বন্দর এলাকার আয়রন গেট রোডে একটি খাটালের পাশে এক সন্ধ্যায় জড়ো হয়েছিল ওরা। কথা বলছিল দু’জনের সঙ্গে। এক জন ওদের হাতে তুলে দেয় আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বোমা। অন্য জন নির্দেশ দিয়েছিল, সেগুলি নিয়ে পর দিন হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে সকাল সকাল হাজির হয়ে যেতে। কেউ বাধা দিলে তারা যেন ওই সব অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা না করে।
১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার ঘটনা। গার্ডেনরিচে পুলিশ অফিসার খুনের তদন্তে নেমে সিআইডি জেনেছে, সেই সন্ধ্যায় যাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়, তাদের অন্যতম শেখ সুহান। যার গুলিতেই কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরী খুন হন বলে গোয়েন্দাদের বক্তব্য। তাঁদের দাবি, অস্ত্র ব্যবহার করতে বলেছিলেন যিনি, তিনি আর কেউ নন, তৃণমূল বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না।
কিন্তু সুহানদের হাতে গুলি-বন্দুক তুলে দিয়েছিল কে?
সিআইডি সূত্রের খবর, জেরায় শেখ সুহান তদন্তকারীদের জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম মিরাজ। বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবকই মুন্নার নির্দেশে সুহানদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিয়েছিল। খুনের মামলায় যে কারণে মিরাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঘটনার দিন হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে মুন্নার আশপাশেও মাথায় টুপি পরা ওই মিরাজকে দেখা গিয়েছিল। ভিডিও ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখে তার ছবিও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। গোয়েন্দারা জেনেছেন, শুধু গার্ডেনরিচ-কাণ্ডই নয়, অতীতেও বিভিন্ন ‘অ্যাকশন’-এর ক্ষেত্রে মুন্নার সাঙ্গোপাঙ্গদের জন্য অস্ত্রশস্ত্র মিরাজের কাছেই জমা থাকত। নির্দিষ্ট দিনের ঠিক আগে সে-ই অস্ত্রশস্ত্র বিলি করত। যেমন দিয়েছিল ১১ ফেব্রুয়ারি।
কিন্তু মিরাজকে ধরতে সিআইডি এখনও পর্যন্ত অভিযান চালায়নি। কলকাতা পুলিশের একটি সূত্রের খবর, গার্ডেনরিচ থানার টহলদার পুলিশের একটি দলের তাড়া খেয়ে পালানোর সময়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চার তলা থেকে এক তলায় লাফিয়ে পড়ে মিরাজের একটি পা ভেঙে যায়। তার পর কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে না গিয়ে কোনও একটি বাড়িতে রেখে সেখানে চিকিৎসক ডাকিয়েই চিকিৎসা করানো হয় মুন্নার ওই শাগরেদের। বন্দর এলাকারই কোথাও সে আত্মগোপন করে আছে বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। যদিও এর পরেও কিন্তু মিরাজের ব্যাপারে সিআইডি চুপচাপ বসে আছে।
আসলে অভিযান চালানো দূরস্থান, ৯ মার্চ মুন্নাকে ভবানী ভবনে নিয়ে আসা ইস্তক এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে তাকে বড় জোর ঘণ্টা চারেক জেরা করা হয়েছে বলে একটি সূত্রের খবর। অথচ সিপিএমের দুই নেতা সুশান্ত ঘোষ ও লক্ষ্মণ শেঠকে এই সিআইডি-ই ভবানী ভবনে দিনরাত জেরা করেছিল। এমনও হয়েছে যে, সিআইডি-র লক আপে থাকা সুশান্ত ঘোষকে মাঝরাতে ঘুম ভাঙিয়ে তুলে বাকি রাত তাঁকে জেরা করেছিলেন গোয়েন্দারা। তা হলে সেই সিআইডি-ই মুন্নাকে এতটা ছাড় দিচ্ছে কেন?
সিআইডি-র স্পেশ্যাল আইজি বিনীত গয়াল শনিবার বলেন, “তদন্তের প্রয়োজনে যা যা করার, মুন্নার ক্ষেত্রে তা সবই হচ্ছে। আগে কার ক্ষেত্রে কী হয়েছিল, এখন কী হচ্ছে না, এ সব নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।”
এ দিকে, মুন্নাকে জেরা করার সময়ে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে বলে তাঁর আইনজীবী শনিবার অভিযোগ করেছেন। বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, গোয়েন্দারা যখন মুন্নাকে জেরা করবেন, তখন তাঁর আইনজীবী উপস্থিত থাকতে পারবেন। এ দিন মুন্নার আইনজীবী অরিন্দম দাস ভবানী ভবনে যান। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, মুন্নাকে তাঁর সামনে জেরা করা হয়নি। ভবানী ভবন থেকে বেরিয়ে অরিন্দমবাবু বলেন, “আমাকে অন্য ঘরে বসিয়ে রেখে মুন্নাকে দেড় ঘণ্টা জেরা করেন গোয়েন্দারা। আমার মক্কেলের সঙ্গে আমাকে কথাও বলতে দেওয়া হয়নি।” সোমবার মুন্নার আইনজীবীরা বিষয়টি নিয়ে আলিপুর আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। |