এই নিয়ে তৃতীয় বার।
প্রতি বারই বাড়ি ছিল ফাঁকা। একা ছিলেন মহিলা।
প্রতি বারই দুপুর-বিকেল করে এসেছে অচেনা আগন্তুক। কখনও ইলেকট্রিকের মিটার দেখতে, কখনও বা অন্য অছিলায়।
তারপর, একাকী মহিলা যখন অন্যমনস্ক, পিছন থেকে আচমকা গলায় শিকল পেঁচিয়ে...
এ বার কিন্তু বেঁচে গিয়েছেন কালনার বছর বত্রিশের মমতাজ বিবি।
বছর কুড়ি আগে স্টোনম্যানের একের পর এক খুন বা হালফিলের ‘বাইশে শ্রাবণে’ নির্বিকার ভঙ্গীতে কবিতার সূত্র রেখে একের পর এক খুনকে গেঁথে ফেলার যে রহস্য, তার অনেকটাই এবার পর্দার বাইরে বাস্তবে, খোদ কালনায়।
মঙ্গলবার বিকেলে কালনার নেপাকুনির সরকারপুকুর এলাকায় গলায় লোহার শিকল পেঁচিয়ে মমতাজ বিবিকে খুন করতে চেয়েছিল খুনি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। মহিলার চিৎকারে জড়ো হয়ে গেলেন পড়শিরা। খুনির হাত থেকে ফসকে গেল শিকার। খুনিও চোখের নিমেষেই পগারপার। এর আগেও একই ভাবে ধাত্রীগ্রাম ও মন্তেশ্বরের কুঁড়েপাড়ায় দুই প্রৌঢ়াকে গলায় লোহার শিকল জড়িয়ে খুন করা হয়েছিল। কিন্তু এ দিনের পরেও কে বা কারা খুনের ঘটনায় জড়িত, তা নিয়ে অন্ধকারে পুলিশ। পরপর তিনবার এমন ঘটনায় রীতিমতো উদ্বিগ্নও পুলিশ। মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “পরপর তিন বার একই রকম ঘটনা ঘটায় আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। বিশেষ ভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে নেপাকুনি গ্রামে নিজের বাড়িতে একাই ছিলেন মাঝবয়সী মমতাজ বিবি। তাঁর স্বামী মকবুল শেখ অন্য কাজে বাইরে গিয়েছিলেন। বিকেল তিনটে নাগাদ এক যুবক বাড়িতে কড়া নাড়ে। তিনি দরজা খুলতে নিজেকে বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী বলে পরিচয় দেয় ওই যুবক। বাড়ির মিটার দেখতে চায়। তার জন্য মুমতাজ বিবিকে বিদ্যুতের মেন সুইচ বন্ধ করতে বলে। মমতাজ তা করতে গেলে পিছন থেকে তাঁর গলায় লোহার শিকল জড়িয়ে তাঁকে খুনের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। ওই গৃহবধূ তারস্বরে চিৎকার করলে আশপাশ থেকে কয়েক জন প্রতিবেশী ছুটে আসেন। তখনই পালিয়ে যায় আততায়ী। ঘটনার খবর পেয়ে কালনা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। যদিও ঘটনায় জড়িত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি তারা।
এই বছরের গোড়াতেই ১ জানুয়ারি একইভাবে গলায় লোহার শিকল জড়িয়ে খুন করা হয় কালনা ১ ব্লকের ধাত্রীগ্রামের বাসিন্দা পূর্ণিমা গঙ্গোপাধ্যায়কে (৫৫)। বিকেলে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন তাঁর স্বামী লক্ষ্মীবাবু। তিনি ফিরে এসে দেখেন মেঝেতে পড়ে রয়েছে তাঁর স্ত্রীর দেহ। গলায় লোহার শিকল জড়ানো। এর পর ফের ২৭ জানুয়ারি মন্তেশ্বরের কুঁড়েপাড়ায় ছেলের বাড়িতে খুন হন বৃদ্ধা সাধনা চট্টোপাধ্যায় (৭০)। সে দিনও বাড়িতে তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। তাঁর ছেলে মলয় চট্টোপাধ্যায় স্ত্রীকে নিয়ে পিকনিকে গিয়েছিলেন সেদিন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে মলয়বাবু মেঝেতে মায়ের মৃতদেহ দেখেন। সেখানেও একই ভাবে মৃতদেহের গলায় লোহার শিকল প্যাঁচানো ছিল। দু’টি ঘটনার মধ্যে যে মিল রয়েছে, তা স্বীকার করেছিল পুলিশ। এমনকী খুনের ধরণ, সময়, শিকার সবটাই অনেকটা একই রকম বলে পুলিশের অনুমান।
মন্তেশ্বরের ঘটনায় খুনিকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। জেলা ও মহকুমা পুলিশের পদস্থ আধিকারিকেরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়। পুলিশের তরফে জানানো হয়, ধৃতকে জেরা করে আরও কয়েক জনের খোঁজ চলছে। কিন্তু ঠিক কী উদ্দেশে বৃদ্ধাকে খুন করা হয়েছিল, তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে পুলিশ। তবে এই ঘটনার পরে পুলিশের দাবি, খুনের জন্য একই কায়দা ও একই সময় বেছে নেওয়া হয়েছে। তা থেকে আমাদের অনুমান, তিনটি ঘটনার পিছনেই একই দুষ্কৃতী রয়েছে। |