গলায় শক্ত হয়ে বসা শিকলের মধ্যে কোনও রকমে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন একটি আঙুল। আর তাতেই বেঁচে গিয়েছেন মন্তেশ্বরের নেপাকুলি গ্রামের মমতাজ বিবি। আর বেঁচে গিয়েছেন বলেই পুলিশ তাঁর চিৎকার শুনে ছুটে আসা পড়শিদের থেকে আততায়ীর চেহারার খানিকটা বিবরণ পেয়েছে। যদিও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত দুষ্কৃতীর খোঁজ পায়নি পুলিশ।
দিনের আলোয় নানা অছিলায় ঢুকে বাড়িতে একা থাকা মহিলাকে খুনের ঘটনা ঘটছে একের পর এক। গত আড়াই মাসেই এমন তিনটি ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার অবশ্য মমতাজ বিবি কোনও মতে বেঁচেছেন। প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই বেশ কিছু মিল খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। তবে উত্তর মেলেনি অনেক প্রশ্নেরই। মমতাজ বিবির ক্ষেত্রে বিদ্যুতের মিটার দেখার নাম করে বাড়িতে ঢুকেছিল আততায়ী। গত ২৭ জানুয়ারি মন্তোশ্বরের কোঁড়াপাড়ার বৃদ্ধা সাধনা চট্টোপাধ্যায় খুনের ঘটনায় দেখা গিয়েছিল মিটার বক্সের সামনে উল্টে পড়ে রয়েছে একটি চেয়ার। তার আগে ১ জানুয়ারি কালনার ধাত্রীগ্রামের প্রৌঢ়া পূর্ণিমা গঙ্গোপাধ্যায় খুনের ক্ষেত্রেও চেয়ার উল্টে থাকার ঘটনা নজরে এসেছিল পুলিশের। এ সব থেকে পুলিশের ধারণা, মিটার দেখার নামেই বারবাহ দুষ্কৃতী বাড়িতে ঢুকেছে।
তিনটি ক্ষেত্রেই ঘটনাস্থল থেকে যে শিকলগুলি মিলেছে, খানিকটা ছোট-বড় হলেও আকার অনেকটা একই রকম। পুলিশের ধারণা, একই জায়গা থেকে কেনা হয়েছিল শিকলগুলি। তদন্তে নেমে পুলিশের আরও অনুমান, ডাকাতি করা দুষ্কৃতীর উদ্দেশ্য ছিল না। |
বছর বত্রিশের বধূ মমতাজ বিবি জানান, সে দিন বিকেলে বাড়িতে তিনি ঘুমোচ্ছিলেন। স্বামী মকবুল শেখ খেতের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এক মাত্র ছেলে ছিল স্কুলে। এক যুবক বাড়ির পিছনের জানলায় ডাকাডাকি শুরু করে। সে জানায়, বিদ্যুতের মিটার দেখবে। মমতাজ বলেন, “উঠোন থেকে কিছুটা দূরে থাকা মিটার দেখে বিদ্যুৎ রয়েছে কি না দেখতে বলে যুবকটি। ঘরে ঢুকে স্যুইচ বোর্ডে হাত দিতেই পিছন থেকে শিকল দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরে। কোনও রকমে তার মধ্যে একটি আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে চিৎকার করতে থাকি। ওই যুবক আমাকে টেনেহিঁচড়ে কিছুটা নিয়ে যায়। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।”
তত ক্ষণে অবশ্য আশপাশের বাড়ি থেকে ছুটে এসেছেন চন্দনা নন্দী এবং দিপালী দাস নামে দুই মহিলা। চন্দনাদেবী জানান, মমতাজ বিবির বাড়িতে ঢুকতেই তাঁরা দেখেন, একটি যুবক বেরিয়ে যাচ্ছে। ওই বাড়ির বধূ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে। দিপালীদেবী বলেন, “এর পরে বাইরে রাখা একটি কালো মোটরবাইকে চড়ে ওই যুবক পালায়। মমতাজের জ্ঞান ফিরলে তার কাছে পুরো ঘটনা শুনে শিউরে উঠি।”
তাঁদের কাছ থেকেই পুলিশ জেনেছে, ছিপছিপে চেহারার ওই যুবকের উচ্চতা প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট। গোলাকৃতি মুখ। গায়ের রঙ শ্যামলা। পুলিশ মনে করছে, তিনটি ঘটনার পিছনে রয়েছে একই আততায়ী। তবে কিছু প্রশ্নের কোনও উত্তর এখনও পুলিশের কাছে নেই। যে তিনটি জায়গায় ঘটনা ঘটেছে সেগুলি কালনা মহকুমার নানা প্রান্তে। প্রতি ক্ষেত্রে একই মস্তিষ্ক কাজ করলে দূরবর্তী নানা এলাকায় দুষ্কর্মের উদ্দেশ্য কী, জানা যায়নি। কেনই বা বাড়িতে একা থাকা মহিলারা তার লক্ষ? কোন সময়ে মহিলারা বাড়িতে একা রয়েছে, তা সে জানতে পারছেই বা কী ভাবে? এ সব নিয়ে পুলিশ এখনও অন্ধকারে। পুলিশের দাবি, এলাকার দাগী অপরাধীদের জেরা করে মনে হয়েছে, তারা এই কাজে জড়িত নয়। যুক্ত রয়েছে অন্য কোনও অচেনা মুখ। মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা খোঁজ চালাচ্ছি। আশা করি, বারবার আততায়ী ধোঁকা দিতে পারবে না।”
|