বাড়তি নম্বর নয়, মেধা-তালিকা অনুসারেই মেডিক্যালের স্নাতকোত্তরে ছাত্র ভর্তি করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এ বার তারা জানাল, এই নিয়ে টানাপোড়েনে বেশ কিছুটা সময় কেটে গেলেও ফের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করে শূন্য আসনে পড়ুয়াদের ভর্তি নিতে হবে।
এমডি, এমএস পাঠ্যক্রমে সরকারি চিকিৎসকদের ভর্তির বিতর্কিত নীতির জন্য ২০১২-’১৩ শিক্ষাবর্ষে রাজ্যে ৮০টি আসন এখনও শূন্য। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়াতে কেন্দ্রের দেওয়া টাকা ফেরত চলে যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু রায় দেন, সময় পেরিয়ে গেলেও নজিরবিহীন কারণে স্নাতকোত্তর মেডিক্যালে আসন খালি থেকে গিয়েছে। শূন্য আসন পূরণের জন্য আবেদনকারীদের দ্বিতীয় দফার কাউন্সেলিং ও মেধা-তালিকা তৈরি করতে হবে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়কে। রাজ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একান্ত অভাব। তাই যত দেরিই হোক, আসন খালি ফেলে রাখা ঠিক নয়।
রাজ্যে পালাবদলের পরে নতুন সরকার ঘোষণা করেছিল, যে-সব চিকিৎসক ‘দুর্গম’ ও ‘উপদ্রুত’ এলাকার হাসপাতালে কাজ করেন, এমএস, এমডি পাঠ্যক্রমের প্রবেশিকা পরীক্ষায় তাঁদের ৩০% বাড়তি নম্বর দেওয়া হবে। তার পরেই ‘দুর্গম’ ও ‘উপদ্রুত’ এলাকার সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ও মেধা-তালিকাকে অবজ্ঞা করার অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা হয়। হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট, আবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে হাইকোর্টে ঘুরতে থাকে মামলা। যে-সব চিকিৎসক সরকারি হাসপাতালে কাজ করেন না, তাঁরা স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু করলেও সরাকরি চিকিৎসকদের সেই সুযোগ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ১৮ অক্টোবর হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, কোনও বাড়তি নম্বর নয়। ছাত্র ভর্তি করতে হবে মেধা-তালিকা মেনেই। রাজ্যসরকার সেই নির্দেশ মেনে নেয়। ২০ অক্টোবর মেধা-তালিকা অনুযায়ী সরকারি চিকিৎসকেরা ওই পাঠ্যক্রমে ভর্তি হন।
তার পরে দেখা যায়, ৫০০ আসনের মধ্যে ৮০টি আসন শূন্য রয়েছে। দ্বিতীয় দফায় কাউন্সেলিং করে শূন্য আসনে ভর্তি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার জন্য হাইকোর্টে আবেদন জানান কয়েক জন চিকিৎসক। কিছু আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী রাজর্ষি হালদার বলেন, “টাকা ফেরত চলে যাচ্ছে। উচ্চ শিক্ষাক্রমে ভর্তি হওয়ার জন্য রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকেরা বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন। রাজ্যের মানুষের স্বার্থেই দ্বিতীয় দফায় কাউন্সেলিংকরে ভর্তি নেওয়া প্রয়োজন।” অন্য কয়েক জন চিকিৎসকের আইনজীবী সরিফুল ইসলাম বলেন, “প্রতি বছরই দ্বিতীয় দফার কাউন্সেলিং হয়। শূন্য আসনে ভর্তিও নেওয়া হয়। এই বিলম্বের জন্য সরকারি চিকিৎসকেরা দায়ী নন। একটা ব্যতিক্রমী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল বলেই দেরি হয়েছে। তাই অবিলম্বে শূন্য আসন পূর্ণ করা হোক।”
স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তাঁদের বক্তব্য, রায়ের প্রতিলিপি পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। |