আট দিন। এই আট দিনের মধ্যে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া একটা দল লড়াইয়ে ফিরতে পারে কি না, এই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট মহলে। কিন্তু আট দিন কেন? হায়দরাবাদ ও মোহালি টেস্টের মাঝখানে যে এই সময়টাই পাচ্ছেন মাইকেল ক্লার্ক ও তাঁর দলের ক্রিকেটাররা। ইয়ান চ্যাপেল, ডিন জোন্সের মতো অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তনরা অবশ্য বলছেন, লড়াইয়ে ফেরা সম্ভব, যদি দলটা ঠিকঠাক বাছা হয়। কিন্তু সেটাই তো হচ্ছে না। তা হলে কি অস্ট্রেলিয়া মোহালিতে লড়াইয়ে ফিরতে পারবে না? না, এই নিয়ে বাজি ধরে কেউ গাল বাড়িয়ে চড় খেতে রাজি নন। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং নিয়ে সারা ক্রিকেট দুনিয়াই যা ছি-ছি করছে, তাতে ক্লার্করা বেশ চাপে।
এই নিন্দা-মন্দয় নতুন সংযোজন ঠোঁটকাটা ইয়ান চ্যাপেলের মন্তব্য। ‘দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ’-এ তিনি লিখেছেন, “শেন ওয়াটসন ওপেনার হিসেবে না নামায় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডার ‘কুকুরের প্রাতরাশে’ পরিণত হয়েছে। ব্যাটিংয়ের এই দুরবস্থায় ওয়াটসন ও ডেভিড ওয়ার্নারকে ওপেনারের দায়িত্ব দেওয়াটা সবচেয়ে সহজ ও আবশ্যিক সমাধান।”
অধিনায়ক ক্লার্ক যতই বলুন, “হাল ছেড়ে না দেওয়াটাই আমাদের সংস্কৃতি”, কিন্তু যখন তিনি জয়ে ফেরার নীল নকশা তৈরি করছেন, তখন সেই নকশার অন্যতম প্রধান কুশীলব উইকেটকিপার ম্যাথু ওয়েডই হঠাৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়লেন। |
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপে ক্লার্কের পরই যিনি এই সিরিজে ফর্মের বিচারে সবচেয়ে শক্ত খুঁটি, সেই ওয়েডের ডান পায়ের গোড়ালিতে চোট লাগল চণ্ডীগড়ে টিম হোটেলের কাছেই এক স্কুলে পিটার সিডল ও দলের কয়েক জন সাপোর্ট স্টাফের সঙ্গে বাস্কেটবল খেলতে গিয়ে। নিছকই মজার জন্য খেলতে গিয়েছিলেন ওয়েড, সিডলরা। তা যে এ ভাবে ক্ষতিকর হয়ে উঠবে, সে আর কে ভেবেছিল? তাঁর ফুলে ওঠা গোড়ালির স্ক্যান করা হয়েছে। সেটা মারাত্মক কি না, তা বোঝার আগেই প্রাক্তন উইকেটরক্ষক ব্র্যাড হাডিনকে ফোন করে অবিলম্বে ভারতে আসার বিমানে ওঠার নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচকরা। মার্শ-গিলক্রিস্ট-হিলির দেশে উইকেটকিপারের এমনই আকাল যে ১৪ মাস আগে শেষ টেস্ট খেলা এক জনকে ভারতে এসে দেশের হয়ে মাঠে নামানোর ব্যবস্থা করতে হচ্ছে!
হায়দরাবাদ টেস্ট শুরুর আগের দিনই প্র্যাক্টিসের সময় ওয়েডের মুখে বল লেগে তাঁর গালের হাড়ে চিড় ধরে। প্রচুর বরফ দিয়ে চোট সামলে সেই টেস্টে খেলতে পেরেছিলেন ভিক্টোরিয়ার এই ক্রিকেটার। কিন্তু এ বার এই চোট নিয়ে মাঠে নামতে পারবেন কি না, এটাই এখন অস্ট্রেলীয় শিবিরে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। রবিবার পিসিএ স্টেডিয়ামে চার ঘন্টার প্র্যাক্টিসের পর ওয়েডের সতীর্থ মোজেস এনরিকে অবশ্য বলেছেন, “ওর মনের জোর প্রচণ্ড। যদি ম্যাটির খেলার সামান্য সম্ভাবনা থাকে, তার মানেই জানবেন, ও খেলছে। আপাতত ওর প্র্যাক্টিসে নামা বারণ। তবে চোট ঠিক কতটা গুরুতর, সেটা অবশ্য জানি না। সোমবার জানা যাবে হয়তো।”
নাথান লিয়ঁকে হায়দরাবাদে বাদ দেওয়া নিয়ে তো কয়েক দিন ধরেই বেশ তর্ক-বিতর্ক চলছে অজি মিডিয়ায়। এ বার আর এক জনকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। তিনি স্টিভ রিক্সন, অস্ট্রেলিয়া দলের স্পিনারদের কোচ। এক জন প্রাক্তন উইকেটকিপার কী করে দলের স্পিনারদের কোচ হন এবং এই ভূমিকায় কোনও প্রাক্তন বিশেষজ্ঞ স্পিনার নেই, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। ফিল্ডিং কোচ হয়ে দলে ঢোকা রিক্সনের দায়িত্ব বাড়িয়ে স্পিনারদেরও তাঁর অধীনে রাখা হয়েছে। অথচ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া-র অ্যাকাডেমির স্পিন উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল। এই ব্যাপারে অবশ্য সায় রয়েছে হেড কোচ মিকি আর্থারের। তাঁর মতে, “স্টিভ তো ভালই কাজ করছে। দেখা যাক এই সিরিজের শেষ পর্যন্ত ওর পারফরম্যান্স কী রকম হয়। যদি স্পিনাররা আদৌও ভাল কিছু করতে না পারে, তা হলে ওর ব্যাপারে ভাবতে হবে।” মোহালিতে নাথান লিয়ঁকে ফেরানো হবে কি না, তার কোনও ঠিক নেই অবশ্য। কারণ, এখানকার উইকেটে পেস বোলাররা ও ব্যাটসম্যানরাই সাধারণত বেশি সাহায্য পেয়ে থাকেন। তাই লিয়ঁকে দলে না দেখতে পেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। |