নিজস্ব সংবাদদাতা • ব্যান্ডেল |
স্কুলছাত্রীকে কটূক্তি করা হয়েছে, এই অভিযোগে প্রকাশ্য দিবালোকে বাড়ির কাছেই বছর চব্বিশের এক যুবককে রাস্তায় ফেলে রড এবং রিভলভারের বাট দিয়ে চলছিল বেধড়ক মার। যুবকের চিৎকার শুনে ছুটে আসেন তাঁর দাদা। হামলাকারীরা রেয়াত করেনি তাঁকেও। ওই স্কুলছাত্রীর দাদাই দলবল নিয়ে হামলা চালান বলে অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার সকালে ব্যান্ডেলের মানসপুর এলাকার ঘটনা। প্রহৃত মুকেশ তাঁতি ও তাঁর দাদা বিনোদ তাঁতিকে গুরুতর জখম অবস্থায় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কটূক্তির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে প্রহৃতদের দাবি, এলাকায় সমাজবিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদ করার জন্যই তাঁদের মার খেতে হল। প্রায় একই বক্তব্য এলাকার বাসিন্দাদেরও।
এ দিন ঘটনার পর ওই ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে মুকেশের বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। ওই ছাত্রীর দাদার বিরুদ্ধে পাল্টা মারধরের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে মুকেশদের পরিবারের পক্ষ থেকে। হুগলির ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) দেবশ্রী সান্যাল বলেন, “ছাত্রীটির পরিবারের পক্ষ থেকে কটূক্তির একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুই যুবককে যারা মারধর করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। সমাজবিরোধী কার্যকলাপ রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নবম শ্রেণির ওই স্কুলছাত্রীর বাড়িও মানসপুর এলাকায়। স্কুলে যাতায়াতের পথে মুকেশ প্রায়ই তাকে কটূক্তি এবং উত্ত্যক্ত করতেন বলে অভিযোগ। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ মুকেশকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে তাঁর উপরে চড়াও হয় জনা বারো যুবক। তাদের হাতে ছিল ভোজালি, রড এবং রিভলভার। মারধরে মুকেশের মাথা-মুখ ফেটে যায়। একই অবস্থা হয় তাঁর দাদা বিনোদেরও। দুই ভাইকে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে মারধর করে দুই ভাইকে রাস্তায় ফেলে রেখে চম্পট দেয় হামলাকারীরা। |
তাঁর বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মুকেশ দাবি করেন, “এলাকায় রাস্তার ধারে মদের আসর বসছে। দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরছে। এ সবের প্রতিবাদ করাতেই আমাকে মারা হল। ওই ছাত্রীর দাদা দুষ্কৃতীদের সঙ্গে এনেছিল। না হলে রিভলভার আসবে কী ভাবে? কটূক্তির অভিযোগ পুরোপুরি সাজানো।” একই বক্তব্য বিনোদেরও।
ওই ছাত্রীই এ দিন পুলিশের কাছে মুকেশের বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগ দায়ের করে। তবে, হামলার ঘটনার পরে কেন ওই অভিযোগ দায়ের হল, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি ছাত্রীর বাবা। তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে হামলার যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়েও তিনি মুখে কুলুপ আঁটেন।
এলাকায় সমাজবিরোধী কার্যকলাপ যে বেড়ে গিয়েছে তা বলছেন স্থানীয় লোকজনও। কাজিডাঙার বাসিন্দা পান্নালাল দত্ত বলেন, “সম্প্রতি ব্যান্ডেলে চুরি, ডাকাতি, তোলাবাজি বেড়ে গিয়েছে। পুলিশ কোনও কড়া পদক্ষেপ করছে না। সে সব দেখলে মুকেশ প্রতিবাদ করতেন। সেই কারণেই মনে হয় তাঁকে মার খেতে হল। ও কটূক্তি করার ছেলে নয়।” মানসপুরের বাসিন্দা অনির্বাণ সাহা বলেন, “সন্ধ্যা হলেই রাস্তায় বেরোতে ভয় লাগে। নানা জায়গায় রাস্তায় মদের আসর বসে যায়। দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অবাধে ঘুরছে। পুলিশ কিছু করছে না। মুকেশ এ সব নিয়ে সরব হওয়াতেই তাঁকে মার খেতে হল।” |