উল্টোডাঙায় উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। শিলিগুড়ি শহরে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে জন্য আগাম সর্তকতা নিতে চান তাঁরা। মঙ্গলবার তা জানিয়েছেন এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। কেন না বছরখানেক আগেই শিলিগুড়ির মহাবীরস্থানের উড়ালপুলের একাংশ খসে পড়ে। তা নিয়ে শহরে হইচইও হয়েছে। এসজেডিএ এবং রেলের যৌথ উদ্যোগে সেটি তৈরি হয়েছিল। সেই সঙ্গে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি দুই শহরের বিভিন্ন সেতুগুলির বর্তমান পরিস্থিতিও তারা খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। দক্ষ বাস্তুকারদের নিয়ে এ ব্যাপারে দল তৈরি করা হবে।
দুই শহরে বেশ কিছু পুরনো সেতু রয়েছে। শিলিগুড়িতে মহাবীরস্থানে এবং জংশন স্টেশন এলাকায় উড়ালপুল রয়েছে। উল্টোডাঙার ঘটনার পর তাই তাঁরা এ সব ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি নিতে চান না। দ্রুত টিম তৈরি করে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন সেতুগুলির পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখা হবে। এই বিশেষ টিমে থাকবেন জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা, এসজেডিএ’র বাস্তুকাররা। আগামী সপ্তাহ থেকেই এই টিমটি পরিদর্শনে যাবে। এছাড়াও পরবর্তীতে নতুন কোনও সেতু তৈরির ক্ষেত্রে আরও বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা হবে জানান রুদ্রবাবু।
এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘শিলিগুড়ির উড়ালপুলের বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখা হবে। ইতিমধ্যে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উড়ালপুলের কিছুটা অংশ খসে পড়েছিল। সে কারণে আগাম সতর্ক হওয়া জরুরি।” এসজেডিএ’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, রাজনীতি করার জন্য রুদ্রবাবুরা কেবল নানা কথা বলছেন। কাজের কাজ কিছু করছেন না। তাঁর কথায়, “রেলের অংশে যে দুটি উড়ালপুল রয়েছে রয়েছে তা দেখভালের দায়িত্ব রেলের। সে জন্য রেলকে বাড়তি টাকাও দেওয়া হয়। এসজেডিএ যে সব সেতু তৈরি করেছে সেগুলি তাদেরই দেখতে হবে। আমি যতদিন দায়িত্বে ছিলাম তা নিয়মিত দেখভাল করা হত। এখন কিছুই হয় না।” তাঁর দাবি, তৃতীয় মহানন্দা সেতুর উপর মাটি জমে জমা জল বার হওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে রয়েছে। তাতে সেতুর ক্ষতি হচ্ছে। তা ছাড়া শিলিগুড়িতে যে বড় মাপের ভূমিকম্প হয়ে গেল তার পর সেতু, বড় বাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল ভবন, দীনবন্ধু মঞ্চের মতো প্রেক্ষাগৃহগুলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা দরকার। রুরকি থেকে অভিজ্ঞ বাস্তুকার আনার জন্য তাঁরা দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় কিছু বাস্তুকার যাঁরা অভিজ্ঞ নয় তাঁদের দিয়ে নামমাত্র সমীক্ষা করা হয়েছে।
এসজেডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাস্তুকারদের প্রতিনিধি দলটি উড়ালপুল, সেতুগুলির বতর্মান পরিস্থিতি কী, সেটি বিপজ্জনক অবস্থায় আছে কি না বিস্তারিত খতিয়ে দেখবে। উড়ালপুল বা কোনও সেতু বিপজ্জনক বা মেরামতির প্রয়োজন রয়েছে মনে হলে তারা রিপোর্ট দেবেন। সেই মতো পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিলিগুড়িতে মহানন্দা নদীর ওপর একাধিক সেতু রয়েছে। বাম জমানায় শুরু হয়ে চতুর্থ মহানন্দা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায়। তা ছাড়া জোড়াপানি, ফুলেশ্বরী, বালাসন নদীর ওপর অনেকগুলি সেতু রয়েছে। ইতিমধ্যেই মহানন্দা সেতুর নিচ থেকে বালি তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নজরে এসেছে কর্তৃপক্ষের। বালাসন থেকে পাথর-বালি তোলা হয় দীর্ঘদিন ধরেই। সম্প্রতি মহিষমারি নদীর একটি সেতুর স্তম্ভের নিচের অংশ থেকে মাটি তোলায় সেটি বিপজ্জনক হয়ে পড়েছিল। পরে পুর কর্তৃপক্ষ সেটি সংস্কারের ব্যবস্থা করে। নদী থেকে মাটি বালির পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে সেতুগুলির ভিত দুর্বল হয়ে বিপদের সম্ভবনা থাকবে। তা ঠেকাতে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তাও দরকার বলে জানান রুদ্রবাবু। |