ছ’দিন আগে চালু হয়েছে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল। ১৫ মার্চ, শুক্রবার পর্যন্ত একের পর এক বিমানসংস্থা তাদের উড়ান পুরনো থেকে সরিয়ে এনেছে সেই টার্মিনালে। কিন্তু এখনও নিত্যনতুন সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।
বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা-র কথায়, “অন্তত এই মাসটা আমাদের সময় দিন। আশা করছি, এর মধ্যে সব সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে পারব।” তাঁর যুক্তি, দিল্লির নতুন টার্মিনাল টি-থ্রি চালু হওয়ার পরে বাতিল করে দিতে হয়েছিল বহু উড়ান। লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ফোর চালুর পরে সাংঘাতিক সমস্যায় পড়েছিলেন যাত্রীরা। সে তুলনায় তো কলকাতার সমস্যা কমই।
শনিবার আনন্দবাজারের তরফে নতুন টার্মিনাল ঘুরে দেখে তুলে ধরা হল বিভিন্ন সমস্যা ও তার সম্ভাব্য সমাধানের দিক। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সমস্যা তুলনায় কম। |
সমস্যা ১
অনেকেই এখন এসি ভলভো বাসে বিমানবন্দরে পৌঁছোন। নতুন টার্মিনালের দোড়গোড়া পর্যন্ত সেই বাস যাচ্ছে না। বাস থেকে নেমে অনেকটা হাঁটতে হচ্ছে যাত্রীকে। যাঁরা অন্য শহর থেকে কলকাতায় নেমে ওই বাস ধরতে চান, তাঁদেরও অনেকটা হেঁটে আসতে হচ্ছে বাসের কাছে।
সমাধান: বাসচালকরা জানিয়েছেন, নতুন টার্মিনালের দোরগোড়া পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি তাঁরা পাননি। পেলে ওখানে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে নীচ থেকে আবার যাত্রীদের তুলে নেওয়া যেতেই পারে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ: চুপ।
সমস্যা ২
পুরনোর মতোই নতুন টার্মিনালে ঢুকলেও এখন সামনে পড়ছে এক্স-রে মেশিন। পিক আওয়ার-এ (যে সময়ে সবচেয়ে বেশি উড়ান থাকে) সেই এক্স-রে মেশিনের সামনে লাইন পড়ে যাচ্ছে আগের মতোই।
সমাধান: দিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ বিমানবন্দরে আলাদা কোনও এক্স-রে মেশিন নেই। সেখানে চেক-ইন কাউন্টারে সরাসরি পৌঁছে যান যাত্রীরা। ‘ইন-লাইন ব্যাগেজ সিস্টেম’-এ সেখানেই ব্যাগ এক্স-রে হয়ে যায়।
কর্তৃপক্ষ: কলকাতায় সেই ব্যবস্থা চালু হতে আরও কিছু সময় লাগবে।
সমস্যা ৩
বিমানসংস্থার প্রিন্টার মাঝেমধ্যেই কাজ করছে না। বোর্ডিং কার্ড পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। ফলে চেক-ইন কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন। যে কনভেয়ার বেল্ট মারফত যাত্রীর ব্যাগ বিমানের কাছে যাচ্ছে, তা-ও হঠাৎ থমকে যাচ্ছে। ফেরার সময় যে কনভেয়ার বেল্ট যাত্রীদের ব্যাগ বিমান থেকে টার্মিনালে তাঁদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে, সে ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হচ্ছে।
সমাধান: যে কম্পিউটার ব্যবস্থা মারফত বোর্ডিং কার্ড ছাপা হয়, সেটি তুলনায় ধীরে চলছে। সেই ব্যবস্থার গতি বাড়াতে হবে। কনভেয়ার বেল্ট-এ দু’টি ব্যাগের মাঝখানে জায়গা রাখতে হবে। কম্পিউটার লিঙ্ক পরিষেবা যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁদের কোনও প্রতিনিধি আগামী কয়েক দিন ২৪ ঘণ্টা সেখানে থাকলে সমস্যার দ্রুত সমাধান সম্ভব।
কর্তৃপক্ষ: বিষয়টি বিমানসংস্থা ও যাঁরা পরিষেবা দিচ্ছেন তাঁদের আওতায় পড়ে। |
এখনও চলছে কাজ। |
হাতে লেখা বোর্ড। |
শৌচাগারের দুরবস্থা। |
|
সমস্যা ৪
চেক-ইন-এর পরে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে সিআইএসএফ জওয়ানরা যাত্রীর দেহ ও হাত-ব্যাগ পরীক্ষা করেন। পুরনোর মতোই নতুন টার্মিনালেও সেই বেষ্টনীর সামনেও পড়ছে বিশাল বড় লাইন।
