আপত্তি উঠছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। শেষমেশ লোকালয়ের মধ্যে দিয়ে হাইটেনশন তার লাগানোতে নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে সিঙ্গুরে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ঠিকাদারকে কাজ করতে দিলেন না গ্রামবাসীরা। রবিবার তাঁদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে যন্ত্রপাতি নিয়ে ফিরে যান ঠিকাদারের কর্মীরা। সিঙ্গুর এবং সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুতের মানোন্নয়নের জন্যই ওই তার লাগানোর কথা।
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, সিঙ্গুরে মূলত দু’টি খাল লাগোয়া সেচ দফতরের জমিতে ‘মোনোপোল’ (একটিই খুঁটি, যাতে কম জমি লাগে) বসিয়ে ওই তার নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ দিনের ঘটনা নিয়ে ওই সংস্থার এক কর্তা বলেন, “স্থানীয় ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয়েছে। আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি।”
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, টাটা প্রকল্প এলাকার মধ্যেই ১৬ একর জমিতে বিদ্যুতের একটি সাব-স্টেশন তৈরি হয়েছে সিঙ্গুর এবং সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুতের মানোন্নয়নের জন্য। সে জন্যই হাইটেনশন তার লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রবিবার কেব্ল এবং অন্য যন্ত্রপাতি নিয়ে ঠিকাদারের লোকজন কাজ শুরু করতেই রতনপুর, কোলেপাড়া এবং আশপাশের গ্রামের মানুষ রুখে দাঁড়ান।
গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, লোকালয় দিয়ে ওই তার নিয়ে যাওয়া হলে যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ক্ষতি হতে পারে কৃষিজমির। এই আশঙ্কায় কিছু দিন ধরেই গ্রামবাসীরা গণস্বাক্ষরও সংগ্রহ করছেন। গোপালনগরের বাসিন্দা অমিতা বাগের প্রশ্ন, “যে জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে, সেই জমিতে গড়ে ওঠা সাব-স্টেশনের জন্য কাজ করার অনুমতি মিলল কী করে?” গোপালনগরেরই বুদ্ধদেব পাকিরা বা রতনপুরের কার্তিক জ্যোতির মতো অনেকেরই আশঙ্কা, লোকালয় দিয়ে ওই তার নিয়ে যাওয়া হলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। বহু পুরনো গাছ কাটা পড়বে এবং তার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। গণস্বাক্ষর সংবলিত স্মারকলিপি প্রশাসনের কর্তাদের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর দাবি, প্রথমে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর দিয়ে ওই তার নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে তা নাকচ করে দেন। এর পরেই কোলেপাড়া, রতনপুরের মতো ঘনবসতি এলাকা দিয়ে ওই তার বসানোর প্রস্তুতি নেয় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। এ ক্ষেত্রে, গ্রামবাসীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি এবং তাঁদের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়নি বলে অভিযোগ। |