। |