সমাধান: তিনটি আলাদা নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সিআইএসএফ-এর কর্মীর অভাবে স্পাইসজেট ও ইন্ডিগো বিমান সংস্থার চেক-ইন কাউন্টারের মাঝে যে বেষ্টনী রয়েছে, তা আপাতত বন্ধ। সেটি চালু হলেই কমে যাবে লাইন।
কর্তৃপক্ষ: সিআইএসএফ-এর ১৩০০ কর্মী প্রয়োজন। এখন আছেন হাজার খানেক। আরও তিনশো কর্মী চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
সমস্যা ৫
নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে কোন যাত্রী কোন বোর্ডিং গেট থেকে বিমানে উঠবেন, তা লেখা থাকছে বোডিং কার্ড ও বিমানবন্দরে রাখা ডিসপ্লে বোর্ড-এ। কিন্তু, বেষ্টনী পেরিয়ে যাত্রীরা খুঁজে পাচ্ছেন না সেই গেট। কারণ, হাতে লিখে বোর্ডে সাঁটা কাগজ এতটাই ছোট যে যাত্রীদের চোখেই পড়ছে না।
সমাধান: অন্য বিমানবন্দরের মতো বড় ডিসপ্লে বোর্ড রাখতে হবে। এখন বিমানসংস্থার কর্মীরা যাত্রীদের ধরে ধরে গেট চিনিয়ে দিচ্ছেন।
কর্তৃপক্ষ: নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরে নামী সংস্থার বিপণি থাকার কথা। তার পরে থাকবে বোর্ডিং গেট। সেই বিপণি তৈরি হয়নি বলে যাত্রীরা ধোঁকা খেয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা সেখানেই বোর্ডিং গেট-এর নিশানা খোঁজার চেষ্টা করছেন। |
যাত্রীদের কথা |
নেমে কনভেয়ার বেল্ট-এর পাশে দেখি ট্রলি নেই। ৭০ বছর বয়স। চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। এই অবস্থায় অনেক দূর হেঁটে গিয়ে ট্রলি পেলাম।
ঝর্ণা সেনগুপ্ত (কলকাতা) |
কোন বেল্টে আমার ব্যাগ আসবে, তার ঘোষণা হয়েছে আমি নেমে আসার ৪০ মিনিট পরে।
নরিন্দর কৌর (কলকাতা) |
নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরে দু’নম্বর গেট খুঁজেই পাচ্ছিলাম না। যাঁদের তাড়া থাকবে, তাঁরা তো সমস্যায় পড়ে যাবেন।
সুপ্রতিম পাল (কলকাতা) |
শৌচাগারের অবস্থা বেশ খারাপ। দিল্লি বা দেশের অন্য বিমানবন্দরের সঙ্গে তুলনাই করা উচিত নয়।
মাবজুলুর রহিম (ঢাকা) |
|
সমস্যা ৬
এখনও বহু শৌচালয়ের মেঝেতে জল পড়ে নোংরা হয়ে থাকছে। হাত মোছার কাগজ থাকছে না। অথবা ডাস্টবিন উপচে সেই কাগজ শৌচাগারের মেঝেতে পড়ে থাকছে। কিছু ক্ষেত্রে শৌচালয় তুলনায় ছোট। অনেক শৌচালয়ে কল থেকে জল পড়ছে না। অভিযোগ প্রধানত মহিলাদের শৌচাগার নিয়ে।
সমাধান: শৌচাগার বড় করা যাবে না। ওই সমস্যা থেকেই যাবে। তবে, আরও কর্মী নিয়োগ করে তা নিয়মিত সাফ রাখা সম্ভব। জানা গিয়েছে, প্রতি শিফটে যেখানে প্রায় ৮০ জন কর্মী প্রয়োজন (অর্থাৎ তিন শিফটে দরকার ২৪০ জন), সেখানে তিন শিফটে কাজ করছেন ১৪০ জন। দিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদে এখন কলকাতার চেয়ে যাত্রী বেশি। তাতেও শৌচাগার সবসময় ঝকঝকে তকতকে থাকে।
কর্তৃপক্ষ: পুরনো টার্মিনালে সাতটি শৌচাগারের জায়গায় এখন এখানে ৪৮টি শৌচাগার রয়েছে। বাইরের পেশাদার সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে তা পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব।
এ ছাড়াও নতুন টার্মিনালে কাজ করছে মোটে ছ’টি অ্যারোব্রিজ। ফলে পুরনোর মতোই বেশির ভাগ উড়ানের যাত্রীদের বাসে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিমানে। টার্মিনালে খাবারের দোকানও কম। কর্মীদের খাওয়ার মতো ক্যান্টিনও নেই।
সমস্যা হচ্ছে শেষ মূহূর্তের কাজেও (ফিনিশিং টাচ)। তৈরি হচ্ছে ধুলো। বেসমেন্টে বিমানসংস্থার অফিস থেকে মোবাইল টাওয়ার ধরছে না। ওয়াকিটকিও কাজ করছে না। এত কিছু সমস্যার জন্য শনিবারে বেশ কয়েকটি উড়ান দেরিতে ছেড়েছে।
|