সিপিএম পরিচালিত শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ সভাধিপতি পাসকেল মিনজকে নিজের দফতরে আমন্ত্রণ জানালেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বৃহস্পতিবার ফাঁসিদেওয়ায় এক অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত পাসকেলবাবুর সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ের পরে মাইকে ওই আমন্ত্রণ জানান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। ফাঁসিদেওয়া পঞ্চায়েত সমিতির হল ঘরে এ দিন ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্পে পাট্টা বিলির সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি। মঞ্চে দাঁড়িয়েই প্রকাশ্যে উন্নয়ন কাজ নিয়ে সভাধিপতিকে তাঁর দফতরে আসার আমন্ত্রণ জানান। এমনকী, তিনি দফতর থেকে তাঁকে চিঠি পাঠিয়ে ডেকে উন্নয়ন কাজ নিয়ে আলোচনায় বসতে চান বলেও জানিয়ে দেন। যা কি না এক রকম ব্যতিক্রম বলেই মনে করছেন এই এলাকার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই।
সচরাচর সরকারি অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে সিপিএম নেতা এবং তৃণমূলের মন্ত্রীদের দেখা যায়নি। তবে মন্ত্রী হওয়ার পর এ দিনই যে প্রথম একই মঞ্চে পাসকেলবাবুর সঙ্গে গৌতমবাবু বসলেন তা নয়। অন্তত মাস ছয়েক আগে খড়িবাড়ি হাইস্কুলের নতুন ভবন উদ্বোধনের মঞ্চে তারা দু জনেই একই মঞ্চে ছিলেন। এ দিন দ্বিতীয়বার। উন্নয়নকাজের বৈঠকেও চিঠি পেয়ে ২ বার গৌতমবাবুর সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন সভাধিপতি। তবে নজির বিহীন যা তা হল প্রকাশ্যে মঞ্চে সভাধিপতিকে এ দিন নিজের দফতরে আসতে আমন্ত্রণ জানান গৌতমবাবু। |
গৌতমবাবু বলেছেন, “অনেক সময় একটা কথা বলা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ বা মহকুমা পরিষদে অর্থ দেওয়া হচ্ছে না। এটা ঠিক মনে করি না। তবে উন্নয়ন কাজ নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে হবে। দফতরে আসতে হবে। এর আগে এক বার ৬টি জেলার সভাধিপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কাজ কোথায় কী করা দরকার, কী ভাবে তা হতে পারে সে সব নিয়ে আরও আলোচনা করা প্রয়োজন। আপনারা দফতরে আসুন। কবে বৈঠক করতে চান জানান। প্রয়োজনে দফতর থেকে আমি চিঠি পাঠিয়ে ডেকে নেব।” জেলা সভাধিপতির প্রতিক্রিয়া, “উন্নয়ন কাজ নিয়ে যদি ডাকেন নিশ্চিই যাব। এলাকার বাসিন্দাদের স্বার্থে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে সব সময় রাজি।”
তবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর ওই ব্যবহারে দলের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে একাংশ তাঁর পাশেই থাকছেন। উন্নয়নের প্রশ্নেই তিনি যে সভাধিপতিকে ডেকেছেন সে বিষয়টিকেই বড় বলে মনে করছেন তারা। সভাধিপতি অবশ্য জানিয়েছেন, রাজনৈতিক ভাবে গৌতমবাবু অন্য মতাদর্শের হলেও উন্নয়ন কাজ নিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে থাকতেই তিনি এই দিন গিয়েছিলেন। বুধবার বিকালে তাঁকে ভূমি সংস্কার দফতর থেকে চিঠি পাঠিয়ে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। তাঁর অসন্তোষ, “মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় সরকারি স্তরে বিভিন্ন কাজ হচ্ছে। সে সমস্ত অধিকাংশ অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হয় না। অমন্ত্রণপত্রে নাম ছাপা হয় না। সরকারি ভাবে কাজ হলে জনপ্রতিনিধি হিসাবে ডাকা উচিত।”
সভাধিপতি এলেও এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক সুনীল তিরকি অবশ্য এ দিন উপস্থিত ছিলেন না। সুনীলবাবু কলকাতায় রয়েছেন। ফোনে যোগাযোগকরা হলে তিনি জানান, বুধবার দুপুরে দলের ফাঁসিদেওয়া সভাপতিকে একটা আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয় বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তাঁর কথায়, সরকারি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্র তার দফতরে বা বাড়িতে পাঠানোই উচিত। দলের কারো হাতে তা দেওয়া হবেই বা কেন।
তা ছাড়া অনুষ্ঠানের আগের দিন আমন্ত্রণের চিঠি না পাঠিয়ে আরও আগে থেকে জানানো হলে তিনি যেতে পারতেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সম্প্রতি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ অমর সিংহ। এ দিন মঞ্চে ফাঁসিদেওয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা কংগ্রেস নেতা প্রণবেশ মণ্ডল এলাকায় গরিব বাসিন্দাদের বাড়ি তৈরির প্রকল্প করার, কলেজ তৈরির জন্য উদ্যোগী হতে মন্ত্রীকে আবেদন করেন। আগেও তিনি ওই বিষয়ে বলেছেন বলে গৌতমবাবুও জানান। এ ধরনের কাজের জন্য আলাপ আলোচনা করতে দফতরে আসতে বলেন। |