থানার গা ঘেঁষা রাস্তায় বুধবার ভরদুপুরে যে ভাবে শাসক দলের নেতাদের পিটিয়ে মারার চেষ্টা হয়েছে, তা ভুলতে পারেননি প্রত্যক্ষদর্শীরা। দিনভর তা নিয়েই ফিসফাস। দোকান খুলেছে। পর্যটকদের ঘোরাফেরা চোখে পড়েছে। কিন্তু কালিম্পঙের মেজাজটা ফেরেনি। বরং সারাদিনই শহরের প্রাণকেন্দ্র ডম্বর চক ছিল থমথমে।
বুধবারের ঘটনায় কালিম্পং থানার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় থানার আইসি প্রসাদ প্রধানকে বৃহস্পতিবার সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্য অভিযোগ নতুন নয়। ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁকে উত্তর দিনাজপুরে বদলির নির্দেশ দেয় মহাকরণ। তাও ওই পুলিশ কর্তা কী করে কালিম্পঙে থেকে গিয়েছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তৃণমূল নেতাদের অনেকেই পাহাড়ে অশান্তি ছড়াতে তাঁর ‘মদত’ দেওয়ার দাবিও করেছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “অনেক অভিযোগ এসেছে। উস্কানি দেওয়ার খবরও রয়েছে।” শাসক দলের অভিযোগ, ওই দিন গণ্ডগোলের সময়ে পুলিশের একটি দল নির্বিকার দাঁড়িয়ে ছিল। কেন? উত্তর মেলেনি। প্রতিবাদে পানিঘাটায় মিছিল করে তৃণমূল। শুক্রবার, গরুবাথানেও মিছিল করবে তারা। মোর্চার সহ-সভাপতি প্রদীপ প্রধান অবশ্য কালিম্পঙের ঘটনাকে ‘নিছকই বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে দাবি করেছেন।
কালিম্পঙের ঘটনা নিয়ে দিল্লিতে বিমল গুরুঙ্গের পাল্টা অভিযোগ, “এটা রাজ্য সরকারের চক্রান্ত। ইচ্ছে করে ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছে যাতে কেন্দ্রীয় আধাসেনা মোতায়েন করা যায়।” তাঁর প্রশ্ন, “কলকাতায় এক তৃণমূল নেতা পুলিশকে গুলি করে খুন করে, সেখানে সিআরপি নিয়োগ হচ্ছে না। আর পাহাড়ে সিআরপি নিয়োগের দরকার?” তাঁর অভিযোগের তির, দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের দিকে। তাঁর দাবি, “এ সবের মুলে রয়েছেন ওই ভদ্রলোক! ”
বাড়িতে ফিরলে ফের হামলা হতে পারে, এই আশঙ্কায় শিলিগুড়িতেই রয়েছেন কালিম্পংয়ের দুই তৃণমূল নেতা। তাঁরা নিরাপত্তা রক্ষী চেয়েছেন। উত্তরবঙ্গের আইজি অনুজ শর্মা বলেন, “প্রত্যেকেই যাতে নিরাপত্তা পায় সে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।” আহত তৃণমূল সমর্থক ছং ও ব্রুনো লেপচার সঙ্কট কাটেনি বলে জানান হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ পিকেটও বসেছে। কালিম্পংয়ের তৃণমূল নেতা তথা জিটিএ ভোটের প্রার্থী সিপি খাতোরাও বলেন, “বাড়ি ফিরতে ভয় হচ্ছে। যে কোনও সময় হামলা হতে পারে।” ইতিমধ্যে পাহাড়ে ৩ কোম্পানি র্যাফ, ১ কোম্পানি ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। |