নতুন জল প্রকল্পের জন্য ৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে খড়্গপুর পুর এলাকায়। তবে বরাদ্দ অর্থে কী ভাবে কাজ এগোচ্ছে, সে নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে। কাজের ভবিষ্যৎ কী, কবেই বা কাজ শেষ হবে, সে প্রশ্নেরও সদুত্তর মিলছে না। প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস কাউন্সিলর রবিশঙ্কর পাণ্ডের মতে, “ইতিমধ্যে জল-সঙ্কট শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী দিনে শহরবাসীকে জল সরবরাহ করা যাবে কিনা, সেটা বড় প্রশ্ন!” তাঁর কথায়, “নতুন প্রকল্পের কাজ সে ভাবে এগোচ্ছে না। শুধু পাইপ কেনা হয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষের উচিত, শুধুমাত্র জল সমস্যা নিয়ে একটা বোর্ড মিটিং ডাকা।” জবাবে খড়্গপুর পুরসভার ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান তুষার চৌধুরীর বক্তব্য, “প্রকল্পের কাজ ঠিক ভাবেই এগোচ্ছে। পাইপ কেনা ছাড়াও নতুন জলাধার তৈরি শুরু হয়েছে। কিছু এলাকায় জলের সমস্যা রয়েছে। সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপও করা হচ্ছে।” |
খড়্গপুর আইআইটির সামনে চলছে জলাধার তৈরির কাজ।—নিজস্ব চিত্র। |
খড়্গপরে জলের সমস্যা নতুন নয়। গরম পড়লেই জলকষ্ট তীব্র হয়। ট্যাপকলগুলোর মুখে বাসিন্দাদের দীর্ঘ লাইন পড়ে। এবারও তাই হচ্ছে। শহরের বুলবুলচটি, কৌশল্যা, পাঁচবেড়িয়া-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় জলের জন্য দীর্ঘক্ষন কলের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়াতে হয় বাসিন্দাদের। রেলশহরের ঝোরিয়াতে বড় জলাধার রয়েছে। কংসাবতী থেকে জল তুলে এখানে পাঠানো হয়। পরে তা অন্য জলাধারে যায়। সেখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে শহরের সর্বত্র জল পৌঁছয়। বড় জলাধারটির জল ধারণ ক্ষমতা ৭ মিলিয়ন গ্যালন। শহরে বহু ভাষাভাষি মানুষের বাস। জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৩০ হাজার। নতুন নতুন বসতিও তৈরি হচ্ছে। বাড়ছে জনসংখ্যা। জলের চাহিদাও বাড়ছে। শহরের মাঝখানে রয়েছে রেলের এলাকা। তাকে চক্রাকারে ঘিরে রয়েছে পুর-এলাকা। এখন রেল এলাকাও পুরসভার মধ্যে ঢুকেছে।
অভিযোগ, পুরসভা বাড়ি বাড়ি যে নলবাহী পানীয় জল সরবরাহ করে, নলের মুখে পাইপ লাগিয়ে পাম্প মেশিনের সাহায্যে অনেকে সেই জল জলাধারে তোলেন। এ ভাবেই চলে ‘জল চুরি’। এর ফলে শহরের একাংশে পর্যাপ্ত পানীয় জল পৌঁছয় না। সময় মতো জল না পেয়ে বাসিন্দাদের সমস্যার মুখে পড়তে হয়। সমস্যার কথা মেনে জল দফতরের ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান পারিষদ সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ ভাবে জল যাতে চুরি না যায়, সে জন্য নজরদারি চলে। বিভিন্ন এলাকায় জলের অপচয়ও হয়। অপচয় না- হলে জলের সমস্যা কমত।” সুশান্তবাবুরও দাবি, রেলশহরে নতুন জল প্রকল্পের কাজ ঠিক ভাবেই এগোচ্ছে। তাঁর কথায়, “ইতিমধ্যে পাইপ কেনা হয়েছে। তুরিপাড়ায় নতুন জলাধার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সময়ের মধ্যেই এ কাজ শেষের সব রকম চেষ্টা চলছে।”
তবে এ নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডকে বিঁধতে ছাড়ছে না কংগ্রেস। তাদের দাবি, শুরুতে প্রায় ১৪ কোটি টাকার পাইপই কেনা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, পুর-কর্তৃপক্ষের মনোভাব ঠিক কী। রবিশঙ্করবাবু বলেন, “প্রকল্পের পরিকল্পনা আমাদের আমলেই তৈরি হয়েছিল। ভেবেছিলাম, দ্রুত গতিতে কাজ হবে। শহরে জলের সমস্যা মিটবে। কিন্তু, কোথায় কী!” সময়ের মধ্যে কাজ শেষের দাবি জানিয়েছে বিরোধীরাও। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম কাউন্সিলর অনিতবরণ মণ্ডলের বক্তব্য, “নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। তবে কাজের গতি আরও বাড়াতে হবে।” তাঁর কথায়, “প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। শহরের কয়েকটি এলাকায় জলাধার তৈরি হবে। কংসাবতী থেকে জল তুলে ওই জলাধারে পাঠানো হবে। তারপর শহরে সরবরাহ করা হবে। কাজের গতি আরও বাড়াতে হবে।” অন্যদিকে, ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান বলেন, “নতুন প্রকল্পের কাজের উপর নজরদারি রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তা আরও বাড়ানো হবে।” |