নারী দিবসের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার ৯৬ জন খ্যাতিমান বঙ্গতনয়ার বাসভবনে ফুল ও মিষ্টি পাঠিয়ে অভিনন্দন জানাল রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর।
সম্মান প্রাপকদের তালিকায় দাপট বেশি চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত জগতের। যে মহলের সান্নিধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ইদানীং অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। সুপ্রিয়া দেবী, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা রায়, থেকে শুরু করে দেবশ্রী, শতাব্দী, ঋতুপর্ণা, পাওলি, শুভশ্রী, লকেট টালিগঞ্জের ২৬ জন নায়িকাকে ফুল-মিষ্টি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গীত ও আবৃত্তি জগত থেকে সম্মান পেয়েছেন ২৫ জন। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মনীষা মুরলী নায়ার, মিস জোজো, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়। নাটকের দুনিয়া থেকে স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, শাঁওলি মিত্র, অর্পিতা ঘোষ। নৃত্যে অমলাশঙ্কর ও মমতাশঙ্কর।
সম্মান পেয়ে কিছুটা হলেও বিস্মিত সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদার। হাসতে হাসতে বললেন, “সকালে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে এক জন ফোন করে বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইছিলেন, উপহার পাঠাবেন। এতটাই আচমকা, কিছু ভেবে উঠতে পারিনি। যাক গে, উপহার-টুপহার পেতে কার না ভাল লাগে?”
সরকারি তালিকা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন রেখা কালিন্দী, সুনীতা মাহাতো, গায়ত্রী রাজোয়াড় বা শম্পা বাউরির কথা। বারো-তেরো বছরের এই মেয়েরা পুরুলিয়ার শিশুশ্রমিক স্কুলের ছাত্রী। কেউ থাকে প্রত্যন্ত গ্রামে, কেউ বা জেলাশহরের বস্তিতে। সকলের মা-বাবাই জোর করে তাদের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু এই মেয়েরা সেই চেষ্টা রুখে দিয়েছে। কেউ বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে এসেছে, কেউ বা স্কুলের শিক্ষকদের এসে বলেছে, তারা এখনই বিয়ে করতে চায় না। আরও পড়াশোনা করবে।
আরও চরম উপায়ও বেছে নিয়েছে কেউ। কান্দির দশম শ্রেণির ছাত্রী রাজনেহার খাতুন নিজেই বাড়ি
থেকে পালিয়ে রাতের অন্ধকারে দু’কিলোমিটার পথ হেঁটে থানায় এসে মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়। কৃষ্ণনগরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থিনী অনুরাধা মাহাতো মদ্যপ বাবার বিরুদ্ধে নিজেই থানায় নালিশ করে। মানসিক চাপ, মারধর ও যাবতীয় পারিবারিক হিংসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে এই মেয়েরা আজও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বছর নারী দিবসে রাষ্ট্রপুঞ্জের থিম, মহিলাদের প্রতি হিংসা শেষ করার চেষ্টা। ‘টাইম ফর অ্যাকশন টু এন্ড ভায়োলেন্স এগেন্সট উওম্যান।’ তালিকায় নাম থাকুক বা না-থাকুক, আজকের দিনটা রেখা, সুনীতা, অনুরাধাদের উদ্দেশেই উৎসর্গীকৃত। ‘ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড’ নারীদের দিকে অবশ্য নজর দিয়েছে এই তালিকা। ‘ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্লাইন্ড’-এর কাঞ্চন গাবা, কয়েক মাস আগে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে যে জিজা ঘোষকে বেসরকারি উড়ানে উঠতে দেওয়া হয়নি, তিনি ও বাঘমুন্ডি থেকে ৪৮ বছরে সাক্ষর হওয়া সোমবারি মাঝি, তিন জনের উদ্দেশেই পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রীর অভিনন্দন। |