গ্রেফতারই হবে মুন্না, ঠিক করেছিল সিআইডি
ত্মসমর্পণ না গ্রেফতার এই নিয়ে তুঙ্গে উঠেছিল স্নায়ুযুদ্ধ। শেষ বাজিতে জয় হল সিআইডি-রই। আত্মসমর্পণ করার কোনও সুযোগ না দিয়েই তাপস চৌধুরী হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত মহম্মদ ইকবালকে (মুন্না) গ্রেফতার করা হল। শুক্রবারই শুরু হচ্ছে বিধানসভার বাজেট অধিবেশন। সেখানে মুন্নার অধরা থাকা নিয়ে সরকারকে বিঁধতে আস্তিন গোটাচ্ছিল বিরোধীরা। কিন্তু আগের দিন রাতেই তাঁকে পাকড়াও করে বিরোধী অস্ত্র অনেকটা ভোঁতা করে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে ইকবাল শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পরে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। মুন্নার বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেকটর তাপস চৌধুরীকে খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেও ফিরহাদ মহাকরণে বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি না, মুন্না এ কাজ করতে পারে।” যদিও টেলিভিশনের ছবিতে স্পষ্টই দেখা যায় খুনের সময়েও ইবনে এবং সুহানের (যারা গুলি চালিয়েছিল) সঙ্গেই ছিলেন মুন্না। তাঁকে গ্রেফতার করা না হলে যে পুলিশের মধ্যে ক্ষোভের আঁচ লাগামছাড়া হয়ে যেতে পারে, তা মহাকরণের কর্তাদের জানিয়ে দিয়েছিল লালবাজার।
পুলিশের অনমনীয় এই মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতেই গা ঢাকা দেয় মুন্না। প্রথমে তাঁর ধারণা ছিল, রাজনৈতিক নেতারাই এ বারও তাঁকে রক্ষা করবেন। তখন ফের প্রকাশ্যে আসবেন বরো চেয়ারম্যান মুন্না। কিন্তু নেতারা তাঁর পাশে সে ভাবে দাঁড়াননি। বরং শাসক দলের নেতাদের কাছ থেকে নির্দেশ আসে অবিলম্বে তিনি যেন আত্মসমর্পণ করেন।
কিন্তু এই নির্দেশ মানতে রাজি হননি মুন্না। প্রথমে তাঁর শর্ত ছিল, ইবনে এবং সুহান যত দিন পুলিশ হেফাজতে থাকবে, তত দিন তিনি ধরা দেবেন না। তাঁর মতো ‘উঁচু দরের নেতা’ ইবনে-সুহানের মতো ‘দুষ্কৃতীদের’ সঙ্গে পুলিশ হাজতে থাকবে, তা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। গত সোমবার ইবনে এবং সুহান পুলিশ হেফাজত থেকে জেল হেফাজতে যায়। তখন আইনজীবী এবং তাঁর পরিচিত নেতাদের মাধ্যমে ফের পুলিশের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হয় মুন্নার। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই সময়ে মুন্নার ধারণা হয় খুনের মামলা না থাকা সত্ত্বেও তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলাম ৪৩ দিন জামিন পাননি। তিনি খুনের মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় তাঁর জামিন পেতে আরও বেশি দেরি হবে। শাসক দলের পক্ষ থেকে অবশ্য তাঁকে বোঝানো হয় যে, এ নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। দলীয় সূত্রের খবর, এ নিয়ে সম্প্রতি মুন্নার সঙ্গে শাসক দলের এক শীর্ষ নেতার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এর পরে আত্মসমর্পণের ব্যপারে নিমরাজি হন মুন্না।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছিলেন, আত্মসমর্পণ না করিয়ে মুন্নাকে গ্রেফতারই করা হোক। না হলে প্রশাসনের সম্পর্কে মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছবে। সিআইডি-র গোয়েন্দাদের একটি বড় অংশও প্রথম থেকেই মুন্নার আত্মসমর্পণের ব্যাপারে তাঁদের আপত্তির কথা জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদেরও বক্তব্য ছিল, মুন্নাকে গ্রেফতার না করতে পারলে সিআইডি-র ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এডিজি (সিআইডি) শিবাজী ঘোষ বলেন, “আমরা বদ্ধপরিকর ছিলাম, যে কোনও মূল্যে মুন্নাকে গ্রেফতার করা হবে।” ওই গোয়েন্দা অফিসারেরা প্রতিনিয়ত মুন্নার সন্ধানে ভিন রাজ্যে হানা দিচ্ছিলেন। মঙ্গলবার সিআইডি-র অফিসারেরা জানতে পারেন আলিগড়ের কোনও ঠিকানায় মুন্না গা ঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে গিয়েও মুন্নার জ্ঞাতি ভাই ও তাঁদের সঙ্গীদের বাধার মধ্যে পড়ে কিছুটা সময় নষ্ট হয় গোয়েন্দাদের। এর মধ্যেই পালান মুন্না। রওনা হয়ে যান বিহারের উদ্দেশে। ফের ‘ফিলার’ আসতে থাকে, বৃহস্পতিবার কলকাতায় এসে আত্মসমর্পণ করবেন মুন্না। সিআইডি-র এক কর্তা বলেন, “আমরা ঠিক করেছিলাম, কোনও মতেই ওঁকে আত্মসমর্পণ করার সুযোগ দেব না।” সেই মতো সিআইডি-র প্রায় সমস্ত অফিসারই এ দিন হাওড়া স্টেশন এবং কলকাতা বিমানবন্দর ঘিরে রেখেছিলেন। বিহার থেকে আসা সমস্ত ট্রেন খুঁটিয়ে দেখা হতে থাকে। পাশাপাশি খতিয়ে দেখা হতে থাকে মুন্নার টেলিফোন নম্বরগুলিও। তা থেকেই জানা যায়, মুন্না বিহারে গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সতর্ক করা হয় বিহার পুলিশকে। ধরা পড়েন মুন্না। শিবাজীবাবু বলেন, “মুন্নাকে গ্রেফতার করার যে সংকল্প নিয়েছিলাম, তা করে দেখানো গেল।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.