তারাবাজি
বিপস বিপ বিপ

গুজব ১: বিপাশা বসু বছরে শুধুমাত্র একদিন ভাত খান। তাঁর জন্মদিনে।
গুজব ২: মানসিকতায় ঠিক তাঁর মায়ের মতোই বেশ রক্ষণশীল। আজও তাঁর পছন্দ একটি সম্পর্কে প্রথম যেন পুরুষটিই এসে প্রস্তাব দেন।
গুজব ৩: সিনেমার জন্য মেক আপ করার সময় না কি দু’শেড বেশি চাপা রং ব্যবহার করেন।


দেখা হয়েছিল হায়দরাবাদের মাঠে। সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের খেলা দেখতে এসেছিলেন। বেঙ্গল টাইগার্সের সঙ্গে মুম্বই হিরোজ-এর খেলা। জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এই তিনটে গুজব নিয়ে। বলেন প্রথম দু’টো ঠিক। তবে তৃতীয়টা একেবারেই মিথ্যে।
মাঠে অফুরন্ত এনার্জি তাঁর। অনেকেই এগিয়ে এসে বললেন, ‘আত্মা’ ছবির ট্রেলরগুলোতে তাঁকে নওয়াজউদ্দিনের সঙ্গে দেখতে বেশ অন্য রকম লাগছে। মৃদু হেসে বলেন, “নওয়াজ ছাড়া এই চরিত্রে কেউ অভিনয় করতে পারত না। আমাদের একসঙ্গে কাজ করাটার মধ্যে একটা চমক আছে। দু’জনকে একসঙ্গে এক সেকেন্ডের জন্যও মনে হবে না যে নওয়াজ ছাড়া ওই রোলটা অন্য কেউ করতে পারত,” বলেই এক গাল প্রাণখোলা হাসি।
সপ্তাহখানেক বাদে আবার বিপাশার সঙ্গে কথা। এবার টেলিফোনে। সেই একই রকম উচ্ছ্বাস তাঁর গলায়। তা আজকাল বিপাশা বসুর ‘আত্মা’ কীসে তৃপ্তি পায়? আর কী দেখেই বা মন ভারাক্রান্ত লাগে? “কাজের বিষয়ে বলতে হলে বলব যে, খারাপ লাগে যখন দেখি এমন কেউ সাফল্যের তুঙ্গে পৌঁছে গিয়েছেন যাঁর কাজ সম্পর্কে সেই প্যাশনটা নেই। হয়তো ডেসটিনি বা লাক বা অন্য কোনও মাধ্যমে সেই জায়গাতে পৌঁছেছেন। আর মন তৃপ্তি পায় যখন নিজে ভাল কাজ করি। যে কাজ আমাকে পরিতৃপ্তি দেয়। বারো বছর ধরে অভিনয় করছি। আমি কোনও দিন তো ভাবিনি যে অভিনয় করব। তাই যা করেছি, সেটা নিয়ে ভাবলে মনে হয় যে ঈশ্বরের আশীর্বাদ রয়েছে।”
তবে যে এই আগের বছরই বলছিলেন যে কেরিয়ারের একটা পর্বে অনেক সময় নষ্ট করে ফেলেছেন? বলেছিলেন অনুশোচনার কথা? দর্শকের সঙ্গে একটা সংযোগ, ভাল কাজের ইচ্ছে আর প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে কেরিয়ারের বাইরে অন্য কিছুকে প্রায়োরিটি দিয়েছিলেন? বলেছিলেন এ বার ‘লস্ট টাইম’ মেক আপ করতে হবে। “একটা সময় ছিল, যখন আমি নিজেকে কাজ থেকে দূরে সরিয়ে ফেলেছিলাম। আই হ্যাড কমপ্লিটলি শাট মাইসেল্ফ। কিন্তু এই নিয়ে বেশি ভাবা যায় না। মানুষই ভুল করে আর মানুষই সেই ভুল শুধরে নিয়ে এগিয়েও যেতে চায়,” বললেন বিপাশা।
তা জীবনের এত ওঠাপড়া থেকে কী শিখলেন তিনি? “নিজেকে প্রায়োরাটাইজ করতে হবে। বিশ্বাস করতে হবে যে অন্য সব কিছুই সেকেন্ড, থার্ড বা ফোর্থ। বুঝতে হবে কীসে নিজের আনন্দ। সেটা জানলে নিজেই ভাল থাকবেন। আর একমাত্র নিজে ভাল থাকলেই অন্য কাউকে ভাল রাখতে পারবেন,” তিনি জানান।
