|
|
|
|
জঙ্গি এখন বিধায়ক |
পরিবর্তিত দায়িত্বই চ্যালেঞ্জ জুলিয়াসের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
যখন জঙ্গলের ঘাঁটি থেকে রাইফেলের নল তাক করে থাকতেন পুলিশ-প্রশাসনের দিকে, তখন স্বপ্নেও কি ভেবেছিলেন একদিন সেই প্রশাসনেরই একজন হিসাবে, ভারতের সংবিধান ‘অক্ষরে-অক্ষরে’ মেনে চলার শপথ নেবেন? “একেবারেই না”। বলছিলেন সদ্য শপথ নেওয়া মেঘালয়ের নির্দল বিধায়ক তথা জঙ্গি সংগঠন এইচএনএলসি-র প্রাক্তন প্রধান জুলিয়াস কে ডোরফাং। “ভারতীয় সংবিধান ও আইন ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বস্ত থাকব, দেশ ও রাজ্যের অখণ্ডতা অক্ষুণ্ণ রাখব-শব্দগুলো যখন উচ্চারণ করছিলাম, তখন অন্য একরকমের রোমাঞ্চ হচ্ছিল। ভাবছিলাম এ কোন আমি? আমিই কী ভারতের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হিন্নেইত্রেপ রাজ্য গঠনের জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া জুলিয়াস?” |
|
হাস্যমুখে জুলিয়াস কে ডোরফাং। —নিজস্ব চিত্র |
মাওহাটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্দল হিসাবে জিতে বিধানসভায় আসা প্রাক্তন জঙ্গি নেতা জুলিয়াস ডোরফাং, অন্য ৫৮ জন বিধায়কের সঙ্গে নবম মেঘালয় বিধানসভার সদস্য হিসাবে শপথ নিয়েছেন। পৃথক গারোল্যান্ডের জন্য সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যাওয়া গারো জঙ্গি সংগঠন জিএনএলএ-র চেয়ারম্যান চ্যাম্পিয়ন সাংমাও এইবার ভোটে দাঁড়াবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু, শেষ অবধি নির্বাচনে লড়ার অনুমতি পাননি কারাবন্দি চ্যাম্পিয়ন। তার উপর, তাঁর সংগঠন এখনও সেনাধ্যক্ষ সোহন ডি শিরার নেতৃত্বে সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। জিএনএলএ এবং উত্তর-পূর্বের বাকি জঙ্গি নেতাদের উদ্দেশে জুলিয়াসের বার্তা, “আড়াল থেকে লড়াই করে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা সহজ। তার চেয়ে সামনে এসে, দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে, আইনের পথে মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই চালানো বেশি চ্যালেঞ্জিং।”
১৯৯২ সাল থেকে, খাসি জঙ্গি সংগঠন হিন্নেইত্রেপ ন্যাশনাল লিবারেশন কাউন্সিল-এর লড়াই শুরু। ঢাকা ও চট্টগ্রামে তাদের ঘাঁটি। ২০০৭ সালে, দলীয় মতানৈক্যের জেরে সভাপতি জুলিয়াস, সাধারণ সম্পাদক সি থ্যাংকিউ, সেনাধ্যক্ষ ববি মারউইনের মধ্যে বিভেদ শুরু হয়। জুলিয়াসকে হত্যার জন্য, ববি, বাছাই সদস্যদের বাংলাদেশে পাঠান। শিলং-এ, দুই পক্ষের লড়াইতে ববির পাঠানো পাঁচ জঙ্গি মারা যায়। এরপরেই, জুলিয়স আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেন। এইচএনএলসির একাংশ অবশ্য সেনাধ্যক্ষ ববি মারউইনের নেতৃত্বে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আত্মসমর্পণ করার পরে জামিন পান জুলিয়াস ও তাঁর চার সঙ্গী। তবে, গতবছর ক্লেরিয়েটে এক কয়লাখনি এলাকায় গা-জোয়ারি করার দায়ে জুলিয়াস ফের গ্রেফতার হয়েছিলেন। তারপর থেকে আর গুণ্ডামি নয়, জুলিয়াস রাজনৈতিক ভিত মজবুত করার দিকেই মন দেন।
জুলিয়াস বলেন, “জঙ্গলে থেকে মানুষের অভিশাপ কুড়িয়ে অনির্দিষ্ট লক্ষ্যের জন্য লড়াই চালানো আর, সকলের আর্শীবাদ নিয়ে মানুষের ভালমন্দর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ার ম্যধ্যে বিস্তর ফারাক।”
শপথ নেওয়ার পরে প্রাক্তন জঙ্গি নেতা জানিয়েছেন, সরকার চাইলে, এইচএনএলসির সংগ্রামপন্থীদের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে তিনি তৈরি। বিধায়ক হিসাবে তাঁর প্রথম কাজ হবে, বেকারত্ব দূর করা। তাঁর মতে, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর জঙ্গিদের চটজলদি অর্থের প্রলোভনে যুবকরা ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে। তা আটকাতে গেলে, তাদের পেশাগত শিক্ষা ও জীবিকার নিশ্চয়তা আশু প্রয়োজন। |
|
|
|
|
|