রানি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিসৌধে একে-৪৭ হাতে কঠিন মুখের জওয়ান। আর কিছুদিনের মধ্যেই এই দৃশ্যের সাক্ষী হতে চলেছে কলকাতা। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী বা সিআইএসএফ-এর হাতে। মোট ১২৫ জন সশস্ত্র জওয়ান নিয়োগ করা হবে ভিক্টোরিয়ায়।
শান্তিনিকেতন থেকে নোবেল চুরির ঘটনার পরে জাদুঘর ও প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালাগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সংগ্রহশালাগুলির নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে সুপ্রিম কোর্ট। তার ভিত্তিতেই ভিক্টোরিয়ায় সিআইএসএফ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের নির্দেশ পাওয়ার পরে জওয়ানদের থাকা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে সাহায্য চেয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠিও পাঠিয়েছে সিআইএসএফ। বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব বলেন, “দু’দিন আগেই আমরা নির্দেশ পেয়েছি। তার পরে রাজ্য সরকারকে চিঠি লেখা হয়েছে। রাজ্যের জবাব মিললেই কবে থেকে বাহিনী মোতায়েন হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” |
পশ্চিমবঙ্গে নোবেল চুরি ছাড়াও কলকাতার ভারতীয় জাদুঘর থেকে গৌতম বুদ্ধের মূর্তি চুরি যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু একে-৪৭ কাঁধে আধাসেনা মোতায়েন করলেই কি জাদুঘর বা সংগ্রহশালার নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করা সম্ভব হবে? মানছেন না সুভাষ দত্ত। তাঁর বক্তব্য, জাদুঘরের নিরাপত্তার বিষয়টি অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে পাহারা দেওয়ার থেকে আলাদা। এ ক্ষেত্রে সংগ্রহশালার সামগ্রী সম্পর্কে নিরাপত্তাকর্মীদের সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। কারণ গৌতম বুদ্ধের প্রাচীন মূর্তির প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বন্দুকধারী জওয়ানের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী প্রয়োজন। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে সুভাষবাবু বলেন, “এতে কিছুটা অন্তত লাভ হবে।”
ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের সাফল্যের প্রতীক হিসেবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল। উইলিয়াম এমারসনের পরিকল্পনায় তৈরি এই সংগ্রহশালাটি ১৯২১ সালে আমজনতার জন্য খুলে দেওয়া হয়। মেমোরিয়ালে রয়্যাল গ্যালারি ও ক্যালকাটা গ্যালারিতে অসংখ্য অমূল্য সামগ্রী, ছবি, মূর্তি রয়েছে। রয়েছে থমাস ড্যানিয়েল ও উইলিয়াম ড্যানিয়েলের আঁকা পুরনো কলকাতার ছবি। ভিক্টোরিয়ার বাগানেও অসংখ্য প্রস্তরমূর্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেই সবের প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। এহেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের নিরাপত্তা কতটা সামলাতে পারবেন সিআইএসএফ জওয়ানরা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণত বিমানবন্দর, কেন্দ্রীয় সরকারি দফতর, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ও বন্দরের নিরাপত্তার জন্য সিআইএসএফ মোতায়েন করা হয়। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ভিক্টোরিয়ার সুরক্ষা ব্যবস্থায় কোথায় খামতি রয়েছে, তা কয়েক বছর আগে সিআইএসএফ-ই পর্যালোচনা করেছিল। কাজেই সুরক্ষা ব্যবস্থার ফাঁকফোকর সম্পর্কে বাহিনী অবহিত।
সুভাষবাবুর বক্তব্য, নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত ঐতিহাসিক সামগ্রীর তালিকা তৈরি করা প্রয়োজন। তা না হলে কী কী রয়েছে আর কী চুরি হয়ে যাচ্ছে, সেটাই বোঝা যাবে না। নোবেল চুরি যাওয়ার পরে তদন্তে দেখা যায়, নোবেলের সঙ্গে আরও ৫০টি গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী চুরি গিয়েছে। আবার এমন অনেক সামগ্রী চুরি গিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছিল, যেগুলো আসলে চুরি যায়নি। এর থেকেই বোঝা যায়, বিভিন্ন সংগ্রহশালায় কত সামগ্রী রয়েছে, তার সঠিক হিসেব নেই। তাই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে হাতেকলমে খতিয়ে দেখে এই তালিকা তৈরি প্রয়োজন। |