তবে নিজের ভালটা সব কিছুর আগে রাখলে কি সেটা স্বার্থপরতা নয়? “একটা তফাত রয়েছে। আমি কিন্তু একবারও বলছি না যে অবসেসিভ হয়ে যাও। আমি বলছি, নিজের চাহিদাগুলোকে প্রায়োরিটি অনুযায়ী সাজাতে হবে। এমন একটা সম্পর্কে জড়িয়ে যেও না যেখানে তোমার কোনও স্বাতন্ত্র্য নেই। যেখানে তুমি নিজেকে এতটাই সমর্পণ করছ যে কেউ তোমার মাথায় চড়ে বসেছে। বা এমন কিছু করছ যা দেখে মনে হয় তোমার জীবনের উদ্দেশ্য হল অন্য কারও জীবনটা মাথায় রেখে বাঁচা। মেয়েদের অনেক সময় এটা করতে দেখি। কমপ্রোমাইজ করেই যায়। কারণ তারা ভাবে যে কমপ্রোমাইজ করলেই বোধ হয় সব সম্পর্ক টেকে। এটা সত্যি নয়। কোনও সম্পর্কই ওয়ান ওয়ে ট্র্যাফিক হতে পারে না। একটা আদানপ্রদান দরকার। বন্ধুত্ব প্রয়োজন।”
কথা বলতে বলতে চলে আসেন নিজের বাবা-মার সম্পর্কে। “বাবা প্রতিষ্ঠিত। বাবার তুলনায় মা হয়তো অত পড়াশোনা করেননি। তবে বাবাকে সব সময় মায়ের সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে দেখেছি যা দেখে মনে হয় মা এক জন খুব বড় মাপের মানুষ। এটাই দু’জনের মধ্যে পারস্পরিক সম্মানের জায়গা। কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। একটা ভাল সম্পর্ক তৈরি করার জন্য এটাই দরকার,” বললেন বিপাশা।
নারী দিবসের উন্মাদনার রেশ এখনও কাটেনি। কখনও কি মনে হয়েছে যে সুন্দরী ‘থিংকিং ওম্যান’রা কি সত্যিই পুরুষদের কাছে আকর্ষণীয়? নাকি তাঁরা ‘অ্যারোগেন্স অ্যান্ড অ্যাটিটিউড প্রোন’ বলেই বেশি পরিচিত? “অনেক ক্ষেত্রেই আমি বলব যে পুরুষেরা সেই সব মহিলার প্রতি আকৃষ্ট হন যাঁরা বেশ ভাল কথা বলতে পারেন। এক জন ইন্টেলিজেন্ট পুরুষের কাছে এটা একটা বড় কোয়ালিটি। তবে অনেক ধরনের পুরুষ আছে। কেউ কেউ আত্মবিশ্বাসী মহিলাদের অ্যারোগেন্ট ভাবেন। কিন্তু তার মানে গোটা পুরুষজাতির এটাই মত এমনটাও কিন্তু ধরে নেওয়া যাবে না। আমার অনেক পুরুষ বন্ধু আছেন, তারা কী স্বচ্ছন্দে মহিলাদের সঙ্গে মেশেন। মেয়েদের সম্মান করেন।”
পুরোনো প্রেমের কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ প্রসঙ্গ ওঠে কী ভাবে পনেরো বছর বয়সে প্রথম প্রেমে পড়েছিলেন একটি মারোয়াড়ি ছেলের। প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে নাকি শর্টস ছেড়ে হঠাৎ সালোয়ার কামিজ পরতে শুরু করেছিলেন। “আমি আমার প্রত্যেকটি সম্পর্কতেই নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি। আমার মা কিন্তু বেশ পুরোনোপন্থী। আজও যদি মাকে কেউ জিজ্ঞেস করেন আমার জন্য কেমন ছেলে পছন্দ, মা কিন্তু বলবেন একটা বাঙালি ছেলে হলেই ভাল হয়। তবে এটাও বলব যে মা রক্ষণশীল মনোভাবের হলেও আমাদের তিন বোনকে কখনও কোনও কিছু চাপিয়ে দেননি,” বলেন তিনি।
