মানুষের ক্ষতি করে জমি অধিগ্রহণে তাঁর ঘোর আপত্তি। কিন্তু দেশের সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার স্বার্থে কঠিন সিদ্ধাম্ত নিতে তিনি পিছপা নন বলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাগবাজারের বোসপাড়া লেনে ভগিনী নিবেদিতার স্মৃতিজড়িত পুরনো বাড়িটি সদ্য কোটি টাকা দিয়ে অধিগ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ওই বাড়ির মালিকের সঙ্গে যাবতীয় বিসম্বাদের নিষ্পত্তিও হয়ে গিয়েছে আদালতে। এর ক’দিনের মধ্যেই শুক্রবার সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণ সারদা মিশনকে ঐতিহাসিক বাড়িটি উৎসর্গ করল রাজ্য সরকার। বাড়ি অধিগ্রহণের লড়াইয়ের কথা শুনিয়ে মমতা এ দিন বলেন, “আমি খুব নরম মনের মানুষ। মানুষের ক্ষতি করে জমি অধিগ্রহণ করি না। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের মতো রাফ অ্যান্ড টাফ। দরকারে টাফ ডিসিশন নিতে পিছিয়ে আসি না।” এই প্রসঙ্গেই তাঁর ব্যাখ্যা, “ঠাকুর-মা-স্বামীজি-রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-নেতাজির মতো মনীষীদের ক্ষেত্রে আমি কোনও আপস করি না।” |
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ এ দিনও মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই রাজ্যে ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লবে’র আবহ সৃষ্টি হওয়ার কথা বলছিলেন। স্বামীজির স্মারকে ভরপুর ট্রাম সাজানোর জন্য মমতার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। নিবেদিতার বাড়ির নথি ও সরকারের তরফে উৎসর্গপত্র রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের সাধারণ সম্পাদক প্রব্রাজিকা অমলপ্রাণার হাতে তুলে দেওয়ার পরে মমতা তৃপ্ত ভঙ্গিতে বলেছেন, “দেশের সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার জন্য ছোট একটা কাজ করতে পেরেছি।” |
১৯১০ সালে নিবেদিতার প্রয়াণের সময় থেকেই বেহাত বাড়িটি রামকৃষ্ণ মিশন ও সারদা মঠের কাছে একটি কষ্টের জায়গা ছিল বলেও এ দিন মন্তব্য করেন স্বামী সুহিতানন্দ। কেন্দ্র বা রাজ্যে কোনও সরকার এত দিন ওই বাড়িটি উদ্ধারে সফল হয়নি। প্রব্রাজিকা অমলপ্রাণাও ‘জাতির সম্পদ’ উদ্ধারের জন্য মমতার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সারদাদেবী, স্বামীজি থেকে রবীন্দ্রনাথ বা বিশ শতকের স্বাধীনতা-সংগ্রামীরা, তৎকালীন ভারতের শিল্প-সংস্কৃতি জগতের পুরোধারা অনেকেই নিবেদিতার সঙ্গে দেখা করতে ওই বাড়িতে এসেছেন। মানুষকে এই ইতিহাস বিষয়ে সচেতন করে বাড়িটি পুনরুজ্জীবিত করতে সারদা মিশন কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর বলেও এ দিন জানিয়েছেন প্রব্রাজিকা অমলপ্রাণা। |