বেআইনি কাটা তেলের গুদামে অগ্নিকাণ্ডে আতঙ্ক ছড়াল মগরাহাটে।
ঘড়িতে সকাল সাড়ে ৯টা। হঠাৎই শুরু হয় পর পর বিকট আওয়াজ। কী ঘটল জানতে বাইরে আসতেই চোখে পড়ে একটু দূরে তেলের গুদাম জ্বলছে দাউ দাউ করে। দিন কয়েক আগেই শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেটে আগুনের স্মৃতি এখনও দগদগে। ফের বিশাল আগুন দেখে ভয়ে আতঙ্কে ছেলে-মেয়ে,পরিবার নিয়ে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন বাসিন্দারা। মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট থানার সালকির অগ্নিকাণ্ডের বিবরণ দিতে গিয়ে বারবারই আতঙ্কে কথা আটকে যাচ্ছিল এক প্রত্যক্ষদর্শীর।
খবর পেয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে ডায়মন্ড হারবার, বারুইপুর, বেহালা ও পাটুলি থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ৬ টি ইঞ্জিন। কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখা ও সেই সঙ্গে মাঝে মাঝেই বিকট শব্দে প্রথমে কিছুটা থমকে যান দমকলকর্মীরা। তারপরই শুরু হয় আগুনের সঙ্গে লড়াই। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ ও দমকলকর্মীদের অনুমান, গুদামে ডিজেল ও রাসায়নিক মজুত ছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে একটি ট্যাঙ্কার থেকে গুদামে রাখা ৫০-৬০টি ড্রামে তেল ভরা হচ্ছিল। সেই সময় সেখানে এসে থামে একটি মোটর সাইকেল। তেল ভরার সময় অসাবধানতায় হঠাৎই তেল ছিটকে মোটর বাইকের গরম ইঞ্জিনের উপরে পড়লে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তে তা দ্রুত গুদামের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে গুদামের দুই কর্মী মাধব ও মহাদেব প্রামাণিক গুরুতর জখম হন। তাঁদের কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। |
আগুনের ভয়াবহতায় আতঙ্কে বাসিন্দারা ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। ওই এলাকা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে বিপাকে পড়েন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। ঘুরপথে তাদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে হয়। বেলা একটা নাগাদ দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। তবে পুরোপুরি আগুন নেভাতে বিকেল গড়িয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, গুদামের মালিক জয়দেব মিস্ত্রীর এলাকাতেই একটি সরকারি পেট্রল পাম্প রয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই ওই গুদামে ভেজাল তেলের ব্যবস্থা চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সালকির ওই তেলের গুদামটি বেআইনি। জয়দেববাবুর পেট্রল পাম্প থেকেই তেল এনে গুদামে ভেজাল তেল তৈরি করা হত। ওই তেল ‘কাটা তেল’ হিসাবে ব্যবহার করা হত ডায়মন্ড হারবার, মগরাহাট, মন্দিরবাজার, সংগ্রামপুর-সহ বিভিন্ন এলাকার অটো, মোটর ভ্যানে। আগেও একবার গুদামে আগুন লাগে। ২০০২ সালের ওই ঘটনায় আগুনে পুড়ে মারা যান জয়দেববাবুর বাবা অনুকূল মিস্ত্রী। তার পর কয়েক মাস গুদাম বন্ধ থাকলেও পরে ফের শুরু হয়ে যায় ভেজাল তেলের কারবার। স্থানীয় মানুষ পুলিশের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের মদতেই ওই গুদামে ভেজাল তেলের ব্যবসা চলছে। তাঁদের আরও অভিযোগ, যে ভাবে আগুন লেগেছিল তাতে গুদামের আশপাশের এলাকার ৫০ থেকে ৬০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
এদিন গুদামটি পুলিশ সিল করে দিলেও জয়দেববাবুর কোনও খোঁজ পায়নি। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সেই সঙ্গে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কী ভাবে এই গুদাম ছিল তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে রাত পর্যন্ত দমকল বা অন্য কোনও তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। যদিও প্রাথমিক ভাবে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। |