|
|
|
|
মাঝরাস্তার বাগান |
জল দেবে কে, কাজিয়ায় শুকোচ্ছে গাছ |
অনুপ চট্টোপাধ্যায় |
শহর সাজাতে মুখ্যমন্ত্রীর ‘প্রেসক্রিপশন’ মেনে কলকাতার রাজপথে কংক্রিটের দেওয়ালের মাথায় গাছ তো হল। কিন্তু আর ক’দিন বাদে চাঁদিফাটা গরমে তারা রক্ষা পাবে কি না, তা নিয়েই এখন সংশয়। কারণ ওই গাছের দেখভাল নিয়ে কলকাতা পুরসভার দুই দফতরে শুরু হয়েছে জোর তরজা গাছে জল দেবে কে?
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, শরৎ বসু রোড জুড়ে রাস্তার মাঝখানে তৈরি হয়েছে দেওয়াল। পোশাকি নাম, মিডিয়ান স্ট্রিপ। পুরসভার সিভিল দফতর প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার ওই স্ট্রিপ তৈরি করেছে। তাতে ছোট ছোট চারাও লাগানো হয়েছে। কিন্তু দিনভর রাস্তার মাঝে চড়া রোদে আর প্রচণ্ড ধুলোয় ইতিমধ্যেই তাদের হাল বেশ খারাপ। নিয়মিত জলও জুটছে না অনেক জায়গায়। এর উপরে রাস্তায় রয়েছে আরও সাড়ে ১৩ কিলোমিটার উদ্যান।
বলতে গেলে গ্রীষ্ম এসেই গিয়েছে। এর পরেও এমন চলতে থাকলে ‘নটে গাছটি মুড়োল’ হতেও দেরি হবে না। এই অবস্থার কথা জানতে পেরেই গাছে জল দেওয়া ও পরিচর্যার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে পুরসভার উদ্যান দফতরের উপরে। আর এতেই ক্ষোভ ওই দফতরের। সেখানকার আধিকারিকেরা বলছেন, “গাছ লাগানোর দায়িত্ব তো আমাদের দেওয়া হয়নি। এমনকী, আমাদের মতও জানতে চাওয়া হয়নি। সিভিল দফতর নিজেরাই যা করার করেছে। তা হলে বাকিটাও তারাই করুক।” ওই আধিকারিকদের আরও বক্তব্য, এখন ওই গাছ বাঁচাতে যে নজরদারি দরকার, তেমন পরিকাঠামো তাঁদের নেই। উদ্যান দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “বছর দুয়েক ধরে অপরিকল্পিত ভাবে শহর জুড়ে গাছ লাগানো হয়েছে। গাছ বিশেষজ্ঞদের কোনও পরামর্শ না নিয়েই তা করেছে সিভিল দফতর। বসানোর পরে এখন রক্ষণাবেক্ষণের দায় ওরা ঝেড়ে ফেলতে চাইছে!” |
|
চাপান-উতোরের কেন্দ্রে এই গাছগুলিই। —নিজস্ব চিত্র |
উদ্যান দফতরের বক্তব্য মানতে নারাজ সিভিল দফতরের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, “আমরা যা করেছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই। আর ওই সব গাছে কারা জল দেবে, তা-ও ঠিক করেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ, আমরা নয়।” পুরসভা সূত্রের খবর, সমস্যা শুরু হয়েছে চৌরঙ্গি রোডের উপরে (উড়ালপুলের শেষ প্রান্তে) প্রায় ২০০ মিটারের একটি উদ্যান ঘিরে। বছরখানেক আগে সেটি নির্মাণ করে পুরসভার সিভিল দফতর। এক বছরের শর্ত অনুযায়ী, নির্মাণকারী সংস্থা এত দিন তাতে জল
দেওয়ার কাজ করেছে। এখন তা শেষ হওয়ায় নতুন করে জল দেওয়ার দায়িত্ব বর্তেছে উদ্যান বিভাগের উপর। আর এতেই চটেছেন উদ্যান দফতরের কর্মীরা।
উদ্যান বিভাগের বক্তব্য, তাদের দায়িত্বে সাড়ে ছ’শোরও বেশি পার্ক রয়েছে। সেখানকার গাছপালার দেখভাল করতে হয়। এর জন্যই যত লোকজন প্রয়োজন, তা নেই ওই বিভাগের। তার উপরে আবার নতুন করে দায়িত্ব! তা হলে গাছের কী হবে? পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, “লাগানো যখন হয়েছে, গাছ তো বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। জলও দিতে হবে।” কিন্তু সেই কাজটা করবে কে? এ বিষয়ে উদ্যান বিভাগের এক অফিসার বলেন, “সেটা পুর-কর্তৃপক্ষই ঠিক করুক।”
দুই বিভাগের কাজিয়ায় যাতে গাছের প্রাণ না যায়, তার জন্যই এ বার তৎপর পুর-কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবারই পুর ভবনে কয়েকটি বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে বসেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। পরে মেয়র শোভনবাবু বলেন,“চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে মিডিয়ান স্ট্রিপের গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এলআইসি-র সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ওই গাছ দেখভালের দায়িত্ব নিতে রাজি।
অন্য স্ট্রিপের গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও অন্য বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে কথা হচ্ছে।” এ দিন সন্ধ্যায় পুর কমিশনার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেন, সিভিল বিভাগই এ বার থেকে রাস্তার গাছ ও বাগান দেখভালের দায়িত্বে থাকবে। পুর প্রশাসনের নির্দেশের পর উদ্যান বিভাগ স্বস্তি পেলেও সিভিল দফতরের কর্মীদের আশঙ্কা বেড়েছে। বাকি সব রাস্তার গাছ দেখভালের জন্য জোরকদমে সংস্থা খোঁজার কাজ শুরু করেছেন তাঁরাও। |
|
|
|
|
|