ভারী লরির ওজনে চুরি বিপদ বাড়াচ্ছে সেতুর
র্ষের মধ্যেই ভূত! তার জেরেই অনুমোদিত ওজনের চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ ভারী পণ্যবাহী ট্রাক যাচ্ছে যত্রতত্র। ভাঙছে রাস্তা।
গত রবিবার ভোরে উল্টোডাঙার উড়ালপুলেও মার্বেলবোঝাই গাড়ি উঠে পড়ার পরেই দুর্ঘটনা ঘটে। তার পরেই এ বার সেই মুশকিল-আসানের পথ খুঁজতে আলোচনা শুরু করেছেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। সেই আলোচনাতেই উঠে এসেছে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলাচলকারী ট্রাকের প্রসঙ্গ। উল্টোডাঙা উড়ালপুল নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেএমডিএ-র তৎকালীন চিফ ইঞ্জিনিয়ার আনন্দ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ভারী লরি উড়ালপুলের কোনও বাঁকে বেসামাল হয়ে গেলে ফের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এই সব উড়ালপুলে এ ধরনের গাড়ি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।”
একই মন্তব্য স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার অলোক সরকারেরও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বড় উড়ালপুল নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত অলোকবাবু বলছেন, সেতু-দুর্ঘটনা এড়াতে অন্যতম সতর্কতা হল বাঁকের মতো বিশেষ স্থানে ভারী গাড়ি নিয়ন্ত্রণ।
এ ব্যাপারে কী ভাবছে পুলিশ? রাজ্য পুলিশের ডিজি (ট্রাফিক) গৌতমমোহন চক্রবর্তী কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক জানিয়েছেন, “কোন উড়ালপুল কত ভার বহন করতে পারে, তা জানতে চাওয়া হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কাছে। উড়ালপুলের অবস্থা পরীক্ষা করানোর কথাও হবে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে পুলিশ-কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।”

বে-লাগাম লরি

অনুমোদিত বাস্তবে
চাকা খালি পণ্য-সহ পণ্য-সহ
১৮
১০ ১৬ ৪০
১২ ১১ ২১ ৪৫
১৪ ১৪ ২৮ ৫৬
১৮ ১৬ ৩৫ ৬৫
* লরিতে মালের ওজন (টন)
সূত্র: ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন

