মেলায় আগের মতো আর দোকানপাট বসে না। আসে না নাগরদোলাও। এক সময় গরুর গাড়ি করে বা সাইকেলে করে টানা সাতদিন ধরে পথ চলে দলে দলে মানুষ এই মেলায় যোগ দিতে আসতেন। কিন্তু সেই দৃশ্যও আজকাল আর চোখে পড়ে না। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে শিবচতুর্দশীতে বক্রেশ্বর শিব মন্দির সংলগ্ন এলাকার গ্রামীণ মেলার চরিত্র বদলেছে অনেকটাই। তবে বদল যতটুকুই আসুক, প্রথা মেনে প্রতি বছরই কিন্তু এই মেলা বসে।
রবিবার থেকে শুরু হওয়া এই মেলা তিনদিন ধরে চলবে। উদ্যোক্তা সেবাইত সমিতি। নগরায়নের ফলে উষ্ণপ্রস্রবন ও বক্রেশ্বর ধামকে ঘিরে বেশ কিছু স্থায়ী দোকানপাট আগেই গড়ে উঠেছে। এর ফলে একটা অসুবিধা হয়েছে। যে সব জায়গায় মেলা বসত সেই জায়গাগুলো ক্রমে সঙ্কীণর্র্ হয়ে পড়েছে। অসুবিধার মধ্যেও এ বারের মেলায় বেশ কিছু স্টল এসেছে। |
মন্দিরের বাইরে পসরা। রবিবার দয়াল সেনগুপ্তের তোলা ছবি। |
যদিও স্থায়ী ব্যবসায়ী সন্তোষ গড়াই বা মুর্শিদাবাদ থেকে আসা শাখা, শঙ্খের পসরা নিয়ে দোকান দেওয়া সুধীর মণ্ডলদের আক্ষেপ, “শুধু পুজো দেওয়ার ভিড় রয়েছে। আগের মতো আর কেনা-কাটা হয় না। মেলা সাত দিন চলার কথা থাকলেও তিনদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।” স্থানীয় গ্রামপ্রধান দিলীপ মালও বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকে এই মেলা দেখছি। আগে বহুদূরের গ্রাম থেকেও মানুষজন মেলায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে আসত। এখন সেটা অনেক কমে গেছে।”
মেলার আকর্ষণ কমলেও এই দিনটিতে শিব মন্দিরে পুজো দিতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান। এ বার সুদৃশ্য লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে মন্দির। মন্দিরের সেবাইত সমিতির তথ্য অনুযায়ী চতুর্দশীর আগের রাত থেকেই লাইন পড়ে। পুজো চলে পরদিন রাত গড়িয়ে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সঙ্গে চলছে স্থায়ী অস্থায়ী দোকানে কেনা কাটা। রবিবার সকালেই গিয়ে দেখা গেল, মন্দিরের বাইরে পূণ্যার্থীদের লম্বা লাইন। ভিড় সামলাতে ব্যস্ত দুবরাজপুর থানার পুলিশ। পুজো দিতে আসা এক পুণ্যার্থী ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রত্যেকবারই এখানে জল ঢালতে আসি। খুব ভাল লাগে। প্রতিবারের মত এবারও সুশৃঙ্খলভাবে জল ঢালতে পেরেছি।” এলাকার মানুষের পাশাপাশি বাইরে থেকেও বহু মানুষ এসেছেন। বাকুঁড়া থেকে আসা মায়া ঘোষের অভিজ্ঞতা, “প্রথমবার এলাম। ভাল লাগল। তবে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হল।” সেবাইত সমিতির সম্পাদক জয়ন্ত আচার্য ও প্রাক্তন সভাপতি বাবলু চক্রবর্তী-র কিন্তু দাবি, “শিবের মাথায় জল ঢালতে আসা মানুষের ঢল বাড়ছে প্রতি বছর।” |