|
|
|
|
ট্যাটু প্লে
পাওয়ার প্লে-র মারমার কাট কাট যেমন ম্যাচের ভাগ্য ঠিক করে দেয়।
তেমনই স্রেফ
শরীরের
একটা
উল্কিতেও বদলে যেতে পারে ক্রীড়াবিদ সম্পর্কে দর্শন।
লিখছেন প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত |
|
কেভিন পিটারসেন
চেহারাটা দেখলে মনে হয় ইনি ক্রিকেট মাঠে কী করছেন? হলিউডের সেট থেকে রাস্তা ভুলে চলে আসেননি তো? ইংল্যান্ডের জার্সিতে আত্মপ্রকাশ করা সবচেয়ে উত্তেজক, সম্ভবত সবচেয়ে বিতর্কিত ক্রিকেটার। ‘কিং পিটার’। টিমমেটদের নিয়ে বিতর্কিত এসএমএস পাঠিয়ে দেন বিপক্ষ দলের ক্রিকেটারদের। দিব্যি ক্রিকেট ছেড়েছুড়ে বসে পড়েন কমেন্ট্রি বক্সে। মান ভাঙিয়ে তাঁকে আবার ফেরানো হয় জাতীয় দলে।
এত কিছুর পরেও কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা-জাত ক্রিকেটারের আবেদন একটুও কমেনি। বরং বেড়ে গিয়েছে কয়েকশো শতাংশ। ট্যাটুর আবেদনও বা কম কী? ডান হাতে ট্রাইবাল মোটিফ, বাঁ হাতের বাইসেপে ইংল্যান্ড টিমের লোগো এবং তাঁর টেস্ট ক্যাপ নম্বর ১৮৫। ইংল্যান্ডের জার্সির রঙের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায় আইপিএলে কেপির ফ্র্যাঞ্চাইজির টিম কালার নীল আর লাল।
মাইকেল ক্লার্ক
হঠাৎ দেখলে মনে হবে তিনি চুপচাপ, শান্তশিষ্ট এক ভদ্রলোক। যাঁর গায়ে ট্যাটু কল্পনা করাটা বেশ কঠিন। এহেন মাইকেল ক্লার্কও কিন্তু গায়ে উলকি করাতে পিছপা হননি। অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক, যিনি এ বার পুণে ওয়ারিয়র্সের ব্যাটন নিতে পারেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে। ডান হাতের বাইসেপে হাঁটু মুড়ে বসা পরি। একটু উপরে হার্ট শেপের মধ্যে লেখা ‘এল বি’ তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীর নামের প্রথম দুই অক্ষর। সঙ্গে বাঁ হাতে কনুই থেকে কবজি পর্যন্ত আরবি লেখা।
আর এখানেই ছোটখাটো বিতর্ক। ক্লার্কের হাতে খোদাই আরবি শব্দগুলো একটু এদিক-ওদিক করলে মানে দাঁড়ায়, শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের যন্ত্রণার সঙ্গে হতাশার তীব্র যন্ত্রণার কোনও তুলনা হয় না। অক্ষরের ভুলে যেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের যন্ত্রণা আর হতাশার যন্ত্রণা অনেকটা এক। ক্লার্ক নিশ্চয়ই এই মানে বোঝাতে চাননি। বেকহ্যামের হাতে যেমন তাঁর স্ত্রী ভিক্টোরিয়ার নামের হিন্দি ট্যাটুতে বানান ভুল, ক্লার্কেরটা হয়তো অন্তর্নিহিত অর্থে। |
|
মিচেল জনসন
অস্ট্রেলীয় পেসার যেমন আগুনে গতিতে তেড়ে আসেন বিপক্ষ ব্যাটসম্যানের দিকে, শরীর জুড়ে তাঁর ট্যাটুতেও সে রকম গনগনে আঁচ। এমনি এমনিই কি তাঁকে নিজেদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করে একটি আন্তর্জাতিক অন্তর্বাস সংস্থা?
