আসন্ন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে শরিক দলগুলিকে গত বারের তুলনায় বেশি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। বৃহস্পতিবার বর্ধমানে দলের জেলা কমিটি অফিসে বসে এমনটাই জানালেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অমল হালদার।
এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম নেতা অমল হালদার, আব্দার রেজ্জাক মণ্ডলদের সঙ্গে ছিলেন সিপিআইয়ের রামচন্দ্র সিংহ, ফরওয়ার্ড ব্লকের মহবুব মণ্ডল, আরএসপি-র অঞ্জন মুখোপাধ্যায়, আসরাফ আলি, মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের মোরাদ হোসেন মোল্লা।
রাজ্য-রাজনীতিতে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণেই তাঁরা শরিকদের বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন কি না, জেলার সিপিএম নেতাদের কাছে সে প্রশ্নের বিশেষ উত্তর মেলেনি। তবে অমলবাবু বলেন, “আমাদের শরিকদের মধ্যে সার্বিক ঐক্য রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমেই যা সিদ্ধান্ত হওয়ায় হয়েছে।”
এ দিন অমলবাবু দাবি করেন, “গত বিধানসভা নির্বাচনে আমরা মোট ভোটের শতকরা ৪৫ ভাগ পেয়েছিলাম। কয়েকটি আসনে নগণ্য ভোটে হেরেছি। এই পরিস্থিতি যদি এ বারও বজায় থাকলে আমরা জেলা পরিষদে ৭৫টির মধ্যে ৫৩টিতে জিতব। যদি শতকরা দু’ভাগ ভোট পঞ্চায়েত ভোটে কম পাই তবে ৫১টিতে জিতবই।” |
গত বার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কোথাও কোনও আসন দেওয়া না হলেও এ বার জেলা পরিষদ থেকে পঞ্চায়েত, সর্বত্রই সোশালিস্ট পার্টিকে আসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বামফ্রন্ট নেতারা জানিয়েছেন। এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে অবশ্য সোসালিস্ট পার্টির তরফে কেউ হাজির ছিলেন না। অমলবাবুর দাবি, “গত বার ৩১টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ৬টি আমরা হারিয়েছিলাম। তার মধ্যে তিনটি ফিরে পাব বলে আশা রাখছি। গতবার ২৭৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে আমরা দখল করেছিলাম ২০৭টি। এ বার তার চেয়ে কম পঞ্চায়েত পাব না বলেও আমাদের আশা।”
গত বিধানসভা ভোটে যেখানে জেলার ২৬টি আসনের মধ্যে ১৭টিই গিয়েছে তৃণমূল ও কংগ্রেসের দখলে, সেই পরিস্থিতিতে এরকম আশা তাঁরা কীসের ভিত্তিতে রাখছেন, সে প্রশ্নে অমলবাবুর বক্তব্য, “আমাদের এ বারের স্লোগান জনগণের হাতে পঞ্চায়েত চাই। এখন পঞ্চায়েত চলছে আমলাদের হাত ধরে। মানুষ তা চাইছেন না। তাই তাঁরা আমাদেরই ভোট দেবেন।”
বাম নেতাদের অভিযোগ, তফসিলি জাতি, উপজাতি প্রার্থী, বিশেষত মহিলা প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্লক অফিস থেকে শংসাপত্র পাওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অমলবাবুদের দাবি, জেলাশাসক বলছেন, সমস্ত তফসিলি জাতি বা উপজাতির জন্য শংসাপত্র তৈরি রয়েছে। কিন্তু আনতে গিয়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে। বামেদের আরও অভিযোগ, অবাঙালিদের শংসাপত্র দেওয়ার সময়ে কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ রাজ্য থেকে নানা শংসাপত্র আনতে বলা হচ্ছে। তার জেরে খনি এলাকায় প্রার্থী বাছতে সমস্যা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের তরফে অবশ্য অযথা কাউকে হয়রান করার কথা মানতে চাওয়া হয়নি। তৃণমূলের বর্ধমান জেলার অন্যতম পর্যবেক্ষক অলোক দাসের প্রতিক্রিয়া, “গরম পড়ছে। তার সঙ্গে নির্বাচনের উত্তাপও যোগ হচ্ছে। সিপিএমের লোকজনের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ওঁরা প্রলাপ বকছেন।” |