সেলাইকলে স্বনির্ভরতার খোঁজ
ট বছর আগে স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর গাঁয়ের লোকেরা বলেছিলেন, “ছেলে-মেয়ে মানুষ হবে কী করে?” নন্দীগ্রামের গোপীমোহনপুরের চন্দনা জানা কিন্তু অন্যের কাঁধে আর ভরসা রাখেননি। অযাচিত সহানুভূতিকে দূরে সরিয়ে কাপড়ে নকশার কাজ তুলে স্বনির্ভরতার পথ খুঁজেছিলেন চন্দনা। ঘুরে দাঁড়ানোর সেই লড়াই বৃথা যায়নি। হাইস্কুলে পড়া দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আজ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন চন্দনা। শুধু তিনিই নন, পোশাক তৈরির কাজে হাত লাগিয়ে স্বনির্ভর হয়েছেন নন্দীগ্রামের এই এলাকার আরও অনেকে। বাড়িতে সেলাই মেশিন চালিয়ে স্কুলের পোশাক থেকে শুরু করে সালোয়ার কামিজ, শার্ট-প্যান্ট বানাচ্ছেন তাঁরা। সংসারে উপার্জন বাড়ায় ক্রমশ বদলে যাচ্ছে এলাকার আর্থ-সামাজিক চিত্র।
সংসারের কাজের ফাঁকেই পোশাক তৈরি। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
নন্দীগ্রামের দর্জি কারিগরদের বেশিরভাগই এক সময় কলকাতার মেটিয়াবুরুজে যেতেন কাজ করতে। তাহানগর, গোপীমোহনপুর, কাঞ্চননগর, গড়চক্রবেড়িয়া, দাউদপুর, বটতলা, ৭ নম্বর জালপাই প্রভৃতি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার পুরুষদের একটা বড় অংশ এখনও পোশাক তৈরির কাজে যুক্ত। কিন্তু গ্রামে বিদ্যুত্‌ সংযোগ চলে আসায় তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই এখন বাড়িতে সেলাইকল কিনে পোশাক তৈরি করেন। আর এই সুযোগে বাড়ির পুরুষদের সঙ্গে মহিলারাও পোশাক তৈরির কাজে হাত মিলিয়েছেন। গোপীমোহনপুর গ্রামের শেখ শামসুল হকের পরিবারের ৫ জন পুরুষ সদস্যের সঙ্গে সমান তালে কাজ করছেন বাড়ির চার মহিলা সদস্য মর্জিনা বিবি, মানসুরা বিবি, মুখরোজা খাতুন, মুসলেমা খাতুনও। গৃহস্থালীর কাজ সেরেই তাঁরা বসে যান সেলাইকলে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জামা-প্যান্ট তৈরি করেন নিপুণ দক্ষতায়। বাড়ির বড় ছেলে মইদুল বলেন, ‘‘আমি আগে মেটিয়াবুরুজে কাজ করতে যেতাম। গ্রামে বিদ্যুত্‌ আসায় এখন বাড়িতে সেলাইকল কিনে নিয়েছি। বাড়ির মহিলারাও হাত লাগানোয় সুবিধা হয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে আমরা এই ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।”
পোশাক তৈরির কাজে বিভিন্ন ধাপ। এক জনের জায়গায় তিন-চার জন মিলে কাজ করলে তাই তাড়াতাড়ি হয়। এ ছাড়া তৈরি করা জামা-কাপড় নিয়ে বাড়ির পুরুষরা যখন বাইরে বেরোন, তখন ঘরে বসে কাজ এগিয়ে রাখেন মেয়েরা। সবে মিলে উপার্জন বাড়ায় হাল ফিরছে সংসারে। এলাকারই যুবক শেখ সাবির আলি বলেন, ‘‘আমি মেটিয়াবুরুজে ১৫ বছর পোশাক তৈরির কাজ করেছি। বছর দু’য়েক হল গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসে একই কাজ করছি। বাড়িতে স্ত্রী নাজিমুন্নিসাও আমার সঙ্গে কাজ করেন। খুব সুবিধা হয়েছে।”
এলাকার অর্থনৈতিক মানচিত্রও যে বদলাচ্ছে ক্রমশ, মেনে নিয়েছেন স্থানীয় কেন্দেমারি পঞ্চায়েতের সদস্য মনোজ দাস।
সংসারের উপার্জনে হাত মিলিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে মেয়েদেরও। গোপীনাথপুরের আজমিরা বিবি বলেন, “আমার কাজ করার ফলে পরিবারের উপার্জন বাড়ায় ভাল লাগে। নিজেকে প্রয়োজনীয় মনে হয়। নিজের কাছে নিজের এই স্বীকৃতিটাও অনেক।” আর চন্দনার কথায়, “পোশাকে নকশার কাজ করেই আয়ের পথ দেখেছি। আগের তুলনায় রোজগার কিছুটা কমলেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে স্বাবলম্বী হবে। আমার মতো এলাকার অনেক মহিলাই এমব্রয়ডারির কাজ করছেন। নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা যে কত জরুরি, সেটা আমার চেয়ে বেশি কেউ জানে না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.