শিক্ষার আলোয় ঘুচেছে আঁধার |
দেবমাল্য বাগচি • হলদিয়া |
দু’চোখে আঁধার। পরিবারের অস্বচ্ছলতাও সেই নিষ্প্রভতার কাছে মাথা নুইয়েছে। মহিষাদলের রামবাগের বছর তেইশের শম্পা মাজী কিন্তু অন্ধকারে হারিয়ে যাননি। ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করে এখন এলাকারই গয়েশ্বরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হয়েছেন শম্পা।
বাবা অনিল মাজী অন্ধ। দাদা প্রদীপও অন্ধ। ছোট্ট একচিলতে সংসারে মা প্রতিমাদেবীরই শুধু দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক। অনিলবাবু কখনও একশো দিনের কাজ, কখনও মুটে-মজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। ছেলে-মেয়েকে পড়ানোর সামর্থ্য ছিল না তাঁর। শম্পার দাদা প্রদীপ তাই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনো করে একটি মিষ্টির দোকানে কাজে লেগেছিলেন। কিন্তু অদম্য জেদকে সঙ্গী করে পড়াশোনা চালিয়ে যান শম্পা। ছোটবেলায় সামান্য দেখতে পেলেও মাধ্যমিকের সময় চোখে অস্ত্রোপচার করার পরে একশো শতাংশ দৃষ্টিহীন হয়ে যান তিনি। শম্পার কথায়, “ওতে জেদ আরও বাড়ে।” |
|
শম্পা মাজী। —নিজস্ব চিত্র। |
ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশুনো করে ২০০৯ সালে মাধ্যমিকে ৬০৪ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন শম্পা। গৃহশিক্ষকতার সামান্য টাকা ও চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম থেকে পাওয়া অনুদানের টাকায় পড়াশুনো। ২০১১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে মহিষাদল রাজ কলেজে ভর্তি হন শম্পা। কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়তে-পড়তেই প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়োগের পরীক্ষায় সফল হয়ে শিক্ষিকার চাকরিতে যোগ দেন তিনি। এর মধ্যেই বিয়ে করেছেন বাঁকুড়ার ৭৫ শতাংশ দৃষ্টিহীন যুবক সুশান্ত মাহাতোকে।
থাকেন বাপের বাড়িতে। সুশান্ত কলেজে পড়েন। প্রতি দিন সকালে স্বামীর হাত ধরে হেঁটে দেড় কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে পৌঁছন শম্পা। মাস তিনেক হল একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। নাম রেখেছেন শ্রাবন্তী। মেয়ের দৃষ্টিশক্তি নিয়ে এখনও কোনও ধারণায় পৌঁছতে পারেননি চিকিত্সেকরা। শম্পার কথায়, “মেয়েকে নিয়েই আমার যত চিন্তা। আমি যে যন্ত্রণায় দিন কাটাই, তার আঁচও যেন ওর গায়ে না লাগে।” |
|