প্রতিবন্ধী হোমে অসুস্থ আরও ৩
অপুষ্টি কলকাতার কাছেই, মৃত্যু শিশুর
চার বছরের কঙ্কালসার শিশুটিকে দেখে চমকে উঠেছিলেন বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। শিশুটির সারা শরীরে অপুষ্টির থাবা। মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। রাতেই মারা যায় শিশুটি।
প্রশাসনের কর্তারা জানান, সোনারপুর থানার মালঞ্চ এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত একটি মানসিক প্রতিবন্ধী হোমে থাকত ভিকি-টু নামে ওই শিশুটি। মঙ্গলবার ভিকি-টু এবং হোমের অন্য তিন আবাসিক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাজকুমার নামে একটি শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকেরা তাকে পাঠিয়ে দেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে।
কী হয়েছিল ভিকির? বারুইপুর হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক চুনী পাল বলেন, “ভিকির পেটে সংক্রমণ হয়েছিল। অপুষ্টিজনিত সমস্যাও ছিল। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে সে।” রামু, বাবা ও মোস্তাফা নামে অন্য তিন আবাসিক শিশু এখন চুনীবাবুর অধীনে ভর্তি আছে। মোস্তাফাকে ভর্তি করানো হয়েছে গত ডিসেম্বরে। ওই শিশুদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানান চুনীবাবু। চিকিৎসকেরা জানান, সকলেই অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে।
অন্তিম শয়ানে ভিকি। —নিজস্ব চিত্র
সম্প্রতি গুড়াপের একটি বেসরকারি হোমে মানসিক প্রতিবন্ধী এক তরুণীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য। সম্প্রতি ওই ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। গুড়াপ কাণ্ডের পরে রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছিল, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সব বেসরকারি হোমের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হবে। কিন্তু সেই নির্দেশ যে কার্যত খাতায়-কলমেই রয়ে গিয়েছে, সোনারপুরের এই শিশুমৃত্যুর ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
ওই ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বারুইপুর থানার বাইরে হোমের ম্যানেজার মীনাক্ষীচরণ বাগচী বলেন, “শিশুটি অসুস্থ ছিল। হাসপাতালে মারা গিয়েছে। এর বেশি আমি কিছু জানি না।”
ঘটনার পরে যথারীতি নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “ওই হোমের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। ঠিক কী পরিস্থিতিতে ওই হোম চালানো হচ্ছে, খতিয়ে দেখা হবে তা-ও।” বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বারুইপুরের মহকুমাশাসক পার্থ আচার্য। ভিকির দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। মহকুমাশাসক বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী হোমের কোনও আবাসিকের মৃত্যু হলে ময়না-তদন্ত আবশ্যিক। সেই কারণেই ওই শিশুর ময়না-তদন্ত হচ্ছে।” এ দিন বিকেলে মহকুমাশাসক হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাধীন তিন শিশুর শারীরিক পরিস্থিতির রিপোর্ট সংগ্রহ করেন। তাঁর নির্দেশে সোনারপুর বিডিও দেবযানী ওঝা এবং সোনারপুরের ব্লক মেডিক্যাল অফিসার প্রণব মজুমদার ওই হোমের আবাসিকদের জিজ্ঞাসাবাদও করেন।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২০০৯ থেকে মালঞ্চ এলাকায় অনাথ প্রতিবন্ধীদের ওই হোম চলছে। এখন ২৩টি শিশু রয়েছে সেখানে। এ দিন দুপুরে হোমে গিয়ে কোনও পরিচালকের খোঁজ মেলেনি। কী খাওয়ানো হয় হোমের শিশুদের? প্রশ্ন শুনে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুরা তাকিয়ে থেকেছে। হোমের রাঁধুনি রুমা প্রামাণিকের দাবি, “অধিকাংশ সময়েই ডাল-ভাত-আলুর তরকারি রান্না হয়। মাঝেমধ্যে জোটে মাছ-মাংসও। দিনে দু’বার আবাসিকদের খাবার দেওয়া হয়। কোনও কোনও সময় সকালে ও বিকেলে মুড়ি, বিস্কুটও মেলে।”
মহকুমাশাসক সন্ধ্যায় বলেন, “শিশুমৃত্যুর প্রাথমিক রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই হোমের বিষয়ে সব রিপোর্ট জমা দেবেন বিডিও। তার পরেই হোমের সব কিছু খতিয়ে দেখা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.