বাবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বিট্টির, প্রকাশ তদন্তে
বাবার সঙ্গে গত সাত বছরে কোনও যোগাযোগ ছিল না বলে প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে বীতিহোত্র মহান্তি ওরফে বিট্টি মহান্তি। কিন্তু কেরল পুলিশের তদন্তে উঠে আসছে অন্য তথ্য। জানা গিয়েছে, বিট্টির সঙ্গে তার বাবার শুধু যোগাযোগ ছিল তা-ই নয়, বাবা নাকি মাঝেমধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশ বা কেরলে গিয়ে বিট্টির সঙ্গে দেখা করে আসতেন। পুলিশের দাবি, বিট্টির সঙ্গে অন্তত তিন জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের যোগাযোগ ছিল।
২০০৬ সালে রাজস্থানের আলোয়ারে এক জার্মান মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনায় সাত বছরের কারাদণ্ড হয় বিট্টির। জেল
বিট্টি মহান্তি
থেকে প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার পরেই তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। বিট্টির বাবা বি বি মহান্তি আইপিএস অফিসার। তিনি তখন ওড়িশার হোমগার্ড এবং দমকলের ডিরেক্টর জেনারেল ছিলেন। যত বার ছেলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তত বারই তিনি জানিয়েছিলেন, ছেলের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ নেই তাঁর।
পুলিশের দাবি, জেরায় বিট্টি জানিয়েছে, প্যারোলে ছাড়া পাওয়ার পরেই অন্ধ্রপ্রদেশে পালিয়ে যায় সে। সেখানে রাঘব রাজন নাম ভাঁড়িয়ে থাকতে শুরু করে। পুলিশের নজর এড়াতে সেখানে অনেক বার ঠিকানাও বদল করে। এর পরে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে কেরালায় চলে আসে বিট্টি। এমবিএ পাশ করার পরে রীতিমতো পরীক্ষা দিয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ত্রিবাঙ্কুর-এ প্রবেশনারি অফিসার পদে চাকরি পায়। এই পুরো সময়ে বাবার সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ ছিল না বলেই দাবি বিট্টির।অন্ধ্রপ্রদেশে থাকাকালীন এক মহিলার মাধ্যমে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক রাম রাওয়ের সঙ্গে আলাপ হয়। রাম রাওয়ের দাবি, সত্য সাই বাবার ভক্ত ওই মহিলা নিজেকে রাঘবের বাবার পরিচিত বলে জানিয়েছিলেন।
রাজীব রাজন নামে এক ব্যক্তি নিজেকে রাঘবের বাবা হিসেবে পরিচয় দিয়ে রাওয়ের সঙ্গে আলাপও করেছিলেন। রাওকে জানিয়েছিলেন তিনি এক জন ব্যবসায়ী। কাজের সূত্রে তাঁকে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয়। রাও জানান, রাঘবকে দেখে ঘুণাক্ষরেও মনে হয়নি সে এক জন পলাতক আসামি। নিজেকে সে এক জন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেয়। তাকে দেখে অবসাদগ্রস্ত মনে হওয়ায় সাহায্যের জন্য একটা স্কুলে চাকরি জোগাড়ও করে দিয়েছিলেন রাও। থাকার জন্য কম ভাড়ার একটা বাড়িও খুঁজে দেন তিনি। মাঝে জন্ডিস হয়েছিল রাঘবের। বাবা কাছে না থাকায় তার চিকিৎসায় অনেক সাহায্য করেছিলেন রাও। পড়াশোনাতেও নাকি বেশ ভাল ছিল রাঘব। এমবিএ পাশ করে কিছু দিন একটা কলেজে লেকচারারের চাকরি নেন।
ব্যাঙ্কে চাকরি পাওয়ার পরে কেরলে চলে যায় বিট্টি। কিন্তু মাঝেমধ্যেই রাওয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসত সে। এক সহকর্মী নাকি তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। মেয়েটির বাবা এর জন্য রাঘবকে ফোন পর্যন্ত করেছিলেন। কিন্তু রাঘব বিয়ে করতে চায়নি। দিল্লি গণধর্ষণের ঘটনার পরে ধর্ষণে অভিযুক্ত এবং পলাতক অপরাধীদের নাম বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখাতে শুরু করে। তার মধ্যে প্রথমে ছিল বিট্টির নাম। টিভির পর্দায় বিট্টির ছবি দেখে সহকর্মীদের সন্দেহ হয়। পরে বেনামে একটা চিঠি পেয়ে পুলিশে খবর দেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
তবে প্রথমে পুলিশি জেরায় কিছুতেই নিজের প্রকৃত পরিচয় স্বীকার করতে রাজি হয়নি। জানিয়েছিল, বাবা দিল্লিতে থাকে। অসুস্থ। কিন্তু তার দাবির সপক্ষে কোনও প্রমাণই দেখাতে পারেনি সে। এর পরেই পুলিশের চাপের মুখে নিজের পরিচয় স্বীকার করে নেয় বিট্টি।
তবে এই ঘটনার পরে একটা প্রশ্নই পুলিশ মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে তা হল, কী ভাবে বিভিন্ন শংসাপত্র নকল করল বিট্টি। কারণ বিট্টির কাছ থেকে নকল পাসপোর্ট, কলেজের শংসাপত্র থেকে শুরু করে ভুয়ো ড্রাইভিং লাইসেন্স পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে। ব্যাঙ্কে চাকরি করতে যাওয়ার সময়ে সেই সব শংসাপত্র দেখেও কারও মনে সন্দেহ কেন হল না? আর কারও সাহায্য ছাড়া কী ভাবেই বা বিট্টি এই শংসাপত্র জোগাড় করতে পারল?
প্রসঙ্গত, আগামিকাল রাজস্থান পুলিশের কেরলে পৌঁছনোর কথা। তারা বিট্টিকে নিজেদের হেফাজতে রাখাতে চান। তাই তাঁরা সেখানে গিয়ে আবেদন জানাবেন।
অন্য দিকে ভুয়ো তথ্য দেখিয়ে সরকারি চাকরি করার অপরাধে কেরল পুলিশ বিট্টিকে রাজস্থান পুলিশের হাতে তুলে দিতে চাইবে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে। শুক্রবার কেরল পুলিশ বিট্টিকে গ্রেফতার করার পর আজ আদালতে তুললে তাকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.