পরিকল্পনার অভাব, বিশ বাঁও জলে ভেরেন্ডা প্রকল্প |
পরিকল্পনার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে সালানপুরের ভেরেন্ডা (জ্যাটরোফা কার্কাস) প্রকল্প। প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচের এই সরকারি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ১২টি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর ১৪৪ জন সদস্য। প্রকল্প ভেস্তে গিয়ে আয়ে টান পড়েছে তাঁদেরও। সকলেই চলে গিয়েছেন অন্য পেশায়। ব্যর্থতার তকমা গায়ে এঁটে দাঁড়িয়ে রয়েছে জ্যাটরোফা বাগানটি। জলে গিয়েছে সরকারি অর্থ।
২০০৭ সালে সালানপুর ব্লকের জিৎপুর উত্তরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নামোকেশিয়ায় ব্লক প্রশাসনের তরফে এই প্রকল্প শুরু হয়। কিন্তু বছর দুয়েক পড়েই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে। এখনও বাগানে গেলে দেখা যাবে, সার বেঁধে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাছগুলি। বায়ো ডিজেল তৈরির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তথা অন্যান্য ভেষজগুণ সম্পন্ন জ্যাটরোফা ফল ধরেছে গাছগুলিতে। কিন্তু তরতাজা সবুজ গাছগুলি এখন চোখের আরাম দেওয়া ছাড়া আর কোনও কাজেই লাগছে না। অথচ এই বাগান থেকে প্রচুর টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা। ব্লক প্রশাসনের তরফে নেওয়া এই প্রকল্পটির ভবিষ্যত নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে জেলা পরিষদ কয়েকটি খেপে প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকার অনুদান দেয়। বামেদের দখলে থাকা তৎকালীন পঞ্চায়েত সমিতি কাজটি শুরুও করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস এই সমিতি দখল করার পরে সেই কাজ বেশ কিছুটা এগোয়ও। কিন্তু বছরখানেক পরই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে। বহু চেষ্টা করেও সেটিকে আর চাঙ্গা করা যায়নি। |
সার বেধে দাঁড়িয়ে ভেরেন্ডা গাছ। শৈলেন সরকারের তোলা ছবি। |
সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল মজুমদার জানিয়েছেন, বায়োডিজেল তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান হিসাবে জ্যাটরোকার ফল ব্যবহার হয়। এছাড়া অন্যান্য ভেষজগুণও আছে এই ফলের। বাজারে এই ফলের চাহিদাও আছে। পঞ্চায়েত সমিতি সিপিএমের দখলে থাকার সময়ে ব্লক প্রশাসন ও সমিতির কর্তারা বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে বোঝেন, সালানপুরের শুষ্ক জমিতে জ্যাটরোফার চাষ ভাল হবে। এতে এলাকার কর্মসংস্থানেরও সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে এই ফল বিক্রি করে সমিতিরও আয় হবে। শ্যামলবাবু জানান, জিৎপুর উত্তরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নামোকেশিয়া অঞ্চলে প্রায় ৪০ একর সরকারি খাস জমিতে জ্যাটরোকা চাষ শুরু হয়। ফল বিক্রির জন্য একটি বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় সমিতি। জিৎপুর উত্তরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ১৪৪ জন মহিলাকে বাছাই করে ১২ টি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী বানিয়ে এই চাষের কাজে লাগানো হয়। ২০০৯ সালের গোড়ায় প্রথমবার জ্যাটরোফার ফল বিক্রি হয়। কিন্তু এরপর থেকে আর ফল বিক্রি হয়নি। স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলি মাঝপথে কাজ ছেড়ে দেয়। ফলে গোটা প্রকল্পটি ভেস্তে যায়।
কিন্তু কেন সফল হল না প্রকল্পটি? এর উত্তরে পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি শ্যামল মজুমদার জানান, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প। গ্রামের মানুষ এমন দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প পছন্দ করেন না। খুব জোর এক বছরের মধ্যেই লাভের অঙ্ক ঘরে তুলতে চান। তাছাড়া সালানপুরে অবৈধ কয়লার রমরমা ব্যাবসায় দৈনিক চার ঘণ্টা কাজ করেই হাতে গরম দু’শো টাকা রোজগার হয়। তাই দীর্ঘমেয়াদী এই প্রকল্পটিতে গ্রামের মানুষের মন বসানো যায়নি। শ্যামলবাবুর কথায়, “আসলে দূরদর্শীতার অভাব ছিল। আমরা এটি চালানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কিন্তু যাঁদের জন্য এই প্রকল্প, তাঁরাই আগ্রহী না হলে আমরা কী করব।” এদিকে যে গ্রাম পঞ্চায়েতে এই প্রকল্পটি শুরু হয় সেই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জগদীশ মালাকারের অভিযোগ, “পঞ্চায়েত সমিতির সদিচ্ছার অভাবেই এই প্রকল্পটি মাঝপথে ভেস্তে গিয়েছে। সমিতির কর্তারা গ্রামের মানুষকে বোঝালেই এটি চালানো যেত।” সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা সিপিএম নেত্রী শিপ্রা মুখোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, “বর্তমান সমিতির সদিচ্ছার অভাবেই এটি ভেস্তে গিয়েছে। আমরা ক্ষমতায় এলে এটি ফের চালাব।” |