চাকার নীচে দুলছে সেতু, পথ যেন পঞ্চভূতে বিলীন
বাম আমলে তৈরি হয়েছিল সেতুটি। পাঁচ বছর না যেতেই সেই সেতুর অবস্থা বিপজ্জনক বলে অভিযোগ করলেন বামফ্রন্ট পরিচালিত বালি পুরসভার কর্তারাই।
সেতুটির অবস্থা খুবই খারাপ এবং ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য তা উপযুক্ত নয় বলে উল্লেখ করে পূর্ত দফতরের কাছে কয়েক বার চিঠিও পাঠিয়েছেন বালি পুরসভার চেয়ারম্যান, সিপিএমের অরুণাভ লাহিড়ী। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, তাতে কোনও কাজ হয়নি।
ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় তিনশো কারখানা রয়েছে লিলুয়ায়। রোজ গড়ে কয়েক হাজার ভারী মালবাহী যানবাহন এই উড়ালপুল দিয়ে জিটি রোড থেকে লিলুয়া শিল্পাঞ্চলে যাতায়াত করে। এ ছাড়া, উড়ালপুল তৈরির পরে লিলুয়া রেল গেট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য যানবাহন ও পথচারীরাও ওই উড়ালপুল দিয়েই যাতায়াত করেন। অরুণাভবাবু জানান, ভারী যানবাহন চলাচল করার সময়ে সেতুটি দুলতে থাকে। তখন দাঁড়াতেও ভয় হয়। তার উপরে পিচ উঠে কয়েকটি গর্ত তৈরি হওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়েছে। তিনি বলেন, “গত বছর জুনে পূর্ত দফতরকে প্রথম চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি। তার মাস দুয়েক পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের গণআবেদন-সহ আরও একটি চিঠি পাঠিয়েছি। আজও কোনও কাজ হয়নি।”
এরও নাম রাস্তা। লিলুয়ার সেই উড়ালপুলের এখন এমনই হাল। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
১৯৮৭ সালে লিলুয়া রেল গেটে নিত্যদিনের যানজট কমাতে রেলযাত্রী সমিতির সদস্যেরা তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী যতীন চক্রবর্তীর কাছে উড়ালপুল তৈরির দাবি জানান। ১৯৯১ সালে সিদ্ধান্ত হয়, রাজ্য সরকার ও রেল যৌথ উদ্যোগে কাজটি করবে। ’৯৮-এর ১৮ এপ্রিল তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী উড়ালপুলের শিলান্যাস করেন। ঠিক হয়, ’৯৯ সালের মধ্যে কাজটি শেষ হবে। কিন্তু রেল ও স্থানীয় কিছু জটিলতায় কাজটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়নিা। নানা টালবাহানার পরে ২০০৮ সালে ক্ষিতিবাবু সেতুটির উদ্বোধন করেন। পুরসভা সূত্রের খবর, উড়ালপুলটি লিলুয়া স্টেশনের পূর্বে বালির দিকে মাতোয়ালা চৌরাস্তা থেকে শুরু হয়ে পশ্চিম দিকে গোশালা রোডে গিয়ে মিশেছে। ৬১৭.৪৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭.৫ মিটার প্রস্থের ওই সেতুর দু’দিকে ১.২ মিটার করে ফুটপাথ। ব্রিজটি তৈরিতে খরচ হয়েছিল ১২ কোটি ৪৪ লক্ষা টাকা। রেল ও রাজ্য যৌথ ভাবে কাজের খরচ বহন করেছিল। উড়ালপুলটি তৈরির পর থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক শুরু হয়। আলোর ব্যবস্থা পরবর্তীকালে হলেও ডিভাইডার, সংযোগকারী রাস্তা কিছুই হয়নি।
এক বছর ধরে সেতুটির বেহাল অবস্থার বিষয়ে পুরসভার তরফে দফায় দফায় পূর্ত দফতরকে জানানো হলেও মেরামতির জন্য ওয়ার্ক-অর্ডারই হয়েছে মাত্র দু’সপ্তাহ আগে। সে কাজও যে এখনও শুরু হয়নি, তা জানেনই না পূর্ত দফতরের কর্তারা। দফতরের হাওড়া ডিভিশনের সড়ক বিভাগের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সত্য বসু বলেন, “কেন কাজ শুরু হয়নি, তা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”
সম্প্রতি উড়ালপুলটিতে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার বেশ কিছু জায়গায় পিচ উঠে খোয়া বেরিয়েছে। তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। সঙ্গে বিপজ্জনক ভাবে বেরিয়ে রয়েছে লোহার রড। আর সেই গর্ত বাঁচিয়ে ডিভাইডারহীন উড়ালপুলে যাতায়াত করছে মালবাহী লরি, ট্রাক। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এমনিতেই উড়ালপুলটিতে লরিগুলি নিজেদের মর্জি মতো, বেপরোয়া ভাবে চলাচল করে। তার পাশাপাশি সাইকেল, স্কুলভ্যানের মতো কম গতির যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। আবার গোদের উপর বিষফোড়ার মতো রাতে উড়ালপুলটিতে কার্যত আলো জ্বলে না বললেই চলে। স্থানীয় বাসিন্দা রবি সাহা বলেন, “তীব্র গতিতে চলতে গিয়ে গর্তে চাকা পড়লে আচমকা ব্রেক কষতে হচ্ছে ভারী লরিগুলিকে। যে কোনও সময় টাল সামলাতে না পেরে উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” বাম আমলে তৈরি হওয়া উড়ালপুল পাঁচ বছরের মধ্যেই বেহাল কেন? অরুণাভবাবু বলেন, “এই বিষয় নিয়ে কোনও রাজনীতি করতে চাই না। মানুষের নিরাপত্তাটাই প্রধান। উল্টোডাঙার ঘটনার পরে আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছি।” অন্য দিকে সত্যবাবু বলছেন, “উড়ালপুলটির অবস্থা এখনই খুব বিপজ্জনক না হলেও যে হারে ভারী লরি যাতায়াত করে তাতে ক্ষতি হতেই পারে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.