হাতে একের পর এক অস্ত্র। বিধানসভায় তাই আক্রমণাত্মক হতে চায় বিরোধী বামফ্রন্ট। একই কৌশল নিতে চাইছে কংগ্রেসও। বিরোধীদের এই সম্মিলিত আক্রমণ এবং শাসক পক্ষের প্রত্যুত্তরে গত দু’বারের মতো বিধানসভার এ বারের অধিবেশনও উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা। রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের ভাষণের মধ্যে দিয়ে আজ, শুক্রবার শুরু হচ্ছে বাজেট অধিবেশন। বাজেট পেশ হওয়ার কথা ১১ মার্চ।
সাম্প্রতিক কালে গার্ডেনরিচ-কাণ্ড, আমিনুলের আত্মহত্যা, ধনেখালি-কাণ্ড, নিচু তলার সরকারি চাকরিতে প্রথম তিন বছর পাকা বেতন তুলে দেওয়ার নির্দেশিকা এই রকম নানা বিষয়ে ফ্রন্ট এই অধিবেশনে সরকারকে চেপে ধরার চেষ্টা করবে। আলিমুদ্দিনে বৃহস্পতিবার রাতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে সেই মর্মেই প্রাথমিক কথা হয়েছে। বিধানসভায় আজ বাম পরিষদীয় দলের বৈঠকে কৌশল চূড়ান্ত হবে। সুর চড়াতে চাইছে কংগ্রেসও। বিরোধী আসনে যাওয়ার পরে গত ক’মাসে যে ভূমিকা তারা পালন করছে, তারই প্রতিফলন ঘটাতে চাইবে বিধানসভায়। জোড়া আক্রমণের মুখে পড়তে হবে শাসক দলকে। তাই গত অধিবেশনের মতো সংঘর্ষের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে কোনও ভাবেই না হয়, তার জন্য ইতিমধ্যেই দলীয় বিধায়কদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কের আগেই বাজেট পেশের সিদ্ধান্ত নিয়েও উত্তপ্ত হতে পারে অধিবেশন। বিধানসভায় সর্বদল বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এ বার রাজ্যপালের ভাষণ নিয়ে আলোচনার আগেই বাজেট পেশ হবে। সরকারের যুক্তি, প্রথা মেনে রাজ্যপালের ভাষণ সংক্রান্ত বিতর্কের পরে বাজেট করতে গেলে দেরি হয়ে যেতে পারে। তার আগে পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। তখন ভোট বিধির জটিলতা দেখা দেবে। সর্বদল বৈঠকে ওই যুক্তির বিরাট কোনও বিরোধিতা না-করলেও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, সরকার দেখুক অতীতে এ রকম নজির আছে কি না। বিধানসভা বিশেষজ্ঞ দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগে কখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। রাজ্য এ ব্যাপারে যে দৃষ্টান্ত দিয়েছে, তা লোকসভার। এই প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে ফের সরব হতে চায় বামফ্রন্ট। আজ বিধানসভায় কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ওই বিষয়ে আলোচনা চাইতে পারে তারা। তাতে মীমাংসা না-হলে অধিবেশনের মধ্যেই সুর চড়াবে বামেরা।
এই অধিবেশনে পাঁচটি বিল তালিকায় আছে। তার মধ্যে উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ বিলও আছে বলে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানান। উচ্চশিক্ষায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) জন্য সংরক্ষণের নীতিগত ভাবে বিরোধী নয় বামেরা। বিল না-দেখে মন্তব্যে যেতেও নারাজ বাম নেতৃত্ব। তবে এক সিপিএম বিধায়কের মতে, “সিঙ্গুর উপসর্গ থেকে বেরোতে পারছে না সরকার! তখনও আমরা নীতিগত ভাবে জমি ফিরিয়ে দেওয়ার বিরোধিতা করিনি। কিন্তু এমন বিল হয়েছিল যে, আদালতে আটকে গেল। সংরক্ষণ নিয়ে কী হয়, দেখা যাক!” মহেশতলা পুরসভার কিছু ওয়ার্ড কলকাতা পুরসভা এলাকায় ঢোকানো সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও আসতে চলেছে বাজেট অধিবেশনে। |