বিরোধী দলের পরিচালিত জেলা পরিষদকে রাজ্য সরকারের বঞ্চনার প্রমাণ দিতে সার্কিট বেঞ্চকে হাতিয়ার করলেন বাম পরিচালিত জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি দীপ্তি দত্ত। গত সপ্তাহে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের চলতি বছরের প্রায় ১২৭ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ হয়েছে। বাজেট নিয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করেন সভাধিপতি। সেখানে বাম পরিচালিত জেলা পরিষদকে রাজ্য সরকার বরাদ্দ দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়। প্রমাণ দিতে সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী ভবন তথা জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর জন্য বকেয়া প্রায় ৩২ লক্ষ টাকার প্রসঙ্গ তোলেন সভাধিপতি।
তাঁর অভিযোগ, “জেলা পরিষদ থেকে রাজ্য সরকারকে ডাকবাংলোর বকেয়া ভাড়া পরিশোধের জন্য বারবার চিঠি পাঠানো হলেও কিছু হচ্ছে না।” রাজনৈতিক কারণেই সার্কিট বেঞ্চ প্রসঙ্গ তুলেছেন বলে পাল্টা দাবি করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মন্ত্রী বলেন, “শুধু গত বছরের বকেয়ার কথা কেন বলা হচ্ছে, বাম আমলেও তো অনেক বকেয়া পড়ে রয়েছে। তখন জেলা পরিষদ একটিও চিঠি দেয়নি। এখন রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরুর তোড়জোর চলছে, তখন রাজনৈতিক কারণেই এই প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে।”
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ডাকবাংলোকে সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী ভবন হিসেবে পছন্দ করে হাইকোর্ট। ২০০৪ সালে জেলা পরিষদের থেকে ডাকবাংলোটি ভাড়া নিয়ে অস্থায়ী পরিকাঠামোর কাজ শুরু করে রাজ্য সরকার। প্রতিমাসে প্রায় ৯১ হাজার টাকা ভাড়া ধার্য করে জেলা পরিষদ। ২০১০ সালে ভাড়া বাড়িয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা ধার্য করা হয়। ২০০৪ সাল থেকে সরকার ভাড়া দিলেও ২০১০ সালের মাঝামাঝি থেকে ভাড়া বকেয়া রয়েছে।
সভাধিপতি বলেন, “২০১১ সালের এপ্রিল মাস থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা ভাড়া বাবদ বকেয়া রয়েছে। সরকার গত বছর থেকেই জেলা পরিষদের বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছেন। তার ওপরে নায্য পাওনাও যদি না দেওয়া হয়, তবে খুবই সমস্যার কথা। আগে অন্য নানা অনুষ্ঠানে ডাকবাংলো ভাড়া দিয়ে জেলা পরিষদ উপার্জন করত। জেলাবাসীর স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই রাজ্য সরকারকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।” এছাড়াও, বিআরজিএফ সহ বিভিন্ন অর্থ কমিশন খাতে রাজ্য সরকারের থেকে প্রাপ্য টাকার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সভাধিপতি। তিনি জানান, বাম সরকার থাকাকালীণ সব বরাদ্দ পাওয়া যেত। কিন্তু সরকারের পরিবর্তনের পরে আর সেভাবে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। পঞ্চায়েত মন্ত্রীকে বলেও লাভ হয়নি। সরকার টাকা না দেওয়ায় জেলার বাসিন্দাদের স্বার্থে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
যদিও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন বরাদ্দের হিসাব যথাযথ দিতে পারেনি জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদকে বরাদ্দ দেওয়া উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের অনেক কাজ শুরুই হয়নি। এখন রাজনীতির জন্য মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” |