নিয়মিত উড়ান চালু করার জন্য আবার তদ্বির শুরু করল কিংফিশার। বিমানসংস্থাটির এক সূত্রের দাবি, তাঁরা সংস্থা পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেছেন। এবং তা নিয়ে চলতি সপ্তাহে ভারতের বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর দ্বারস্থ হবেন কিংফিশার-কর্তারা। ডিজিসিএ-কে সেই পরিকল্পনা জমা দিয়ে এয়ারলাইন্স অপারেটিং পারমিট চাওয়া হবে। যদিও বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত কোনও কোনও মহলের মতে, বিজয় মাল্যের এই পদক্ষেপ আদতে আসন্ন আইপিএলে কর্মী-বিক্ষোভ এড়ানোর কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়।
বস্তুত উড়ান ফের চালু করার ব্যাপারে কিংফিশারের দরবার চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। কিন্তু তাদের পেশ করা কোনও পুনরুজ্জীবন-পরিকল্পনা ডিজিসিএ-কে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। উপরন্তু সম্প্রতি ডিজিসিএ-প্রধান অরুণ মিশ্রের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন বিমানবন্দরে কিংফিশারের নির্ধারিত ‘স্লট’ ধরে রাখার অনুরোধ করেন কিংফিশারের সিইও সঞ্জয় অগ্রবাল। অচিরে উড়ান পরিষেবা চালু করে ওই সব স্লট তাঁরা ফের ব্যবহার করবেন বলে জানিয়েছেন সিইও। ডিজিসিএ-র তরফে অবশ্য ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
প্রসঙ্গত, ডিজিসিএ-ই স্থির করে দেয়, দেশের প্রতিটি বিমানবন্দর থেকে কোন বিমানসংস্থার কোন উড়ান কখন কোন গন্তব্যে রওনা দেবে। এই সূচিকে বিমান-পরিভাষায় ‘স্লট’ বলা হয়। ব্যবসার খাতিরে সব বিমানসংস্থাই চায় সকাল-সন্ধের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উড়ান চালাতে। তাই তারা আগাম সংশ্লিষ্ট স্লট কিনে রাখে। উড়ান চালু থাকাকালীন কিংফিশারও তা-ই করেছিল। এবং মুম্বই-দিল্লি-বেঙ্গালুরুর সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্লটগুলো এখনও তাদের হাতে। ফলে গত অক্টোবর ইস্তক কিংফিশারের উড়ান পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অন্য কোনও সংস্থার বিমান সেখানে ওঠা-নামা করতে পারছে না। ইতিমধ্যে ৩১ ডিসেম্বর কিংফিশারের লাইসেন্সই বাতিল করে দেয় ডিজিসিএ। সংস্থাটিকে বলা হয় যত শীঘ্র সম্ভব পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা জমা দিতে। কিন্তু কিংফিশারের তরফে পরিকল্পনা জমা পড়লেও তা ধোপে টেকেনি।
এই পরিস্থিতিতে সংস্থার পক্ষে স্লট ধরে রাখা যে কঠিন, রবিবার তার ইঙ্গিত মিলেছে ডিজিসিএ-প্রধানের কথায়। “ব্যবহার না-করে কেউ বিভিন্ন বিমানবন্দরে স্লট ধরে রাখতে পারে না। যে সব বেসরকারি সংস্থা মুম্বই-দিল্লি বিমানবন্দর পরিচালনা করছে, তারা কিংফিশারের স্লট থেকে টাকা পাচ্ছে না। বরং সেগুলো অন্য বিমানসংস্থাকে দিলে টাকা আসবে।” এ দিন বলেন অরুণ মিশ্র।
সংস্থা চাঙ্গা করতে কিংফিশার-কর্তৃপক্ষ কী দাওয়াই দিচ্ছেন?
সংস্থার এক কর্তা এ দিন ফোনে জানান, কিংফিশার-কর্ণধার বিজয় মাল্যের মদ-প্রস্তুতকারক কোম্পানিটির সিংহভাগ শেয়ার এক মার্কিন সংস্থাকে বেচে দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা মিলবে। আর তা দিয়ে এপ্রিলেই ডিজিসিএ-র চাহিদামতো কিংফিশারের সমস্ত কর্মীর আট মাসের বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে কর্তাটির দাবি। তাঁর বক্তব্য: বিভিন্ন তেল সংস্থার বকেয়া পাওনা আগেই চোকানো হয়েছে। এ বার বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ এবং দিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরের বেসরকারি পরিচালকদের পাওনাও মিটিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “লাইসেন্স পাওয়ার ছ’সপ্তাহ বাদে আমাদের নিয়মিত উড়ান পরিষেবা ফের চালু হবে, সাতটা বিমান দিয়ে। বড় এয়ারবাস থাকবে, ছোট এটিআর-ও আনা হবে।”
তবে এই সব ঘোষণার মধ্যে বিমান মহলের একাংশ অন্য অঙ্কও দেখতে শুরু করেছেন। যার নেপথ্যে রয়েছে আসন্ন টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আইপিএল। কী রকম?
সন্দিগ্ধ মহলটির বক্তব্য: ৩ এপ্রিল আইপিএল শুরু হচ্ছে। যার অন্যতম প্রতিযোগী দল হল বিজয় মাল্যের ‘রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।’ মাল্য স্বয়ং দলের সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশ ঘুরবেন। এবং যে কোনও শহরে তাঁর বিমানসংস্থার কর্মীরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে পারেন। সমালোচকদের দাবি: মাল্য ইতিমধ্যে বিক্ষোভের আগাম সঙ্কেত পেয়েও গিয়েছেন। এমনিতেই আইপিএল ঘিরে সংবাদ মাধ্যমে প্রচার তুঙ্গে থাকে। তার উপরে খেলা চলাকালীন মাঠের বাইরে তাঁর পাইলট-বিমানসেবিকা-ইঞ্জিনিয়ারেরা বিক্ষোভ দেখালে দেশ-বিদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সমূহ আশঙ্কা করছেন কিংফিশার কর্ণধার।
আর তা সামাল দিতেই তিনি নতুন চাল চালছেন বলে মনে করছেন সংস্থার কর্মী-অফিসারদের একাংশ। ওঁদের দাবি, গত অক্টোবরে নয়ডায় ফর্মুলা-ওয়ান কার রেসের সময়েও কর্মী-বিক্ষোভ আঁচ করে এক মাসের বকেয়া মিটিয়েছিলেন মাল্য। এ বার প্রায় তারই পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে। আরও বড় ধরনের বিক্ষোভ আঁচ করতে পেরে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর ‘গল্প’ ফাঁদা হচ্ছে। “কোনও মতে ঠেকা দিয়ে আইপিএল পার করতে পারলেই তো এক বছরের জন্য নিশ্চিন্ত!” মন্তব্য বিমানসংস্থার এক অফিসারের। |