উল্টোডাঙার দুর্ঘটনার নেপথ্যে থাকা, রাজস্থান থেকে আসা মার্বেলবোঝাই লরিটি ছিল ২৭ টনের। ১৯৩৯ সালের মোটর ভেহিক্লস আইন (পরবর্তীতে সংশোধিত) অনুযায়ী অনুমোদিত ওজনের চেয়ে বেশি মাল লরিতে তুললে দোষীর শাস্তির বিধান আছে। ওই আইনের ১৯৪ ধারা বলছে, ন্যূনতম দু’হাজার টাকা এবং অনুমোদিত পণ্যের চেয়ে যতটা বাড়তি হচ্ছে, তার টনপিছু হাজার টাকা করে জরিমানা নেওয়া হয়। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, নির্দিষ্ট জরিমানার বদলে অনেক ক্ষেত্রেই কয়েকশো টাকা পুলিশের হাতে গুঁজে পার পেয়ে যান চালক।
ভিন্রাজ্য থেকে পণ্যবাহী লরির ওজনে নজরদারির জন্য জাতীয় সড়কে আছে সরকারি ‘ওয়েব্রিজ’। যার মধ্যে প্রধান তিনটি হল জলপাইগুড়ির বারোভিসা (অসম-ত্রিপুরা এবং সংলগ্ন অঞ্চল থেকে আসা লরির জন্য), ঝাড়গ্রামে লোধাশুলির চার কিলোমিটার আগে বেলতলা (দক্ষিণ ভারতের রাজ্য থেকে আসা লরির জন্য) এবং আসানসোল (উত্তর ভারতের রাজ্য থেকে আসা লরির জন্য)। ‘ব্লু-বুকে’ দেওয়া থাকে সংশ্লিষ্ট গাড়ির ওজন। মালবাহী পুরো ওজন থেকে খালি গাড়ির ওজন বাদ দিয়ে পণ্যের ওজন নির্ধারিত হয়। এর ভিত্তিতেই জরিমানার পরিমাণ ধার্য করার কথা। কিন্তু ওয়েব্রিজগুলিতে সরকারি খরচে যে সব পরিমাপ-যন্ত্র অর্থাৎ ‘কাঁটা’ বসানো হয়েছিল, সেগুলো গোড়াতেই অচল হয়ে যায়। অভিযোগ, গোড়াতেই ওগুলো খারাপ করে দেওয়া হয়।
‘ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ মজুমদারের অভিযোগ, “লরিতে অনুমোদিত মালের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মাল তোলা হচ্ছে। যে সব জায়গায় এগুলো ওজন করার কথা, পুলিশ-প্রশাসনের একাংশকে ঘুষ দিয়ে চলে আসছে লরি। সমস্যার কথা আমরা সরকারকে বহু বার বলেছি। লাভ হয়নি।”
কেন এই অবস্থা? ২০০৫ থেকে ২০০৭ প্রায় দু’বছর ঝাড়গ্রামের চেকপোস্টের কর্তা (এআরটিও) ছিলেন জয়ন্ত বিশ্বাস। তাঁর জবাব, “যন্ত্র খারাপ থাকলেও কাজ চলে যাচ্ছিল। খুব সমস্যা হয়নি।” চেকপোস্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত আর এক প্রাক্তন এআরটিও অরুণাভ কবিরাজ বলেন, “আমি দায়িত্বে এসে ‘কাঁটা’ ঠিক করার জন্য উপরমহলে লেখালেখি করেছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।”
কেন? তাঁর জবাব, “মনে হয়, উপরওয়ালাদের উদ্যোগ-আগ্রহের অভাবে এই অবস্থা।”
এ রকম অবস্থায় কেবল সেতু এবং রাস্তার নিরাপত্তাই বিঘ্নিত হচ্ছে না, মার খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট জরিমানা খাতে সরকারের আয়ও। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এ কথা স্বীকার করে বলেন, “সমস্যাটা দূর করা দরকার। এ নিয়ে আমি বিভিন্ন স্তরে কথা বলেছি। আগের থেকে আইন আরও কড়া হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে কিছুটা।” আইন কি সত্যিই কড়া হয়েছে? পরিবহণ-কর্তারা বলেন, “জাতীয় সড়কের বিভিন্ন অংশে বেসরকারি চেকপোস্ট আছে। সরকারি চেকপোস্টের ওজনযন্ত্র খারাপ থাকলেও নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত বেসরকারি যন্ত্রে ওজন মাপলেও চলবে। এখন কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রে এই ওজন মাপা বাধ্যতামূলক হয়েছে।” এ ছাড়াও অনুমোদিত ওজনের চেয়ে বেশি মাল বহন করলে লরি আটকে বাড়তি মাল রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও তাঁদের দাবি।
অভিযোগ, এখানেই দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে। বেড়েছে উৎকোচের পরিমাণও। সমস্যার কথা স্বীকার করে অরুণাভ কবিরাজ বলেন, “অত বড় লরির জিনিস কারা নামাবেন? কোথায় রাখবেন? সাময়িক আটক জিনিসের দায়িত্ব কে নেবেন?”
এই অবস্থায় প্রশাসন কী ভাবছে?
“সমস্যাটা পুরনো। গভীর ভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।” প্রতিক্রিয়া পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তবে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলছেন, “উড়ালপুলের উপরে কত ওজনের মালবাহী লরি যেতে পারে, তা জানার চেষ্টা হবে। এর পরে সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকা জারির সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু উড়ালপুলে মালবাহী লরি চলাচল বন্ধ করাও হতে পারে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.