ফোনের পরই পাকড়াও বিহার থেকে
লকাতা ছাড়ার আগেই বন্ধ করে দিয়েছিলেন নিজের মোবাইল ফোন। তার পর থেকে ছুটে বেড়িয়েছেন রাজ্যে রাজ্যে। কোথাও এক রাতের বেশি কাটাননি। শুধু বুথ থেকে ফোন করে যোগাযোগ রাখতেন কলকাতায় নিজের লোকজনের সঙ্গে। ফোনে সেই যোগাযোগই শেষ পর্যন্ত কাল হল তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার। ফোনের সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার তাঁকে জালে ফেলল সিআইডি।
গার্ডেনরিচ কাণ্ডের তেইশ দিনের মাথায় ডেহরি অন শোন থেকে ধরা পড়লেন পলাতক বরো চেয়ারম্যান।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যখন তিনি বিহারের ওই শহরের স্টেশন লাগোয়া একটি বুথ থেকে কলকাতায় ফোন করছিলেন, তখনই সিআইডি তাঁর হদিস জেনে যায়। তাদের দেওয়া সেই সূত্র ধরেই মুন্নাকে গ্রেফতার করে বিহার রেল পুলিশ। আরও জানা গিয়েছে, আজ, শুক্রবার তাঁকে স্থানীয় আদালতে পেশ করা হবে। দুপুরেই তাঁকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেবে সিআইডি-র দল। এ দিন রাতে সিআইডি-র এডিজি শিবাজী ঘোষ বলেন, “আমাদের দেওয়া সূত্র ধরে মুন্নাকে ডেহরি অন শোন-এ গ্রেফতার করেছে বিহার পুলিশ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসব।”
গত ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন কলকাতা পুলিশের অফিসার তাপস চৌধুরী। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন বন্দর এলাকার এই তৃণমূল নেতা। অভিযুক্ত ছিলেন কংগ্রেস নেতা মোক্তারও।
সম্প্রতি মোক্তারকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। কিন্তু ভিন্ রাজ্যের তাঁর একাধিক গোপন ডেরায় হানা দিয়েও মুন্নাকে ধরতে পারছিলেন না গোয়েন্দারা। বারেবারেই হাত ফস্কে পালাচ্ছিলেন ফেরার এই তৃণমূল নেতা। কখনও আলিগড় তো কখনও লখনউ বা পটনা করে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
কী ভাবে ধরা সম্ভব হল মুন্নাকে?
ডেহরি অন শোন স্টেশন। বিহার রেল পুলিশের হেফাজতে মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না।
বৃহস্পতিবার রাতে ছবিটি তুলেছেন সঞ্জয় চৌধরি।
সিআইডি সূত্র বলছে, গত ১৫ দিন ধরে মুন্নার ঘনিষ্ঠ কয়েক জনের মোবাইলে আড়ি পেতেছিল পুলিশ। সেখান থেকেই তারা জানতে পারে, মুন্না এক রাতের বেশি এক জায়গায় থাকছেন না। এমনকী, এক দিনে তিন-চার বারও ডেরা বদলেছেন তিনি। কিন্তু কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ কখনওই বন্ধ করেননি মুন্না। আর তাতেই সিআইডি-র কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায় বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। মোবাইল ফোনে আড়ি পেতে পুলিশ জানতে পারে, গত ১৫ দিনে পটনা, রাঁচি, লখনউ, ফিরোজাবাদ, গাজিয়াবাদ, দিল্লি, কানপুর ও আলিগড়ে ডেরা বেঁধেছিলেন মুন্না। কখনও পরিচিতের বাড়ি, কখনও বা আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন তিনি। এ ভাবেই আলিগড়ে এক পরিচিতের বাড়িতে থাকাকালীন বুধবার তাঁর খোঁজ পায় সিআইডি। কিন্তু স্থানীয় মানুষের বাধায় গোয়েন্দা-পুলিশের হাত ফস্কে পালাতে সক্ষম হন তিনি।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে বুধবার রাতে সিআইডি-র একটি দল আলিগড়ে মুন্নার এক পরিচিতের বাড়িতে হানা দেয়। বাইরে থেকে বাড়ি ঘিরেও ফেলা হয়। কিন্তু এক দল স্থানীয় মানুষ হঠাৎই সিআইডি-র উপরে চড়াও হয়। বেগতিক দেখে জনরোষ থেকে বাঁচতে স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করেন সিআইডি-র অফিসারেরা। সব মিলিয়ে একটি লন্ডভন্ড অবস্থা তৈরি হয়। আর সেই সুযোগে পালিয়ে যান মুন্না। তাঁকে পালানোয় মদত দেওয়ার অভিযোগে পরে ওই এলাকার তিন যুবককে গ্রেফতার করা হয়।
এ দিন ধরা পড়ার পরে পুলিশকে মুন্না জানান, ওই ঘটনার দিনই আলিগড় থেকে ট্রেনে চেপে কানপুরে আসেন তিনি। সেখান থেকে অন্য একটি ট্রেনে চেপে এ দিন সকালে নামেন পটনায়। তার পর চলে যান বিহারেরই রোহতাস জেলায় বিক্রমগঞ্জের কারাকাটে এক মেলায়। কিন্তু সেখানে বেশি ক্ষণ ছিলেন না মুন্না। পটনায় ফিরে ট্রেনে চেপে সন্ধ্যায় নামেন ডেহরিতে।
মুন্না এ দিন আরও জানান, স্টেশন থেকে বেরিয়ে একটি বুথে ঢুকে তিনি কলকাতায় মেয়ে সাবাতাজকে ফোন করেন। সাবাতাজ তাঁকে ধরা দিতে বলেন। মেয়ের সঙ্গে কথা বলে মুন্না ঠিক করেন, ডেহরি থেকে গাড়ি ভাড়া করে তিনি জামশেদপুর আসবেন। মেয়ে জানান, জামশেদপুর এলে তাঁরা মুন্নাকে কলকাতায় আনার ব্যবস্থা করবেন। সেই মতো ছ’হাজার টাকায় একটা গাড়ি ভাড়াও করেন মুন্না। কিন্তু পরে ছক বদলান ফেরার এই তৃণমূল নেতা। মেয়েকে ফোন করে জানান, হাওড়াতেই ফিরবেন। পুলিশ যেন সেখানেই থাকে। তার পরে বেশ কিছু ক্ষণ স্টেশনেই ছিলেন তিনি।
পুলিশ জানাচ্ছে, সিআইডি কিন্তু তত ক্ষণে জেনে গিয়েছিল, মুন্না ডেহরিতেই রয়েছেন। এ কথা জানিয়ে ডেহরি অন শোন স্টেশনে রেল পুলিশের ওসি রাজকুমারের কাছে ফোন যায় ভবানী ভবন থেকে। রাজকুমার জানতে চান, কী ভাবে তিনি ইকবালকে চিনবেন? তখন মুন্নার একটি ছবি মেল করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। সেই ছবি হাতে নিয়েই মুন্নাকে ধরে ফেলে পুলিশ। তিনি তখন গাড়িতে ওঠার মুখে।
এর পরেও কি তাঁকে বরো চেয়ারম্যান পদে রেখে দেবে কলকাতা পুরসভা? রাতে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গ্রেফতারের সঙ্গে পদ যাওয়ার সম্পর্ক নেই। বরো চেয়ারম্যান হিসেবে ৩১ মার্চ তাঁর মেয়াদ ফুরোচ্ছে। তার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.