আর তার পর বলেন যে, যতই নিজের বোল্ড ইমেজ থাকুক না কেন, বিপাশা মনে মনে বেশ পুরোনো ঘরানার। “আমার কোনও ঠুনকো সম্পর্ক পছন্দ নয়। হাইস্পিড ডেটিংও নয়। আমার পছন্দ সেই পুরোনো ধরনের রোম্যান্স। একটা সম্পর্ক বেড়ে ওঠার জন্য সময় দিতে হয়। নিজেদের মধ্যে একটা যোগাযোগ তৈরি হওয়া খুব জরুরি। আমি চাই আমার মনের মানুষ আমার পেছনে পড়ে থেকে আমায় জয় করবে। চাইব সে আমাকে প্রথমে প্রোপোজ করুক...”
তবে ‘আত্মা’ ছবিটিতে তিনি গার্লফ্রেন্ড নন। মায়ের ভূমিকায়। এক সময় বিদ্যা বালন ‘পা’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন।
সেক্সি বিপস্ থেকে মাতৃময়ী বিপাশা, দর্শক নিতে পারবে সেটা? বিপাশার ভাষায় সেক্সি মানে শুধু লুকস নয়। “সেক্সি ইজ সো মাচ অ্যাবাউট দ্য পার্সোনালিটি। সেক্সি হতে গেলে বুদ্ধিদীপ্ত মনের প্রয়োজন। আর আমাকে দর্শক মা হিসেবে মেনে নিতে পারবে না কেন? মুম্বইয়ে আমি কত মহিলাকে দেখি চল্লিশের ওপর বয়স। কিন্তু দেখে মনে হবে ত্রিশও পেরোয়নি। নিজেদের খেয়াল রাখেন। বাচ্চাদের খেয়াল রাখেন। কেরিয়ার সম্পর্কেও বেশ সচেতন। আমার ইনস্পায়ারিং লাগে ওঁদের দেখে,” বলে জানান যে তাঁর নিজের মধ্যেও মাতৃসুলভ সত্তাটা বেশ প্রবল।
সেটাও বুঝেছেন ‘আত্মা’ ছবিটি করতে গিয়ে। “এই ছবিটি করতে গিয়ে বুঝেছি যে আমি খুব ভাল মা হতে পারি। বেশ প্রোটেকটিভ আমি। সেটে একটা বাচ্চা মেয়ের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটানোর পর বুঝতে পারছি যে মা হওয়াটা কত কঠিন! কতটা ধৈর্য লাগে। কত কিছু ভাবতে হয়। এ ভাবে কথা বলা উচিত নয় একটা বাচ্চার সামনে। বা ও ভাবে ব্যবহার করা উচিত না। সব মায়েরাই তাঁদের মেয়েদের বলেন, ‘যখন মা হবি, তখন বুঝবি’। হয়তো ছবিটা করে এই লাইনটার মানে আর একটু বেশি ভাল করে বুঝতে পারলাম,” বিপাশা বলেন।
তবে আজকাল মাঝেমাঝেই নারী-নির্যাতনের খবর শিরোনামে দেখে বেশ বিচলিত তিনি। “আমি অনেক সময়ই চেয়েছি যে আমার একটা ফুটফুটে মেয়ে হোক। তবে আজকাল সব দেখে মনের মধ্যে কেমন একটা ভয় হয়। মনে হয় তাকে সুরক্ষিত রাখতে পারব তো! আগে তো নারী নির্যাতনের অনেক কেস রেজিস্টার করাই হত না। তবে এটা দেখে ভাল লাগে যে এই সব কেসগুলো নিয়ে কথা হচ্ছে। আমাদের দেশে আরও শক্ত আইন দরকার।”
তবে কি মনে হয়, যখন প্রতিনিয়ত বলা হয় যে আইটেম নাম্বারে মেয়েদের বাণিজ্যিকরণের জন্য হয়তো নারী-নির্যাতন বাড়ছে? “এই যুক্তিটা আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না। সমাজে খারাপ মানুষ থাকবেই। তবে তার জন্য সিনেমা দায়ী নয়। হতে পারে না। সেই ষাটের দশকে তো কত ক্যাবারে হয়েছে হিন্দি ছবিতে। হেলেন, বিন্দু কত নাম বলব? তা হলে সেই সময় বেশি ধর্ষণ হত না কি?”