ট্যাটু-মাহাত্ম্যেও নারীহৃদয়ে ঝড় উঠবে। নমুনা দেখে নিন। ডান হাত জুড়ে ট্যাটু। বাঁ দিকে বুক থেকে কোমরের দিকে লাফাচ্ছে বিরাট একটা বাঘ। এমনই তাঁর ট্যাটুর আবেদন যে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে অস্ট্রেলীয় পেসারের অনাবৃত উর্ধ্বাঙ্গের ছবি। দুঃখ একটাই। সচিনদের মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জার্সিতে ‘মাইন্ডব্লোয়িং মিচেল’-এর দুর্দান্ত ট্যাটুর বেশির ভাগটাই ঢাকা পড়ে যাবে।
ক্রিস গেইল
শার্লিন চোপড়ার সঙ্গে নাইট ক্লাবে কোমর জড়িয়ে যিনি উদ্দামতায় ডুব দেন, বাইশ গজে বোলারদের জন্য যিনি বরাদ্দ রাখেন চাবুকের নির্মম আঘাত, তাঁর মধ্যে ‘আমাকে দেখুন’ মার্কা ব্যাপার থাকবে না, হয়? অতএব, ক্রিস গেইলের শরীরেও ট্যাটুর কার্নিভাল!
দু’হাত জুড়ে ট্রাইবাল আঁকিবুকি, আকাশের তারা, ঈগল পাখি কিছুই বাদ রাখেননি ক্যারিবিয়ান কিং। অনেকটা যেন তাঁর পাথুরে শরীর, নিষ্ঠুর আভিজাত্য, আপাদমস্তক বন্যতার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর গেইল একেবারে আক্ষরিক অর্থে ‘নেবার্স এনভি, ওনার্স প্রাইড’! শুধু দেখলে হবে, খরচা আছে! |
|
ব্রেন্ডন ম্যাকালাম
উদ্বোধনী আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে এই ভদ্রলোকের ইনিংস মনে আছে নিশ্চয়ই। মুখে সব সময় চুইংগাম চিবিয়ে চলেন নিরন্তর ও সব দেখলে বোলারদের নার্ভ আর ঠিক থাকে?
ট্যাটুর পৃথিবীতেও তিনি আলাদা, স্বতন্ত্র, একেবারে ‘ব্র্যান্ড ব্রেন্ডন’ যাকে বলে। নিজের জার্সি নম্বর (৪২) থেকে ছেলেমেয়ের জন্ম তারিখ ডান হাতের ঢেউখেলানো পেশিতে স্মারক হিসেবে খোদাই করা আছে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের জীবনের ‘প্রথম সব কিছু’। স্টাইলিশ কিউয়ি উইকেটকিপারের স্টাইল কোশেন্ট এর পরেও চড়চড়িয়ে বাড়বে না? শার্ট খুলে মাঠে নামলে কলকাতা নাইট রাইডার্সে তাঁর টিম মালিক শাহরুখ খানকেও না হারিয়ে দেয় ম্যাকালামের গ্ল্যামার!
বিরাট কোহলি
আজন্ম দেখে আসা ভারতীয় ক্রিকেটারদের মতো আলুভাতে নন। বিরাট বরাবরই ‘জরা হটকে’। স্পাইক করা চুলে সোনালি ছোঁয়া, হাঁটাচলায় স্পষ্ট তাঁর ‘কেয়ার করি না’ অ্যাটিটিউড। এনডোর্সমেন্টের দুনিয়ায় আবির্ভাবে তাঁর সিনিয়ররা প্রায় সবাই একটু জড়োসড়ো ছিলেন। বিরাট সেখানে প্রথম থেকেই ক্যামেরার সামনে সাবলীল। চাইলে ক্রিকেটকে গুডবাই করে বলিউডকে আনায়াসে বেছে নিতে পারেন বিকল্প পেশা হিসেবে। এই ক্রিকেটারের ট্যাটু তো থাকবেই। প্রশ্ন হচ্ছে, বাকিরা তাঁর কাছে ক’গোল খাবেন!
