|
|
|
|
ভোট আসে, ভোট যায়, উদ্বাস্তুরা সেই তিমিরে |
দেবমাল্য বাগচি • হলদিয়া |
রাজ্যে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু শিল্পশহর হলদিয়ার উদ্বাস্তু সমস্যা রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরে। ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলো পুনর্বাসনের আশ্বাস দেয় নিয়ম করে। ভোটের পর আর সে কথা রাখার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে না কেউ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের আনাচে-কানাচে গজিয়ে ওঠা বস্তিতে কোনও রকমে দিনযাপনটাই তাই ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছেন জমিহারারা।
বন্দর কেন্দ্রিক শিল্পশহর হলদিয়ার জন্মলগ্ন থেকেই রয়েছে উদ্বাস্তু সমস্যা। বন্দর-শিল্পের জন্য জমিহারা ও ভূমিহীন অনেক পরিবারেরই পুনর্বাসন হয়নি এখনও। বস্তিবাসীদের মধ্যে এই উদ্বাস্তুর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্য ও আশপাশের জেলা থেকে আসা শ্রমিকেরাও আছেন কিছু। শিল্পশহরের রানিচক, চিরঞ্জীবপুর, পরামানন্দচক, বিষ্ণুরামচক, রাজারচক, সিটিসেন্টার-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা সারি সারি ঝুপড়ি-ঘরে ভরে রয়েছে। বেশ কিছু পরিবার পুনর্বাসনের দাবিতে বন্দরের অতিরিক্ত জমিতে ঝুপড়ি গড়ে থেকে গিয়েছেন। চিরঞ্জীবপুর, রানিচকেই প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ রেল লাইনের ধারে আস্তানা গড়েছেন। ওই এলাকার বস্তিবাসী শেখ সানোয়ান আলি, শেখ সইদুলদের অভিযোগ, “ভোটের আগে অনেকই প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে হয় না কিছুই। আগে বন্দরের জমিতে থাকতাম। রেনুকা সুগার হতে উঠে এসে লক্ষ্মণ শেঠদের কথায় এখানে বসেছিলাম। এখনও পুনর্বাসন হল না। গরীবের কেউ নেই।” একই অবস্থা আইওসি সংলগ্ন ধান্যঘাটা, পরমানন্দচকের ঝুপড়িবাসীদের। ওই এলাকার আনোয়ার খানের বক্তব্য, “আগে পুনর্বাসনের অনেক কথাই শুনতাম। কেউ কথা রাখেনি। এভাবে কি বাঁচা যায়?”
অবস্থা আরও খারাপ টাউনশিপের অদূরে বিষ্ণুরামচক, সাউতানচকের বস্তিতে। শিল্পশহর গড়ে ওঠার আগে থেকেই ওই দু’টি এলাকায় খানিকটা রায়ত জায়গা ও বন্দরের অধিগৃহীত জায়গায় বাস করেন প্রায় ৫০০টি পরিবার। বন্দরের দাবি, ওই জমি বন্দরেরই। সেই নিয়ে চলছে মামলা। যদিও অধিকাংশ বাসিন্দাই পুরসভার গৃহ-কর দেন। কিন্তু, এলাকায় বিদ্যুদয়ন থেকে পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত হয়নি এখনও। বিষ্ণুরামচকের বাসিন্দা প্রবোধ মণ্ডলের অভিযোগ, “আমরা এখানে দীর্ঘদিন আছি। বাস্তুজমি নিয়ে বন্দরের সঙ্গে মামলা চলছে। আমাদের পুনর্বাসন-সহ অন্যান্য ক্ষতিপূরণ না দিলে এখান থেকে উঠব না।” সাউতানচকের দীনেশ মণ্ডলের কথায়, “জানি না কতদিন এই অবস্থায় পড়ে থাকতে হবে। এইচডিএ বা পুরসভা কারও হেলদোলও নেই।”
উদ্বাস্তুদের কথা যে একেবারেই ভাবা হয়নি এমনটা নয়। পুরসভা এবং এইচডিএ উদ্বাস্তুদের জন্য নিবেদিতা ১ ও ২, ক্ষুদিরামনগর, গাঁধীনগর, শ্রীকৃষ্ণপুর, রঘুনাথচক-সহ বেশ কিছু কলোনি গড়ে বসবাসের ব্যবস্থা করেছে। দুর্গাচকেও বন্দরের উদ্বাস্তুদের জন্য কলোনি গড়া হয়েছিল। তবে জমিহারারা সকলেই পুনর্বাসন পাননি বলে অভিযোগ। পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডাশেঠের বক্তব্য, “শিল্পশহরে বস্তি সমস্যা থাকবেই। আমরা সাধ্য অনুযায়ী কলোনি গড়ে ভূমিহীন নাগরিকদের পুনর্বাসন দিয়েছি।” পুনর্বাসনের বিষয়টি দেখভালের জন্য অতিরিক্ত জেলাশাসককে চেয়ারম্যান করে ‘হলদিয়া পুনর্বাসন উপদেষ্টা কমিটি’ গড়েছিল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি সেই অতিরিক্ত জেলাশাসক পদেরই অবলুপ্তি ঘটিয়েছে তৃণমূল সরকার। এই পরিস্থিতিতে পুনর্বাসন প্রকল্প আরও অন্ধকারে। এইচডিএ-র সিইও পি উলগানাথন বলেন, “পুনর্বাসন কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা অধিকাংশ জমিদাতাকেই পুনর্বাসন দিয়েছি। এখনও কেউ বাকি রয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। আবেদন জানালে আমরা দেখব।” |
|
|
|
|
|