অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
নিরাশ্রয় বাসিন্দাদের বাড়ি তৈরি করতে রাজ্য সরকারের ‘অধিকার’ প্রকল্প শুরু হয়েছে জলপাইগুড়ির ফুলবাড়ি-ডাবগ্রাম, রাজগঞ্জ ও ফালাকাটা বিধানসভা এলাকায়। সরকারের ঘোষণা করা নতুন এই প্রকল্পে প্রতিটি বিধানসভা এলাকার বাছাই করা ২০০ জন প্রাপককে বাড়ি তৈরি করার জন্য দুই দফায় প্রায় ৯১ হাজার টাকার চেক দেওয়া হবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১৩ মার্চ মুখ্যমন্ত্রীর সম্ভাব্য জলপাইগুড়ি সফরে এই প্রকল্পের কয়েকজন প্রাপককে চেক তুলে দিয়ে প্রকল্পের প্রতীকী সূচনা করা হবে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে, মুখ্যমন্ত্রী জলপাইগুড়ি জেলা সফরের আগেই শুরু হয়েছে বির্তক। যে তিনটি বিধানসভা এলাকাকে অধিকার প্রকল্পের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, তার সবকটিই তৃণমূলের দখলে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব জলপাইগুড়ি জেলার ফুলবাড়ি-ডাবগ্রাম বিধানসভা থেকে নির্বাচিত, বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান খগেশ্বর রায়ের বিধানসভা এলাকা রাজগঞ্জ এবং ফালাকাটার বিধায়ক তৃণমূলের অনিল অধিকারী।
জেলার ১২টি বিধানসভার মধ্যে বিরোধী তথা কংগ্রেস ও বাম বিধায়কদের এলাকাগুলি প্রকল্পে বাদ পড়ায় রাজ্যের বিরুদ্ধে ‘আমরা ওরা’ বিভাজনের অভিযোগ তুলেছেন বাম ও কংগ্রেস বিধায়করা। তাঁদের অভিযোগ। জেলার অন্য এলাকা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র এই তিনটি বিধানসভা কেন? পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এই প্রকল্প কোন এলাকায় চালু করা হবে তা স্থির করার জন্য মন্ত্রী-সহ একটি উচ্চপদস্থ কমিটি তৈরি হয়েছে। সেই কমিটিই জেলার ৩ বিধানসভাকে বেছে নিয়েছে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। কাদের নাম থাকবে প্রকল্পে? সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধায়কদের সুপারিশের ভিত্তিতেই চেক বিলি করবে জেলা বা ব্লক প্রশাসন।
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের যৌথভাবে পরিচালিত ইন্দিরা আবাস যোজনাতে নিরাশ্রয়দের বাড়ি তৈরির জন্য টাকা দেওয়া হয়। অধিকার প্রকল্পের গঠনও ইন্দিরা আবাস যোজনার ঢঙেই। তবে ইন্দিরা আবাসের ক্ষেত্রে বিপিএল তালিকা সমীক্ষা করে কারা এই সুবিধে পাবেন তার জন্য একটি স্থায়ী তালিকা তৈরি করে রাখা হয়। আ অধিকার প্রকল্পে এলাকা ও প্রাপক নির্বাচনের ক্ষমতা রাখা হয়েছে, রাজ্য সরকারের কমিটি ও বিধায়কদের হাতে। জলপাইগুড়ির কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা বলেন, “জেলার অন্য বিধানসভা এলাকায় কি দুঃস্থ মানুষ নেই? আসল ঘটনা হল সেই এলাকার গরিব বাসিন্দারা তৃণমূলকে ভোট দেননি বলে তাদের প্রকল্প পাওয়ার অধিকার নেই! সরকারি কমিটি ইচ্ছেমত এলাকা বাছবে আর বিধায়করা ২০০ জনের নাম তৈরি করবেন এরকমটা হয় নাকি? এই সরকারের কোনও নীতিই নেই।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা ফুলবাড়ি ডাবগ্রামের বিধায়ক গৌতম দেব বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার ইন্দিরা আবাস যোজনার টাকা দিতে পারছে না, তাই রাজ্য সরকার দুঃস্থ মানুষদের বাড়ি তৈরি করতে নিজের তহবিল থেকে টাকা দিচ্ছে। আর কিছু লোক কিছু না বুঝেই বির্তক তৈরি করতে চাইছেন।” রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেন, “যে কোনও প্রকল্পই তো একটি এলাকা থেকে শুরু করতে হয়। জেলার যে তিন এলাকাকে বেছে নেওয়া হয়েছে সেখানে প্রকল্পের প্রয়োজন বেশি ছিল। আর বিধায়করা সুপারিশ করলেও ব্লকই তো যাচাই করে তালিকা তৈরি করবে। এর মধ্যে অসঙ্গতি কিছু নেই।” মালবাজারের সিপিএম বিধায়ক বুলুচিক বরাইক বলেন, “চা শ্রমিক অধ্যুষিত মালবাজারে এই প্রকল্পের সবচেয়ে প্রয়োজনীয়তা ছিল। অথচ মানুষের উন্নয়ন নিয়েও রাজ্য সরকারের বিভেদমুলক রাজনীতির কারণে তাঁরা বঞ্চিতই থাকলেন।” |