বাঁ কাঁধে খোদাই করা সামুরাই যোদ্ধা, হাতে তরোয়াল। দিল্লিওয়ালা অ্যাটিটিউড বোধহয় একেই বলে! তবে আরসিবি-তে তাঁর সতীর্থ গেইলের কাছ থেকে বিরাট আরও কিছু ট্যাটু করানোর টিপস নিতেই পারেন। কেন? ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর! |
|
উলকি দিয়ে যায় চেনা |
ডেভিড বেকহ্যাম
স্ত্রীর নাম, ছেলেদের নাম, যিশুর ছবি, ডানা মেলা ক্রাইস্ট বেকহ্যামের
প্রায়োরিটি লিস্ট বেরিয়ে আসবে তাঁর শরীরের দিকে এক ঝলক তাকালেই। |
|
লে ব্রন জেমস
চেহারায়, আদবকায়দায় অনায়াসে পাল্লা টানবেন আর এক দৈত্যের সঙ্গে। প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম ক্রিস গেইল। এই আমেরিকান বাস্কেটবল তারকার নাম হয়তো ভারতে খুব কম লোকই জানেন। তবে তাঁকে দেখে ট্যাটুর টিপস নেওয়া যেতেই পারে। দু’হাত ভর্তি ট্যাটু থাকলেও
নজর কাড়ে তাঁর পিঠে খোদাই করা শব্দবন্ধ চোজেন ১। |
লুকাস রসোল
টেনিস বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন গত বছর উইম্বলডনে রাফায়েল নাদালকে হারিয়ে। যেটা হয়তো অনেকেরই নজরে পড়েনি, সেটা হল রসোলের বাঁ পায়ের পিছন দিকে নিউজিল্যান্ডের মাওরি আদিবাসীদের ডিজাইনের ঢঙে করানো ট্যাটু। ট্যাটু হিসেবে এই মাওরি ডিজাইন বিশেষ পছন্দ হলিউড তারকাদেরও। |
|
|
|
|
ট্যাটুর জগতে নতুন |
• পিঠ বা হাতে ট্যাটু করানোটা এখন খুব বোরিং। ট্যাটুর দুনিয়ায় এই মুহূর্তে ‘ইন’ কী? শুনলে নাক সিঁটকোবেন। বাহুমূল! বুঝতে পারছেন ট্যাটু নিয়ে পাগলামি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে? না হলে বাহুমূলের মতো স্পর্শকাতর জায়গাতেও কেউ আঁকিবুকি কাটতে যায়! যাঁরা ব্যথা সহ্য করতে পারেন না, এই বিকল্প কিন্তু তাঁদের জন্য একেবারেই নয়।
• প্রথম বার ট্যাটু করাতে যাচ্ছেন? বেছে নিন ছোটখাটো কোনও ডিজাইন। যা সহজে চোখে পড়বে না। কবজির ভিতরে, বা কাঁধে, বা গোড়ালিতে। দীপিকা পাড়ুকোনের ঘাড়ের পিছনে ছোট্ট অক্ষরে যেমন খোদাই করা তাঁর এক সময়কার প্রেমিকের নামের অক্ষর আর কে। ব্যাপারটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারলে না হয় পরে আরও সাহসী হবেন।
• কোথায় করাবেন:
শহরের প্রায় সব নামী সালঁ-তেই এখন ট্যাটু করানোর অপশন আছে। দাম পড়ে প্রতি স্কোয়ার ইঞ্চি হাজার টাকা মতো। সাদা-কালো ট্যাটুর চেয়ে অবশ্যই রঙিন ট্যাটু করানোর খরচ বেশি।
• ট্যাটু করানোর পর:
ট্যাটু করানোর পর জায়গাটা প্রথম দিকে বেশ খসখসে হয়ে থাকবে। যার জন্য দরকার হালকা সাবান দিয়ে চার-পাঁচ দিন নিয়মিত পরিষ্কার করা আর ময়শ্চারাইজেশন। প্রথম দিকে ব্যথা, হালকা অস্বস্তি থাকলেও দিন কয়েকের মধ্যে ট্যাটু হয়ে যাবে আপনার ‘সেকেন্ড স্কিন’।
পুনশ্চ
ট্যাটু তুলতে চাইলে লেজার ছাড়া গতি নেই। তাতে ঝঞ্ঝাট অনেক। তাই একশো শতাংশ নিশ্চিত না হয়ে এই রাস্তায় পা দেবেন না!
|
|
|
|
|
|
|
|