|
|
|
|
গোড়ায় গলদ, গীতাঞ্জলি প্রকল্পে আটকে গেল গরিবদের বাড়ির কাজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পরিকল্পনা এক রকম, খরচ ধরা হয়েছে অন্য রকম!
ফলে, বেশির ভাগ জায়গাতেই দরপত্র আহ্বান করা হলেও সাড়া মিলছে না। পরিণাম, গরিবদের জন্য বাড়ি তৈরির প্রকল্প ‘গীতাঞ্জলি’র বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে।
কী রয়েছে পরিকল্পনায়?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে দু’টি ঘর ও বারান্দা-সহ বাড়ি বানাতে হবে। তার পাশে একটি টয়লেট ব্লকও করতে হবে। সেই মতো খরচের হিসাব তৈরি করার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে খরচের হিসাবের সময় কখনও আস্ত টয়লেটটাই নেই, কখনওবা খরচ ধরা নেই লিঙটনের জন্য প্রয়োজনীয় রড, জানার গ্রিল বা দরজা জানালার জন্য শেকল, আংটা বা কব্জারও। এগুলির জন্য বেশি খরচ হয়তো নেই। কিন্তু টয়লেটের জন্য তো বড় মাপের খরচ রয়েছে। বাড়ি তৈরির সময় উপভোক্তা তো আবাসন দফতরের তৈরি করে দেওয়া ‘প্ল্যান’ দেখেই বাড়ি মিলিয়ে নেবেন। তখন কী হবে? সেই সংশয় থেকেই ঠিকাদারেরা কাজ নিতে রাজি হচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থানুকূল্যে গরিব মানুষদের বাড়ি তৈরির নানা প্রকল্প রয়েছে। তার টাকা সরাসরি রাজ্য সরকারের কাছে আসে এবং সরকার নিজেদের পরিকল্পনা মতো বাড়ি তৈরি করে। এ বার রাজ্য সরকার বাড়ি তৈরির জন্য ‘গীতাঞ্জলি’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে। ৬ হাজার টাকা বা তার কম মাসিক আয় যাঁদের তাঁদেরই এই প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। এর জন্য বিপিএল তালিকায় নাম থাকতেই হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের নভেম্বর মাসেই এই প্রকল্প মঞ্জুর হয়ে যায়। ডিসেম্বর মাসেই অর্থ পেয়ে যায় প্রশাসন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা এই প্রকল্পে ২৪৬০টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন পেয়েছে। কী ভাবে বাড়ি তৈরি করতে হবে তার ‘প্ল্যান’ ও ‘এস্টিমেট’ তৈরি করে প্রতিটি জেলাতেই পাঠিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের আবাসন দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার। সেই পরিকল্পনায় বাড়ি তৈরির খরচ ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা। কিন্তু ওই টাকায় বাড়ি তৈরি সম্ভব নয় বলে বেশির ভাগ ঠিকাদারই দরপত্রে যোগদানে রাজি হচ্ছেন না বলে অভিযোগ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কয়েকটি ব্লকে ঠিকাদারদের বুঝিয়ে রাজি করানো গেলেও অনেকগুলি ব্লকে একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করা হলেও সাড়া মেলেনি।
তাহলে কয়েকটি ব্লকে এটা কী ভাবে সম্ভব হল?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠিকাদারদের বোঝানো হয়েছে টয়লেট না করলেও চলবে। পরবর্তী সময়ে অন্য কোনও প্রকল্পে তাঁদের টয়লেট করে দেওয়া হবে। এক ঠিকাদারের কথায়, “টয়লেট তৈরি না করলেও বরাদ্দ টাকায় বাড়ি তৈরি সম্ভব নয়। প্রশাসন মুখে বলছে টয়লেট না করলেও চলবে। কিন্তু কাজ শেষে উপভোক্তারা যদি প্ল্যান দেখে তাঁদের টয়লেট কোথায় জানতে চাইলে আমরা পালানোর পথ পাব না। টয়লেট না করার কথা প্রশাসন লিখিত ভাবে জানালে এই সমস্যা থাকত না।”
প্রশ্ন উঠেছে কী ভাবে আবাসন দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার এই ধরনের ভুল করলেন? জেলা প্রশাসনই বা ‘প্ল্যান’ পরিবর্তন করছে না কেন?
জেলার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “যেহেতু একটি দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের তৈরি করা প্ল্যান, তাই জেলার কোনও এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তাতে মন্তব্য করতে বা পরিবর্তন-পরিমার্জন করার ঝুঁকি নিচ্ছেন না।” তিনি জানান, “কলকাতায় মুখ্য সচিবের বৈঠকে মৌখিক ভাবে এই সমস্যার কথা বলা হয়েছে। তার পরও প্ল্যান পরিবর্তনের কোনও উদ্যোগ দেখা না যাওয়ায় এ ভাবেই কাজ করার জন্য ব্লকস্তরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাতে কিছুটা যদি কাজ এগোয়।” তাঁর আশঙ্কা, “টাকা খরচ না করতে পারলেও তো বিপাকে পড়তে হবে।”
এই ভাবেই গীতাঞ্জলি প্রকল্প নিয়ে সাপের ছুঁচো গেলার মতো দশা হয়েছে জেলাগুলির। |
|
|
 |
|
|