পাটের দাম চড়া, তবু বিকল্পের চিন্তায় চাষি
পাট চাষ নিয়ে রাজ্যের নীতিতে দেখা যাচ্ছে অস্পষ্টতা। উদ্যান পালন দফতর পাটের বদলে বিকল্প চাষে উৎসাহ দিচ্ছে চাষিদের। কৃষি দফতর মনে করছে, পাটের চাষ না কমিয়ে আরও উন্নত প্রযুক্তিতে পাট চাষ করতে হবে চাষিদের। আর পাট কমিশনারের দফতর বাজারের চাহিদা মেটাতে আরও বেশি পাট চাষ চাইছে।
পাট চাষের ক্ষতি পূরণে চাষিদের ফুল চাষে উৎসাহ দিচ্ছে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতর। সম্প্রতি বিভাগীয় মন্ত্রী সুব্রত সাহা এই খবর দিয়ে জানান, গত তিন বছর ধরে পাট চাষে মার খাচ্ছে রাজ্যের পাট চাষিরা। এই পরিস্থিতিতে চলতি বছরে নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বেশ কিছু অঞ্চলে পাটের বদলে ফুল চাষের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তাঁর দাবি, উৎপাদনের আয়-ব্যয়ের সম্ভাব্য হিসেবে পাটের বদলে ফুল চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন চাষিরাও। প্রাথমিক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, পাঁচ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে যে পরিমাণ আয় হয়, এক বিঘা জমিতে তুলনায় অনেক কম খরচে ফুল চাষ করে এক জন চাষি সেই পরিমাণ আয়ই করতে পারবেন।
সুব্রতবাবু জানান, প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। প্লাস্টিক ব্যাগের রমরমায় মার খাচ্ছে পাট চাষ। মন্ত্রী বলেন, “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের থেকে ফুল চাষ অনেক বেশি লাভজনক। তবে আন্তজার্তিক ফুলের বাজার ধরতে আমাদের ফুলকে পরিচ্ছন্ন এবং দূষণমুক্ত মোড়কে বাজারে আনতে হবে। এর জন্য মুম্বাইয়ের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব প্যাকেজিং’-এর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথাবার্তা হয়েছে। মূলত রজনীগন্ধা এবং গোলাপ চাষের উপরেই বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। ফুল সংরক্ষণের জন্য পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে আধুনিক ব্যবস্থায় সম্ৃদ্ধ হিমঘর তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে।”
সুব্রতবাবু জানিয়েছেন, ফুল চাষের জন্য ইতিমধ্যেই নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর এবং উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কিছু অঞ্চলের চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। উন্নতমানের ফুলচাষের জন্য খড়্গপুর আই আই টি-র বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বছর পাট চাষিদের ক্ষতি হয়েছে, এ কথা কিন্তু মানতে রাজি নন পাট কমিশনর সুব্রত গুপ্ত। তাঁর বক্তব্য, “এ বছর পাটের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল ২২৫০ টাকা। কিন্তু চাষিরা ২৬০০ - ২৭০০ টাকাতে খোলা বাজারে পাট বিক্রি করেছে।” বাজারে পাটের চাহিদাও যথেষ্ট। উৎপন্ন পাটের ৬৫-৭০ শতাংশ খাদ্যশস্যের ব্যাগের জন্য দরকার হয়। শস্যের উৎপাদন বেশি হওয়ায় ব্যাগের চাহিদাও বেড়েছে। তিনি বলেন, “চাহিদা মেটাতে পারছি না বলেই কেন্দ্র এখন খাবারের ব্যাগে প্লাস্টিক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশ পূরণ করতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ।”
তা হলে কি পাটের বিকল্প চাষ প্রয়োজন? পাট কমিশনারের বক্তব্য, একেবারেই নয়। তবে পাটের তন্তু ছাড়াও পাট গাছের বাকি অংশের কী করে বাজারে আনা যায়, তার জন্য গবেষণা প্রয়োজন। সেই কাজ শুরুও হয়েছে। “যে হেতু জঙ্গল কমে যাচ্ছে, তাই কাঠ কমে যাচ্ছে। পাটকাঠি ব্যবহার করে উঁচু মানে পার্টিকল বোর্ড তৈরি করা যায়। প্রযুক্তি তৈরি হয়ে গিয়েছে, আমরা বিনিয়োগকারী খুঁজছি।” তিনি জানালেন, পাটকাঠি থেকে কাগজ তৈরির কাজও শুরু হয়েছে ক্ষুদ্র শিল্পের অধীনে। সেই সঙ্গে, পাটের ব্যাগ রফতানিকে কয়েক গুণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
কিন্তু কী বলছে কৃষি দফতর? কৃষি কর্তারা কি পাটের বিকল্প চাষকে উৎসাহ দেবেন? কৃষি সচিব সুব্রত বিশ্বাস বলেন, “যেখানে পাট চাষ হয়, সেই জমিতে, সেই সময়ে অন্য চাষ হতে পারে না। তাই বিকল্প হতেই পারে না।” পাট নিয়ে রাজ্য সরকারের নীতি ব্যাখ্যা করে কৃষি সচিব বলেন, রাজ্যে উন্নত মানের পাট বীজ তৈরি করা, চাষের কাজে উন্নত মানের মেশিন ব্যবহারের প্রচলন, চাষিদের উৎপাদনের খরচ কমানো, এগুলোই রাজ্য সরকারের কাছে প্রধান। তবে সহায়ক মূল্যের বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গীর তফাত রয়েছে। কেন্দ্র মনে করে, সহায়ক মূল্য বাড়ালে কাঁচা পাটের দাম বাড়বে, তাতে শিল্পের ক্ষতি হবে। কিন্তু রাজ্যের বক্তব্য, চাষিই যদি না বাঁচে তা হলে শিল্প বাঁচবে কী করে? তুফানগঞ্জের পাট চাষি লালমোহন দাস বলেন, “পাটচাষে শ্রমিক সমস্যা বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা নিজেরা মাঠে কাজ করতে পারবে, তারাই কেবল কিছুটা জমি চাষ করবে। পাটকাঠির জন্য। কোচবিহারে এ বছর ভুট্টা চাষ দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। কারণ তাতে শ্রম লাগে কম।” যদিও দাম এখন চড়া, ৩২০০ টাকা কুইন্টাল, কিন্তু পাট এখন চাষির ঘর থেকে ফড়ের ঘরে ঢুকে গিয়েছে। চাষির লাভ কই? তাই লালমোহনবাবুর বক্তব্য, এ রাজ্যে পাট চাষ কমার সম্ভাবনাই বেশি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.