কোথাও রাস্তায় শুয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে গোখরো। রান্না ঘরের বারান্দা দিয়ে ফনফনিয়ে যাচ্ছে কালাচ অথবা ঘরচিতি। আবার কোথাও দেখা মিলছে বেতআচরা ও লাউডগা। ঝোপ জঙ্গল থেকে বার হচ্ছে চন্দ্রবোড়া। সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় রায়গঞ্জ ব্লকের নানা এলাকার বাসিন্দাদের রাতের ঘুম উবে গিয়েছে। অভিযোগ, সমস্যা বন দফতরে জানিয়েও কাজ হয়নি। উল্টে খবর পেয়ে পরিবেশপ্রেমীরা সাপ ধরে বিপাকে। কুলিক পক্ষি নিবাসের জঙ্গলে সাপের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেখানে নতুন করে বাইরে থেকে ধরে আনা সাপ ছাড়তে দিতে বনকর্তারা অস্বীকার করছেন। বনমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।
বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেছেন, “এলাকার বনকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।” রায়গঞ্জে বিভাগীয় বনাধিকারিক অপূর্ব সেন বলেন, “পক্ষিনিবাসে সাপের সংখ্যা বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা সাপ চোপড়া জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গত একমাস রায়গঞ্জ ব্লকের কাশিবাটি, উদয়পুর, সুদর্শনপুর, দেবীনগর, রায়পুর, মাড়াইকুড়ায় সাপের উপদ্রব চলছে। ঘোরাফেরা করছে গোখরো, কালাচি, ঘরচিতি, লাউডগা, চন্দ্রবোড়া, কোবরা সহ বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপ। অভিযোগ, পরিস্থিতির কথা বন দফতরের কর্তাদের জানানো হলেও সাপ উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে পিপল ফর অ্যানিম্যাল সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছেন। সংগঠন সদস্যরা সাপ ধরার কাজ শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারি মাস তাঁরা ৮০টি সাপ ধরেন। সেগুলি পক্ষিনিবাসে ছেড়ে দিতে গেলে বনকর্তারা অস্বীকার করেন। পরে সেগুলি জেলার বিভিন্ন জঙ্গল, নদীর ধারে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পক্ষিনিবাসে জঙ্গলে দু’হাজার সাপ থাকার কথা। কিন্তু প্রায় ৬ হাজার সাপ রয়েছে। গত কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া সাপ সেখানে ছেড়ে দেওয়ার ফলে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পাশের গ্রামগুলিতে সাপ ঢুকে পড়ছে। কুলিক পক্ষিনিবাস সংলগ্ন মণিপাড়া এলাকার বাসিন্দা বাবু রায় বলেন, “পক্ষিনিবাস থেকে প্রায় দিন বাড়িতে সাপ ঢুকছে। হাঁস ও মুরগি খাচ্ছে। সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। ওই কারণে গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে বন দফতরের কর্তাদের কাছে কুলিক পক্ষিনিবাসে নতুন করে সাপ না ছাড়ার দাবি জানানো হয়েছে।” রায়গঞ্জের কাশিবাটির বাসিন্দা ব্যবসায়ী তুষার দাসের মতো অনেকে জানান, এলাকায় সাপের উপদ্রব বেড়ে চললেও বন দফতরের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই তাঁরা পিপল ফর অ্যানিম্যালের সদস্যদের খবর দেন। সংস্থা সম্পাদক গৌতম তান্তিয়া বলেন, “সাপ উদ্ধার হলেও বন কর্তারা নিতে চাইছেন না। সাপগুলি হেমতাবাদ, করণদিঘি ও রায়গঞ্জে বিভিন্ন জঙ্গল, নদী ও জাতীয় সড়কের ধারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।” |