পুলিশের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ আগেও উঠেছে। কিন্তু এই অভিযোগে পুলিশের বিশেষ একটি শাখাকে কার্যত তুলে দিয়ে নজির তৈরি করলেন রেল পুলিশের ডিজি।
শিয়ালদহের ‘স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ’ বা এসওজি তুলে দেওয়ার জন্য শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য রেল পুলিশের ডিজি অমরকান্তি সরকার। বছর পাঁচেক আগে শিয়ালদহ রেল পুলিশের এলাকায় অপরাধ দমনের জন্য ওই বিশেষ শাখা গড়া হয়েছিল।
ডিজি-র নির্দেশে বলা হয়েছে, এসওজি-র শিয়ালদহের কার্যালয় অবিলম্বে বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দিতে হবে। এসওজি-র সব অফিসার ও কনস্টেবলকে রেল পুলিশ লাইনে বসিয়ে রাখতে হবে। ডিজি-র নির্দেশ অনুযায়ী শিয়ালদহ রেল পুলিশ থানার ওসি চন্দন ঘোষ এ দিন সকালে এসওজি-র অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। কর্মীদেরও চলে যেতে বলা হয়েছে রেল পুলিশ লাইনে।
ভয় দেখিয়ে এক বিবাহিতা মহিলার বারাসতের বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁর টাকা ও গয়না হাতানোর অভিযোগে বৃহস্পতিবার শিয়ালদহ এসওজি-র দুই কনস্টেবল-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। একই অভিযোগ আনা হয়েছে এসওজি-র এএসআই ধর্মেন্দ্র সিংহের বিরুদ্ধে। তিনি পলাতক। তাঁকে ধরতে তল্লাশিতে নেমেছেন শিয়ালদহ রেল পুলিশ থানার অফিসারেরা।
রেল পুলিশের ডিজি এ দিন বলেন, “এসওজি-র বিরুদ্ধে যে-অভিযোগ উঠেছে, তার পরে ওই দলটিকে আর কাজ করতে দেওয়া উচিত হবে না। ওই দলের সব কর্মীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই ঠিকই। তা সত্ত্বেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এসওজি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” ডিজি আরও জানান, সম্প্রতি শিয়ালদহ এসওজি-র এক অফিসার বদলি হন। তার পরে থেকে দলটি নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে। নেতৃত্বহীন হয়ে পড়াতেই একাধিক কর্মী দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন বলে রেল পুলিশের কর্তাদের অনুমান।
কত দিনের জন্য বন্ধ রাখা হবে এসওজি-র কাজ? ডিজি বলেছেন, “অদূর ভবিষ্যতে এসওজি-কে কাজে লাগানোর কোনও পরিকল্পনা নেই।”
রেল পুলিশ সূত্রের খবর, বছর পাঁচেক আগে শিয়ালদহ স্টেশনে একটি বাড়ির দোতলায় ১৮ জন কর্মী নিযুক্ত করে এসওজি-র অফিস খোলা হয়। ওই কর্মীদের মধ্যে ছিলেন এক জন সাব-ইনস্পেক্টর, তিন জন এএসআই এবং এক মহিলা-সহ ১৪ জন কনস্টেবল। ১৮ জনের দলটি বহরমপুর, শান্তিপুর, বনগাঁ, ডায়মন্ড হারবার এবং ক্যানিং পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় অপরাধ দমনে নিযুক্ত ছিল। বেশ কিছু দিন ধরেই ওই দলটির কাজকর্ম নিয়ে রেল পুলিশের বিভিন্ন কর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ জানাচ্ছিলেন যাত্রী, ছোট ব্যবসায়ী, হকার, এমনকী রেল পুলিশের অন্য থানার অফিসারেরাও।
রেল পুলিশের এক কর্তা জানান, বারাসতের ওই মহিলা শিয়ালদহ এসওজি-র চার কর্মীর বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ দায়ের করার পরে প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়। জানা যায়, শুধু ওই মহিলার কাছ থেকেই নয়, বেশ কয়েক জন ব্যবসায়ী এবং নিরীহ যাত্রীর কাছ থেকে আগেও তোলা আদায় করেছে এসওজি-র এক শ্রেণির কর্মী। ওই কর্তার দাবি, রক্ষকই যে ভক্ষক হয়ে উঠেছে, তার প্রমাণ মেলে বৃহস্পতিবার রাতে। এসওজি-র অফিসে থাকা অভিযুক্ত এক কনস্টেবলের ট্রাঙ্কে পাওয়া যায় বারাসতের মহিলার কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ২৫ হাজার টাকা এবং সোনার কিছু গয়না। মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ধৃত এসওজি-র দুই কনস্টেবল এবং এক যুবককে এ দিন শিয়ালদহ আদালতে তোলা হয়। রেল পুলিশ জানায়, ধৃতদের তিন দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। |