রাস্তার কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার অপরাধে অন্তঃসত্ত্বাকে গুলি করে খুনের ঘটনায় রতুয়ার বিলাইমারি গ্রামের আট জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কিন্তু অভিযুক্ত রতুয়ার কংগ্রেস বিধায়কের ছেলে সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়-সহ আরও ১৩ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারায় বাসিন্দারা ক্ষোভে ফুঁসছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিধায়ক পুত্রের নির্দেশেই এনাতুল্লারা হামলা চালিয়ে ওই মহিলা গাজলি বিবিকে খুন করেছে। অভিযোগ, পুলিশ অভিযুক্ত বিধায়ক পুত্রকে আড়াল করতে চাইছে। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দোপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশ কাউকে আড়াল করছে না। সবাইকে ধরা হবে।” মঙ্গলবার ধৃত আট জনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।
খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ায় এ দিন বিধায়ক পুত্র সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনার সময় আমি কলকাতায় ছিলাম। অথচ আমার নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএম চক্রান্ত করে মিথ্যা মামলা করেছে। রাজনৈতিকভাবে এর মোকাবিলা করব।”
পুলিশ-প্রশাসনিক সূত্রের খবর, যে রাস্তা তৈরির কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে খুন হতে হয়েছে গাজলি বিবিকে, ফুলহার নদী পেরিয়ে সেই রাস্তার কাজ করতে কোনও ঠিকাদার রাজি হচ্ছিল না। ঠিকাদারেরা কাজ করতে রাজি না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী গ্রামীন সড়ক যোজনা প্রকল্পের ওই রাস্তার অনুমোদনের পরেও প্রায় ৬ বছর কাজ শুরু করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত রতুয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের ছেলে সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় তাঁর ঘনিষ্ঠ এক ঠিকাদার সংস্থাকে দিয়ে ২০১২ সালে মহানন্দাটোলা থেকে বিলাইমারি ৬.২৪ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরু করান। কিন্তু মহানন্দাটোলা এলাকায় রাস্তার কাজ শুরুতেই নিম্নমানের জিনিসপত্রের অভিযোগ তোলেন বিলাইমারির বাসিন্দারা।
সব্যসাচীবাবু জানান, আমার পরিচিত এক ঠিকাদার সংস্থা রাস্তার কাজ নেয়। কোনও গোলমাল হবে না বলে আমি সংস্থাটিকে আশ্বস্ত করেছিলাম। মহানন্দাটোলা এলাকায় রাস্তার কাজ শুরুতে কোন অসুবিধা হয়নি। বিলাইমারি এলাকায় কাজ শুরু করতে গেলে এলাকার সিপিএম, তৃণমূল ও আরএসপির কর্মী সমর্থকরা কাজ বন্ধ করে দেয়। তাঁরা রাস্তার কাজের ইট, বালি, পাথর সরবরাহের দাবি করতে থাকেন। এই ঘটনার জেরেই গোলমালের সূত্রপাত।
তিন দিকে ফুলহার নদী, এক দিকে কোশী নদীতে ঘেরা মহানন্দাটোলাতেই বাড়ি কংগ্রেস বিধায়ক সমরবাবুর। বাসিন্দারা জানান, সেই সুবাদে মহানন্দাটোলা বিলাইমারি এলাকায় প্রবল দাপট রয়েছে বিধায়ক ও তার ছেলে সব্যসাচীবাবুর। মহানন্দাটোলা বিলাইমারি এলাকার মানুষ ভুটভুটি নৌকায় ফুলহার নদী পারাপার হলেও বিধায়ক ও তাঁর পুত্র পারপার হন স্পিডবোটে। বিলাইমারি বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিধায়ক পুত্রই বকলমে ওই রাস্তার কাজ করছিলেন। |