গলায় ধরা পড়ল প্রবল উত্তেজনা। আরও বললেন, “এই ধরনের যুক্তি খাড়া করার আগে একটু ভেবে নিলে ভাল হয় না? যত মানুষের কাছে লুকোবেন, তত তা দেখার জন্য পাগলামি বাড়বে। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়বে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।”
উত্তেজনার রেশ কাটাতে গিয়ে প্রসঙ্গ বদলাতে হয়। জিজ্ঞেস করা হয় সৃজিত মুখোপাধ্যায় নাকি তাঁকে একটা মিউজিক ভিডিও করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন? “সৃজিত আমাকে একটা প্রস্তাব দিয়েছিল। একটা এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করার জন্য। ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান আইডিয়া। ব্যস্ততার কারণে সময় বের করতে পারিনি। সৃজিতের কাজ ভাল লেগেছে। ভবিষ্যতে ওর ছবিতে কাজও করতে চাইব,” বলেন তিনি।
আর বিগ বাজেট বাণিজ্যিক বাংলা ছবি? এই যে সেদিন এক বাংলা দৈনিকে বলছিলেন যে, তিনি নাকি ওই ধরনের ছবি করতেও উৎসাহী? “বাংলার বাণিজ্যিক ছবি আমাকে পেশাদার পারিশ্রমিক দিতেই পারবে না। বারো বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। সেই সুবাদে একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। যে ছবি আমি বলিউডে করতে পারব না, সেটা করার সুযোগ যদি টলিউড আমাকে দেয় তা হলে আমি নিশ্চয়ই করতে চাইব। যে ভাবে আমি ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ করেছিলাম। ওই ধরনের ছবি করার কারণ শুধুমাত্র শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা। আর অভিনেত্রী হিসেবে সেটার খিদে থেকে যায়।”
আর এই যে এত একশো কোটি ক্লাব নিয়ে কথাবার্তা ওঠে সেটা নিয়ে তাঁর কী ধারণা? “যদি একটা ছবি আশি কোটি দিয়ে বানানো হয়, একশো কোটি টাকার ব্যবসা করে তা হলে প্রফিটের মার্জিন কতটা? ধরুন কোনও ছবি মেরে কেটে বারো কোটি টাকা দিয়ে বানানো। কিন্তু ছবিটি যদি নব্বই কোটিরও বেশি ব্যবসা করে, সেখানে প্রফিটের মার্জিনটা সত্যিই বেশি। শুধুমাত্র একশো কোটি টাকার ব্যবসা করাটাই সাফল্যের মাপকাঠি হতে পারে না,” সাফ উত্তর দিলেন তিনি।
দু’বছর পরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান? এই একশো কোটির ক্লাবে? নাকি ঘরকন্নার ব্যস্ততার মাঝে? “দু’বছর কেন? আমি শুধুমাত্র পরের দিনের প্ল্যানটাই করি। বলতে পারব কালকে কী করছি। আর জানি বিক্রম ভট্টের ‘ক্রিচার’ বলে একটা ছবিতে কাজ করব। তার বেশি ভাবিনি। ভবিষ্যতে কে কেমন থাকবে সেটা কি কেউ বলতে পারে?”
প্রবাদে আছে যদি ঈশ্বরকে হাসাতে চান তা হলে ভবিষ্যতের প্ল্যানটা জানিয়ে রাখুন। আজকে বিপাশা হয়তো সেটাই বিশ্বাস করেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.