কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালকে সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরছে একের পর এক সমস্যা। কনভেয়ার বেল্ট বিভ্রাট, কাচ ভাঙা বা এরোব্রিজের দরজা বন্ধের সমস্যা তা-ও মিটিয়ে নিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, শুক্রবার সন্ধ্যায় আচমকাই বসে গেল অভিবাসনের কম্পিউটার ব্যবস্থা!
কলকাতা থেকে যাঁরা বিদেশে যান বা বিদেশ থেকে যাঁরা সরাসরি কলকাতায় এসে নামেন, তাঁদের পাসপোর্ট পরীক্ষা করা হয় অভিবাসনের এই ব্যবস্থার মাধ্যমে। তা বসে যাওয়ার অর্থ, কোনও যাত্রীর পাসপোর্টই পরীক্ষা করা যাবে না। ফলে কোনও যাত্রীকে যেমন বিদেশ যাওয়ার বিমানে উঠতে দেওয়া যাবে না, বিদেশ থেকে এসে কেউ শহরেও ঢুকতে পারবেন না। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ দিন সন্ধ্যায় এর জেরে আটকে পড়েন কলকাতা থেকে দুবাই যাওয়ার যাত্রীরা। ঢাকা থেকে কলকাতায় নামার পরেও আটকে থাকেন যাত্রীরা। অগত্যা ‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতেই যাত্রীদের পাসপোর্ট পরীক্ষা করা হয়।
গত বুধবার রাতে দিল্লি থেকে এসে এরোব্রিজ পেরিয়ে নতুন টার্মিনালে ঢুকেও আটকে পড়েছিলেন ১৩২ জন যাত্রী। একই ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবারেও। নতুন টার্মিনালের যে দিকে বিমান দাঁড়ায়, শুক্রবার সে দিকের কাচের দেওয়াল থেকে একটি কাচ ভেঙে পড়ে। তা গিয়ে পড়ে বিমান দাঁড়ানোর (অ্যাপ্রন) এলাকায়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বা বিমান সংস্থার কোনও কর্মী সেখানে না থাকায় বড় বিপদ হয়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেও নতুন টার্মিনালের দেওয়ালের একটি কাচ ভেঙে পড়ে। |
সমস্যা দেখা দিচ্ছে কনভেয়ার বেল্ট নিয়েও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুয়াহাটি থেকে ইন্ডিগোর উড়ানে কলকাতায় নেমে অনির্বাণ বসু নামে এক যাত্রী অভিযোগ করেন, একটি মাত্র কনভেয়ার বেল্টে তিনটি উড়ানের যাত্রীদের ব্যাগ আসতে শুরু করে। ফলে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের সবাইকে। অন্য কনভেয়ার বেল্টগুলি ব্যবহার করা হয়নি। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, নতুন কনভেয়ার বেল্টগুলি আধুনিক এবং কিছুটা স্পর্শকাতরও বটে। দু’টি ব্যাগ কাছাকাছি এলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বেল্ট।
নতুন টার্মিনালে আসার তথ্য যাত্রীদের মোবাইলে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বিমান সংস্থাগুলি। তা সত্ত্বেও অনেকেই হাজির হয়েছেন পুরনো টার্মিনালে। সেখান থেকে তাঁদের নতুন টার্মিনালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ করেননি বলেও অভিযোগ উঠেছে। এক বিমান সংস্থার অফিসার বলেন, “দিল্লি-মুম্বইয়ের পুরনো টার্মিনাল থেকে নিখরচায় বাসে যাত্রীদের নতুন টার্মিনালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।” শুক্রবার বিমান সংস্থাগুলিকেই সেই কাজ করতে হয়েছে। শুরুর দিন একটি পরিত্যক্ত ব্যাগ ঘিরে বোমাতঙ্কও ছড়ায় নতুন টার্মিনালে। ঝুঁকি না নিয়ে বম্ব স্কোয়াড ডেকে তল্লাশি চালানো হয়। তবে মিলেছে শুধুই জামাকাপড়।
শুক্রবার থেকেই বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল পুরো চালু হয়ে গিয়েছে। এত দিন ধরে চলা বিমানবন্দরের দু’টি পুরনো টার্মিনাল থেকে বন্ধ হয়ে গেল যাত্রীদের যাতায়াত। ওই দুই টার্মিনাল পরবর্তীকালে সম্প্রসারণের কাজে লাগতে পারে বলে বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে।
গত ১১ মার্চ থেকে একটি একটি করে বিমান সংস্থার উড়ান সরতে শুরু করে নতুন টার্মিনালে। শুক্রবার এয়ার ইন্ডিয়া ও জেট-এর যাবতীয় অভ্যন্তরীণ উড়ান এবং হংকং যাওয়ার একটিমাত্র আন্তর্জাতিক উড়ান চলে আসে নতুন টার্মিনালে। তাদের দিয়েই শেষ হয় স্থানান্তরিত হওয়ার কাজ। বিমান সংস্থার অফিস, প্রি-পেড ট্যাক্সি বুথ, ভলভো বাস বুথ-সহ বেশির ভাগ পরিষেবার অফিসও শুক্রবারের মধ্যে চলে এসেছে নতুন টার্মিনালে। তবে, রেলওয়ে কাউন্টার, কিছু বিমান সংস্থার অফিস এখনও রয়ে গিয়েছে পুরনো অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে।
অন্য দিকে, এ দিনই সকালে রানওয়ে থেকে ওড়ার আগে পাখির ধাক্কা লাগে এমিরেটসের একটি বিমানের ইঞ্জিনে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইঞ্জিন। দুবাইগামী বিমানটি ২৩২ জন যাত্রীকে নিয়ে আটকে পড়ে। বিমানবন্দর সূত্রে খবর, আটকে পড়ার পরে নতুন টার্মিনালের একতলায় ‘অ্যারাইভাল হল’-এ ফিরে আসেন যাত্রীরা। অন্য বিমানবন্দরে এমন ক্ষেত্রে যাত্রীদের যে লাউঞ্জে এনে বসানো হয়, বিমান সারানোর পরে সেই লাউঞ্জ থেকেই তাঁরা সরাসরি বিমানে উঠতে পারেন। কিন্তু নতুন টার্মিনালে বিমান সংস্থার কর্মীরা এখনও সড়গড় হননি। তাই আটকে পড়া যাত্রীদের প্রথমে টার্মিনালের বাইরে আনা হয়। লিফ্টে দোতলায় এনে ‘ডিপারচার গেট’ দিয়ে ঢোকানোর সময়ে বাধা দেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ। তখন যাত্রীদের নতুন করে হাতে লিখে বোর্ডিং কার্ড দিয়ে আবার ঢোকানো হয় টার্মিনালে।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, আটকে পড়া যাত্রীদের অনেকেই যাত্রা বাতিল করে ফিরে গিয়েছেন শহরে। অনেককে শহরের হোটেলে রেখেছে বিমান সংস্থা। কিছু যাত্রীকে সন্ধ্যার বিমানে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। যদিও অভিবাসন দফতরের কম্পিউটার ব্যবস্থা বসে যাওয়ায় সেই উড়ান ছাড়তেও দেরি হয়ে যায়।
|