টোকাটুকির ব্যাধি নির্মূল করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। উচ্চ মাধ্যমিকে তাই এ বার পুলিশ মোতায়েন করা হবে পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যেই। এ রাজ্যে এমন ঘটনার নজির বিরল।
তবে সব পরীক্ষা কেন্দ্রেই যে পুলিশ থাকবে, তা নয়। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ জানিয়েছে, মাধ্যমিকে যে-সব জায়গায় গণটোকাটুকির ছবি দেখা গিয়েছে, গোলমাল এড়াতে সেই সব এলাকার প্রায় ১৭৫টি কেন্দ্রে থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশ। এত দিন মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও রাজ্য সরকার মাধ্যমিকে গণটোকাটুকির অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে বাড়তি নজরদারি প্রমাণ করল, মাধ্যমিকে যে দেদার টোকাটুকি হয়েছে, সেটা মেনে নিচ্ছে সরকারও।
অনেকেই পরীক্ষা কেন্দ্রে পুলিশ মোতায়েন করে উচ্চ মাধ্যমিক নেওয়ার সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন। যেমন প্রাক্তন স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী কান্তি বিশ্বাস। তিনি বলেন, “বিগত তিন দশকে কখনওই এমনটা করার দরকার হয়নি। এর থেকে প্রমাণ হচ্ছে, এত দিনের ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়ছে।”
সংসদ অবশ্য বলছে, সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা পরিচালনার জন্যই এই ব্যবস্থা। এই ব্যাপারে বৃহস্পতিবার মহাকরণে পুলিশ, রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়। পরে তিনি জানান, সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েনের সঙ্গে সঙ্গে যে-সব শ্রেণিকক্ষে বাইরে থেকে নকল সরবরাহ করা সহজ হবে, সেগুলিতে পরীক্ষার আসন না-ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুলকে নির্দেশ দেওয়া হবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সদ্যসমাপ্ত মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রায় রোজই গণটোকাটুকির খবর মিলেছে উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া ইত্যাদি জেলা থেকে। দেখা গিয়েছে, পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতর থেকে প্রশ্ন লিখে পাঠানো হচ্ছে হলের বাইরে। আর পুলিশের সামনেই গাছে উঠে, স্কুলের কার্নিসে দাঁড়িয়ে বাইরে থেকে জোগান দেওয়া হচ্ছে উত্তর। অভিযুক্তদের অনেককে পুলিশ গ্রেফতার করলেও গণটোকাটুকি থামেনি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কর্তারা অবশ্য এমন ঘটনার কথা স্বীকার করেননি। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। তাঁর দাবি, গণটোকাটুকির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পেলেই পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে এরই পাশাপাশি তিনি জানান, উচ্চ মাধ্যমিকে যাতে গণটোকাটুকি না-হয়, সেই জন্য বাড়তি সতর্কতার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংসদ-সভাপতিকে।
মুক্তিনাথবাবু এ দিন জানান, মাধ্যমিকে যে-সব জায়গায় গণটোকাটুকির ছবি ধরা পড়েছে, সেখানেই বাড়তি সতর্কতার ব্যবস্থা হবে। ওই সব জায়গা ও পরীক্ষা কেন্দ্রের তালিকা তৈরি করেছে সংসদ। তালিকায় আছে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর ও রায়গঞ্জ; মালদহের চাঁচল, রতুয়া, গাজোল ও কালিয়াচক; বীরভূমের ময়ূরেশ্বর ও নলহাটি; হুগলির তারকেশ্বর, গোঘাট ও আরামবাগ; বাঁকুড়ার জয়পুর ইত্যাদি।
প্রায় ১৭৫টি পরীক্ষা কেন্দ্রে গণটোকাটুকির আশঙ্কা আছে বলে জানান সংসদ-সভাপতি। তিনি বলেন, “এর মধ্যে যে-সব কেন্দ্রে পাঁচিল নেই বা যেখানে পাঁচিলে দাঁড়িয়ে একতলার ঘরে নকল জোগান দেওয়া যাবে, সেখানে দোতলায় আসন ফেলতে হবে। আবার পাঁচিলে দাঁড়িয়ে দোতলার যে-সব ঘরের সঙ্গে আদানপ্রদান চালানো যাবে, আসন ফেলা যাবে না সেখানেও। এই মর্মে স্কুলগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার থেকেই সব উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে বলে জানান মুক্তিনাথবাবু। তিনি বলেন, “নজরদারির জন্য প্রয়োজনে বাড়তি পুলিশের বন্দোবস্ত করার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। পরীক্ষার দিনে কোনও কেন্দ্রের বাইরে জমায়েত করতে দেওয়া হবে না।” |