কার দফতর বেশি ভাল ভাবে হাসপাতাল পরিষেবা চালাতে পারে, তা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু)।
তাঁর উদ্যোগেই এ বার মালদহের ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্ট হাসপাতালকে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ দফতরের থেকে অধিগ্রহণ করছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতর। অর্থাৎ, এই হাসপাতালই হতে চলেছে রাজ্যে সরাসরি স্বাস্থ্যমন্ত্রক পরিচালিত প্রথম জেনারেল হাসপাতাল। ঠিক হয়েছে, ৫০ শয্যার হাসপাতালকে বাড়িয়ে প্রায় ৩০০ শয্যার করা হবে। এ ব্যাপারে আবু হাসেম খান ও স্থানীয় বিধায়ক মইনুল হককে সম্মতিসূচক চিঠিও পাঠিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী হরিশ রাওয়াত।
এত দিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যদফতর পরিচালিত হাসপাতাল বলতে রাজ্যে শুধু ছিল একটি ক্যানসার হাসপাতাল। সেটি হল, কলকাতার চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল। এ ছাড়া কেন্দ্রের অন্যান্য দফতরের বেশ কিছু হাসপাতাল এ রাজ্যে রয়েছে। যেমন, রেল, শ্রম, জলসম্পদ, প্রতিরক্ষা দফতর প্রভৃতির। কিন্তু সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যদফতর পরিচালিত সাধারণ হাসপাতাল, যেখানে জনসাধারণ চিকিৎসা পাবেন এই রকম একটিও ছিল না।
হঠাৎ এ ব্যাপারে আবু হাসেম খান আগ্রহী হলেন কেন?
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর সোজাসাপ্টা জবাব, “উনিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কী ভাবে হাসপাতাল চালাতে হয় সেটা আমরা মমতাকে দেখিয়ে দিতে চাই। ওঁর পরিচালনায় গোটা রাজ্য তো বটেই বিশেষ করে স্বাস্থ্য লাটে উঠতে বসেছে। সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না।” |
প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি সরাসরি চ্যালেঞ্জ?
আবু হাসেম খানের জবাব, “তা ঠিক নয়। তবে আমরা আর স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাই না। বরঞ্চ দেখিয়ে দিতে চাই, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যদফতর কত ভালভাবে জনসাধারণের জন্য হাসপাতাল চালাতে পারে।”
যা শুনে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের উত্তর, “আবু হাসেম খান চৌধুরী ভাবছেন স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে রাজনীতি বা পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে, সেটাও ওঁর ব্যাপার। রাজ্যের ৯ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র উনিই একজন যিনি অদ্ভুত ভাবনা ভাবছেন।”
রাজনৈতিক মহল আবার এর পিছনে অন্য রাজনীতি দেখতে পাচ্ছেন। তাঁদের কথায়, উত্তরবঙ্গে এমনিতেই স্বাস্থ্য পরিষেবা পিছিয়ে। তৃণমূল সরকার এসে বহরমপুর ও মালদহে মেডিক্যাল কলেজ চালু করলেও দু’টিই পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে। ছাত্রছাত্রীরা বার বার অভিযোগ জানাচ্ছেন। রায়গঞ্জে এইমস-এর ধাঁচে হাসপাতাল নিয়ে গোটা উত্তরবঙ্গের একটা আবেগ জড়িয়ে ছিল। মমতা জমির প্রসঙ্গ এনে তাতে টালবাহানা করায় ভিতরে ভিতরে অসন্তোষ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে এ বার মালদহে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হাসপাতাল দিয়ে উত্তরবঙ্গের সমর্থন কংগ্রেসের পক্ষে টানতে চাইছেন ডালুবাবু।
চিকিৎসক ও কর্মীর অভাবে ফরাক্কা ব্যারেজের হাসপাতালটি বেশ কয়েক বছর ধরেই ধুঁকছিল। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী হরিশ রাওয়ত তাঁর চিঠিতে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যদফতর ওই হাসপাতাল অধিগ্রহণ করলে ফরাক্কা অঞ্চল ছাড়াও আশপাশের সামসেরগঞ্জ, বৈষ্ণবনগর, কালিয়াচক, সুতি
এমনকী ঝাড়খন্ডের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবেন।
হাসপাতালে এই মুহূর্তে চিকিৎসক আছেন ৬ জন। জানুয়ারি মাসে মাত্র ৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁরা সবাই একরাত হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বহু দিন ধরেই রোগীরা এড়িয়ে চলছেন হাসপাতালকে।
রোগী না আসার মূল কারণ, ওষুধের অভাব। ফরাক্কা ব্যারেজ হাসপাতালের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পীযূষকুমার দাস বলেন, “ফরাক্কা জেনারেল ম্যানেজারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সচিব হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং চারপাশের জনবসতি সম্পর্কে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। সেই রিপোর্ট ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টের জেনারেল ম্যানেজারের কাছে জমা দিয়ে দিয়েছি।” |